Samakal:
2025-05-15@12:05:02 GMT

বন্ধুত্বের অচেনা ভুবনে

Published: 15th, May 2025 GMT

বন্ধুত্বের অচেনা ভুবনে

প্রত্যেক মানুষের জীবনে থাকে ভাঙা-গড়ার গল্প। চলার পথে একাধিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সব সম্পর্ক রক্তের নয়। তেমনই এক সম্পর্কের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’। যেখানে দুই নারী একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ভাগাভাগি করে নেয় একে অপরের যাপন। সিনেমাটি নিয়ে লিখেছেন মীর সামী

পাঁ চ বছর আগের করোনার দিনগুলো শুধু সময় নয়, পরিবেশ-পরিস্থিতিতেও ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পুরো দেশের মানুষ ছিলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কের পাশাপাশি জীবন-জীবিকা নিয়েও পড়তে হয়েছিল অনিশ্চয়তায়। মুক্তজীবন থেকে সবাই হয়ে পড়েছিলেন ঘরবন্দি। সেই অচেনা, স্থবির দিনগুলোতে ঢাকার এক নির্জন অ্যাপার্টমেন্টে শুরু হয়েছিল এক অনন্য গল্প।

যে গল্পের দুই কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জয়া এবং শারমিন। একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী; অন্যজন তাঁর সহকারী। করোনা মহামারির কারণে বাইরের জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা একসঙ্গে কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন দীর্ঘ সময়। প্রথমদিকে, তাদের সম্পর্ক ছিল পেশাগত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, সেই সম্পর্কের পরিধি বাড়তে থাকে। একসঙ্গে রান্না, গল্প করা, পুরোনো স্মৃতিচারণ– সবকিছুতেই তারা একে অপরের সঙ্গী হয়ে ওঠে। তারপরও এ ঘনিষ্ঠতার মধ্যে ছিল অদৃশ্য দেয়াল। জয়ার তারকাখ্যাতি এবং শারমিনের সাধারণ জীবনের ফারাক, একটা সময় তাদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। এ সম্পর্কের উত্থান-পতনের গল্প নিয়েই নির্মাতা পিপলু আর খান নির্মাণ করেছেন ‘জয়া আর শারমিন’ নামে সিনেমা। যেখানে জয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং শারমিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্চ অভিনেত্রী মহসিনা আক্তার। যৌথভাবে সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পিপলু আর খান ও নুসরাত ইসলাম। প্রযোজনায় পিপলু আর খানের অ্যাপেল বক্স ও জয়া আহসানের ‘সি তে সিনেমা। 

গত ২৭ এপ্রিল জয়া আহসান তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমার একটি মোশন পিকচার শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কিছু গল্পের মুহূর্ত খুঁজে পেতে সময় লাগে। এমন এক সময়ে চিত্রায়িত যখন পৃথিবী স্থবির ছিল, আমাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’ নীরবে অপেক্ষা করছিল। পাঁচ বছর পর, অবশেষে এটি দর্শকদের সামনে আসতে প্রস্তুত। সিনেমাটি দুই নারীর গল্প, যারা নিজেদের ক্ষতি, বন্ধুত্ব এবং নারীত্বের গল্পে আবদ্ধ।’ জয়া বললেন, ‘করোনা মহামারির সময় যখন সবাই নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছিল, তখনকার সেই অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবিও বলা যায় সিনেমাটি।’ লকডাউনে মানুষের ঘরবন্দি জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জয়া নিজেও ডুবে গিয়েছিলেন সেই আবেগে– তাঁর মতে, অতিসংকীর্ণ পরিসরে গভীর আবেগ নিয়ে তৈরি হওয়া এ ছবিটি দিনশেষে দর্শকের চেতনায় বহু দিন থেকে থাকা অনবদ্য অনুভূতি ফের জাগিয়ে তুলবে।’ 

জয়ার এ কথায় বোঝা যায়, ছোট্ট পরিসরে, গভীর আবেগ নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি। সেই আবেগ দেখা যায় গত ১ মে প্রকাশ হওয়া সিনেমার ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ট্রেলারেও। যেখানে ফুটে উঠেছে সময়ের স্তব্ধতা, জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তা, আবার সেই নিঃসঙ্গতার মাঝে গড়ে ওঠা এক আশ্চর্য মমতা। কভিড-১৯ মহামারির দিনগুলোতে একই ঘরে দুই নারীর অন্য জীবন। জয়া এবং তাঁর গৃহকর্মী শারমিনের জীবনের কিছু দারুণ দৃশ্য। সেখানে যেমন লুডু খেলার আনন্দ রয়েছে, তেমন রয়েছে বিষাদের ছায়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং বাইরের দুনিয়া থেকে আসা দুঃসংবাদগুলো তাদের জীবনে নিঃশব্দে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ও ভয় ঢুকিয়ে দেয়।

লকডাউনের সময় সিনেমার কাজ শুরু প্রসঙ্গে জয়া বললেন, ‘সেই সময়ের মানসিক অস্থিরতার দিনগুলোতে যখন বাসায় বসে ভয় আর আশঙ্কায় দিনগুলো কাটাচ্ছিলাম, তখন পরিচালক পিপলু আর খান ফোনে বললেন, ‘চলেন ছোট করে একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে ফেলি।’ যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী, অভিনয় করতে পারছিলাম না, তখন ভাবলাম কাজটি করি, শুরুতে স্বল্পদৈর্ঘ্য নিয়ে কাজটি শুরু হলেও হলো একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য।’ অতিমারির মধ্য দিয়ে চলা বিশ্বের যে কোনো মানুষ এই ছবির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারবেন বলে দাবি করে জয়া বলেন, ‘জীবনের খণ্ড খণ্ড না-বলা অনুভূতিজুড়ে তৈরি এই ছবি মানুষের মনের জটিল বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে।’ তাঁর মতে, ছবি অনেক সময় ছবি হয়ে ওঠে, বানাতে হয় না! জয়ার কথায়, কিন্তু ১৫ দিনের শুটিংটা একটা পাগলামি ছিল, এত কম মানুষ নিয়ে একটা ছবি শুট করা যায় সেটিও জানাহলো। প্যান্ডামিকের সময় এ চলচ্চিত্রের শুটিং আমার জন্য একান্তই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল। খুব ছোট একটি টিম নিয়ে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, একটি মাত্র বাড়িকে আমাদের পুরো পৃথিবী বানিয়ে আমরা কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতার ভেতরেই ছবির আবেগ, অনুভূতির ছায়া ছিল। আমরা লকডাউনের সেই সময়টিকেই এখানে বন্দি করেছি। স্থবিরতা, ভয়, আবার একইসঙ্গে একঘেয়েমির ভেতর লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত সান্ত্বনা– সবকিছুই ছবির ফ্রেমে থেকে গেছে।’ 

পাঁচ বছর আগের ছবি কেন এই সময়ে? জানতে চাইলে জয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ছবি দেখা উচিত সেই সময়কে আবার ফিরে দেখার জন্য– নস্টালজিয়ার কারণে নয়; বরং ভাবার জন্য, সেই সময় আমাদের ভেতরে কী তুলে এনেছিল, আমরা কে ছিলাম, কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হলাম– এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হলে জয়া আর শারমিন দেখতে হবে। আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে।’

‘জয়া আর শারমিন’ শুধু দু’জন নারীর বন্ধুত্বের গল্প নয়; বরং করোনাকালের মানুষের একাকীত্ব, সামাজিক ভেদাভেদ এবং মানবিক সহানুভূতির প্রতিফলন। এমন গল্প আজকের দর্শকের আবেগকে ছুঁয়ে যাবে বলে আশাবাদী জয়া আহসান। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জয় আহস ন জ বন র আর খ ন অপর র আহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরার বাজার আমে সয়লাব, দামে হতাশ চাষিরা

সাতক্ষীরার বাজার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও গোলাপখাস আমে ভরপুর। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আম বাজারে ওঠায় দাম কমেছে। দাম কমে যাওয়া, হিমাগার আম না থাকা ও আড়ৎদারদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গাছ পরিচর্যা করায় হতাশ আম চাষিরা। 

আবহাওয়া ও মাটির বিশেষ গুণাগুণের কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আগেভাগে পাকে সাতক্ষীরার আম। এর মধ্যে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি দেশে ও বিদেশে বেশ কদর লাভ করেছে। সাতক্ষীরার আম বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশ ও বিদেশে চাহিদা বেশি। সরকারিভাবে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। গত বছর এ সময় সাতক্ষীরার তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করলেও এবারের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি থাকায় হিমসাগর আম পাকতে শুরু করেছে।

তবে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, কালীগঞ্জ সদর ও দেবহাটার বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি আম ওঠায় কমেছে দাম। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পেয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে গাছ পরিচর্যার জন্য দাদন নেয়া, আম বিক্রির জন্য সময় কম পাওয়া ও জেলায় হিমাগার না থাকায় হতাশ আম চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার আমবাগান রয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি জমিতে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস ও সরাইখাসসহ স্থানীয় জাতের আম উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন। ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের আম চাষি কমলেশ সরদার জানান, এবার আমের ফলন বেশি। গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম ১৫ দিন বাজারে থাকে। কিন্তু সরকারিভাবে তিন থেকে চার মাসের জন্য চাষিদের স্বল্প সুদে ঋণ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিতে হয়েছে। ফলে বাজার দামের চেয়ে ওই আড়ৎদারের কাছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা কম দামে আম বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই গ্রামের গোবিন্দ ঘোষ জানান, তাদের দুই ভাইয়ের ৩০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এবার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, হিমসাগর, ন্যাংড়া, রুপালীসহ নানা জাতের আম রয়েছে তাদের বাগানে। তবে তারা যে দামে আম বিক্রি করেছেন, তার চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। 

শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম জানান, গত বছরের এ সময় গোবিন্দভোগ আম ২৮০০ টাকায় মণ বিক্রি হলেও এবার ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতিকেজি আমের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চাষিদের সুবিধার্থে সরকারকে সাতক্ষীরায় হিমাগার স্থাপনের দাবি করেন তিনি।

সাতক্ষীরার বড় বাজারে আম চাষি মোকাররম হোসেন জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের সাইজ একটু ছোট হয়েছে। তারপরও ফলন খুব ভালো। দেশে ও দেশের বাইরে সাতক্ষীরার আমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বাজারে আমের দাম ভালো থাকলে আম চাষি ও ব্যবসায়ী লাভবান হবেন বলে আশা করেন তিনি।

সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজারের কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশান আলী জানান, প্রতিদিন বাজার আমে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু বাজারে খরিদ্দার কম। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীরা কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘‘গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম পাড়ার দিন এক সপ্তাহ আগে এগিয়ে আনলে চাষি ও কৃষক উপকৃত হতেন।’’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আমের সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০ হাজার হেক্টর আমের উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে। ৪০০ কোটি টাকার আম এবার বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। একইসঙ্গে বিদেশেও আম পাঠানো হবে। 

গরম বেড়ে যাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে হিমসাগর আম পাড়ার দিন ২০ মে থেকে এগিয়ে এনে ১৫ মে নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলায় ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ২৯৯টি বাগানে ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি আম চাষ করেছেন। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০০ টন।

তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত আমের মধ্যে এক–চতুর্থাংশ জমিতে হিমসাগর আম উৎপাদিত হয়েছে। এ আম বিদেশেও রপ্তানি হয়। চলতি বছর বিদেশে হিমসাগর আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ মেট্রিক টন। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর হিমসাগর আম আগে পাকতে শুরু করেছে। 

তিনি জানান, আম পাড়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, বৈশাখীসহ অন্যান্য দেশি জাতের আম ৫ মে থেকে পাড়া শুরু হয়েছে।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ