Samakal:
2025-06-30@18:41:55 GMT

বন্ধুত্বের অচেনা ভুবনে

Published: 15th, May 2025 GMT

বন্ধুত্বের অচেনা ভুবনে

প্রত্যেক মানুষের জীবনে থাকে ভাঙা-গড়ার গল্প। চলার পথে একাধিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সব সম্পর্ক রক্তের নয়। তেমনই এক সম্পর্কের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’। যেখানে দুই নারী একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ভাগাভাগি করে নেয় একে অপরের যাপন। সিনেমাটি নিয়ে লিখেছেন মীর সামী

পাঁ চ বছর আগের করোনার দিনগুলো শুধু সময় নয়, পরিবেশ-পরিস্থিতিতেও ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পুরো দেশের মানুষ ছিলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কের পাশাপাশি জীবন-জীবিকা নিয়েও পড়তে হয়েছিল অনিশ্চয়তায়। মুক্তজীবন থেকে সবাই হয়ে পড়েছিলেন ঘরবন্দি। সেই অচেনা, স্থবির দিনগুলোতে ঢাকার এক নির্জন অ্যাপার্টমেন্টে শুরু হয়েছিল এক অনন্য গল্প।

যে গল্পের দুই কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জয়া এবং শারমিন। একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী; অন্যজন তাঁর সহকারী। করোনা মহামারির কারণে বাইরের জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা একসঙ্গে কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন দীর্ঘ সময়। প্রথমদিকে, তাদের সম্পর্ক ছিল পেশাগত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, সেই সম্পর্কের পরিধি বাড়তে থাকে। একসঙ্গে রান্না, গল্প করা, পুরোনো স্মৃতিচারণ– সবকিছুতেই তারা একে অপরের সঙ্গী হয়ে ওঠে। তারপরও এ ঘনিষ্ঠতার মধ্যে ছিল অদৃশ্য দেয়াল। জয়ার তারকাখ্যাতি এবং শারমিনের সাধারণ জীবনের ফারাক, একটা সময় তাদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। এ সম্পর্কের উত্থান-পতনের গল্প নিয়েই নির্মাতা পিপলু আর খান নির্মাণ করেছেন ‘জয়া আর শারমিন’ নামে সিনেমা। যেখানে জয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং শারমিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্চ অভিনেত্রী মহসিনা আক্তার। যৌথভাবে সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পিপলু আর খান ও নুসরাত ইসলাম। প্রযোজনায় পিপলু আর খানের অ্যাপেল বক্স ও জয়া আহসানের ‘সি তে সিনেমা। 

গত ২৭ এপ্রিল জয়া আহসান তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমার একটি মোশন পিকচার শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কিছু গল্পের মুহূর্ত খুঁজে পেতে সময় লাগে। এমন এক সময়ে চিত্রায়িত যখন পৃথিবী স্থবির ছিল, আমাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’ নীরবে অপেক্ষা করছিল। পাঁচ বছর পর, অবশেষে এটি দর্শকদের সামনে আসতে প্রস্তুত। সিনেমাটি দুই নারীর গল্প, যারা নিজেদের ক্ষতি, বন্ধুত্ব এবং নারীত্বের গল্পে আবদ্ধ।’ জয়া বললেন, ‘করোনা মহামারির সময় যখন সবাই নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছিল, তখনকার সেই অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবিও বলা যায় সিনেমাটি।’ লকডাউনে মানুষের ঘরবন্দি জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জয়া নিজেও ডুবে গিয়েছিলেন সেই আবেগে– তাঁর মতে, অতিসংকীর্ণ পরিসরে গভীর আবেগ নিয়ে তৈরি হওয়া এ ছবিটি দিনশেষে দর্শকের চেতনায় বহু দিন থেকে থাকা অনবদ্য অনুভূতি ফের জাগিয়ে তুলবে।’ 

জয়ার এ কথায় বোঝা যায়, ছোট্ট পরিসরে, গভীর আবেগ নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি। সেই আবেগ দেখা যায় গত ১ মে প্রকাশ হওয়া সিনেমার ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ট্রেলারেও। যেখানে ফুটে উঠেছে সময়ের স্তব্ধতা, জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তা, আবার সেই নিঃসঙ্গতার মাঝে গড়ে ওঠা এক আশ্চর্য মমতা। কভিড-১৯ মহামারির দিনগুলোতে একই ঘরে দুই নারীর অন্য জীবন। জয়া এবং তাঁর গৃহকর্মী শারমিনের জীবনের কিছু দারুণ দৃশ্য। সেখানে যেমন লুডু খেলার আনন্দ রয়েছে, তেমন রয়েছে বিষাদের ছায়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং বাইরের দুনিয়া থেকে আসা দুঃসংবাদগুলো তাদের জীবনে নিঃশব্দে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ও ভয় ঢুকিয়ে দেয়।

লকডাউনের সময় সিনেমার কাজ শুরু প্রসঙ্গে জয়া বললেন, ‘সেই সময়ের মানসিক অস্থিরতার দিনগুলোতে যখন বাসায় বসে ভয় আর আশঙ্কায় দিনগুলো কাটাচ্ছিলাম, তখন পরিচালক পিপলু আর খান ফোনে বললেন, ‘চলেন ছোট করে একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে ফেলি।’ যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী, অভিনয় করতে পারছিলাম না, তখন ভাবলাম কাজটি করি, শুরুতে স্বল্পদৈর্ঘ্য নিয়ে কাজটি শুরু হলেও হলো একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য।’ অতিমারির মধ্য দিয়ে চলা বিশ্বের যে কোনো মানুষ এই ছবির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারবেন বলে দাবি করে জয়া বলেন, ‘জীবনের খণ্ড খণ্ড না-বলা অনুভূতিজুড়ে তৈরি এই ছবি মানুষের মনের জটিল বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে।’ তাঁর মতে, ছবি অনেক সময় ছবি হয়ে ওঠে, বানাতে হয় না! জয়ার কথায়, কিন্তু ১৫ দিনের শুটিংটা একটা পাগলামি ছিল, এত কম মানুষ নিয়ে একটা ছবি শুট করা যায় সেটিও জানাহলো। প্যান্ডামিকের সময় এ চলচ্চিত্রের শুটিং আমার জন্য একান্তই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল। খুব ছোট একটি টিম নিয়ে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, একটি মাত্র বাড়িকে আমাদের পুরো পৃথিবী বানিয়ে আমরা কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতার ভেতরেই ছবির আবেগ, অনুভূতির ছায়া ছিল। আমরা লকডাউনের সেই সময়টিকেই এখানে বন্দি করেছি। স্থবিরতা, ভয়, আবার একইসঙ্গে একঘেয়েমির ভেতর লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত সান্ত্বনা– সবকিছুই ছবির ফ্রেমে থেকে গেছে।’ 

পাঁচ বছর আগের ছবি কেন এই সময়ে? জানতে চাইলে জয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ছবি দেখা উচিত সেই সময়কে আবার ফিরে দেখার জন্য– নস্টালজিয়ার কারণে নয়; বরং ভাবার জন্য, সেই সময় আমাদের ভেতরে কী তুলে এনেছিল, আমরা কে ছিলাম, কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হলাম– এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হলে জয়া আর শারমিন দেখতে হবে। আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে।’

‘জয়া আর শারমিন’ শুধু দু’জন নারীর বন্ধুত্বের গল্প নয়; বরং করোনাকালের মানুষের একাকীত্ব, সামাজিক ভেদাভেদ এবং মানবিক সহানুভূতির প্রতিফলন। এমন গল্প আজকের দর্শকের আবেগকে ছুঁয়ে যাবে বলে আশাবাদী জয়া আহসান। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জয় আহস ন জ বন র আর খ ন অপর র আহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

৫০০ বছরের তেঁতুল গাছ

বরেন্দ্র ভূমির ঐতিহাসিক জনপদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মধ্যে নেজামপুর গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিয়নের শুড়লা গ্রামে নাচোলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোয়া ৫০০ বছরের বেশি বয়সী একটি তেঁতুল গাছ। রাজকীয় এ তেঁতুল গাছটির আকার যেমন বিশাল, তেমন উচ্চতাও অনেক বেশি। গাছটিতে এখনও তেঁতুল ধরে। বক বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে। ঐতিহ্যবাহী এ গাছটি দেখতে মানুষের আনাগোনাও বাড়ছে গ্রামটিতে। উল্লেখ্য, নাচোল বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে শুড়লা গ্রামটির দূরত্ব ৫-৬ কিলোমিটার। 
গাছটির বয়স সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০০৩ সালের আগে কেউই তেঁতুল গাছটির বয়স জানতেন না। তৎকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক নুরুল হক তেঁতুল গাছটি দেখে এ বিষয়ে উদ্যোগী হন। তিনি উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করান। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। তখন থেকেই প্রশাসন গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এর দেখভালের দায়িত্ব নেয়।  
ঐতিহ্যের পাশাপাশি গাছটিকে এলাকাবাসী সম্পদও মনে করেন। তাই গাছটিকে রক্ষার জন্য কেউ কোনো ক্ষতি করেন না। গাছটিকে ঘিরে স্থানীয় হিন্দু পরিবারগুলো এখনও পূজা করে। তারা বলেন, আগে গাছটি আরও উঁচু ছিল। ২০০০ সালের পর গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটি ভেঙে পড়ে। দাদারাও গাছটি এ রকমই দেখেছেন বলে গল্প শুনেছেন। 
শুড়লা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি শিক্ষক সুবাস চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমার মনে পড়া থেকে শুনে আসছি, এই তেঁতুল গাছটি ৫০০ বছর আগের। গাছটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন।’ 
পর্যটকদের অসুবিধার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একটি শৌচাগার আছে, যা অকেজো। তাই এখানে একটি মানসম্মত শৌচাগার, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, মন্দির এবং গাছটি ঘিরে প্রাচীর নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং ও পর্যটকদের বসার স্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি।’ 
তেঁতুল গাছ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক আলাউদ্দিন আহমেদ বটু বলেন, ‘তেঁতুল গাছটি সংরক্ষণে আরও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে এখানে আরও পর্যটক বাড়বে।’ 
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার জানান, গাছটি প্রশাসনের পক্ষ থেকেই দেখভাল করা হয়। তবে এটি ঘিরে নতুন করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দীর্ঘজীবী এই গাছটি নিরাপদ থাক এটিই সবার প্রত্যাশা। v
সুহৃদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সম্পর্কিত নিবন্ধ