কক্সবাজারের দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেইলিং করার সময় এক দুর্ঘটনায় সমুদ্রের পানিতে ছিটকে পড়ে আহত হয়েছেন এক নারী পর্যটক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির প্যারাসেইলিং কার্যক্রম। প্রশাসনের দাবি, নিয়ম না মেনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছিল প্যারাসেইলিং।

আজ বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘ফ্লাই এয়ার সি’ নামের প্রতিষ্ঠানের প্যারাসেইলিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেসার।

বেশ কয়েক বছর ধরে সৈকতের দরিয়ানগর ও হিমছড়ি সৈকতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে প্যারাসেইলিং স্পোর্টস কার্যক্রম। এর মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস কার্যক্রম। আকাশে ওড়ার এই কসরতে পাখির চোখে নিচের মেরিন ড্রাইভ, সমুদ্রসৈকত, পাহাড়-ঝরনা দেখে আনন্দ উপভোগ করেন পর্যটকেরা। টিকিটের মূল্য রাখা হয় জনপ্রতি ২ হাজার ও ২ হাজার ৫০০ টাকা। ২ হাজার টাকার টিকিটে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট আকাশে ওড়া যায়। আর ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিটে আকাশে ওড়ার পাশাপাশি সমুদ্রের লোনাপানিতে দুবার পা ভেজানোর সুযোগ থাকে।

স্থানীয় লোকজন জানান, আজ সকাল থেকে বাতাস না থাকায় ‘ফ্লাই এয়ার সি’ নামের প্রতিষ্ঠানের প্যারাসেইলিং কার্যক্রম ঠিকমতো চলছিল না। এ জন্য বেশ কিছু পর্যটক দরিয়ানগর সৈকতে বাতাস শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বেলা একটার দিকে বাতাসের গতি কিছুটা বাড়লে এক নারী পর্যটক এতে অংশ নেন। শুরুতে বাতাসে ভেসে তিনি উঁচুতে উঠেছিলেন বেশ কিছু দূর। তবে এরপর হঠাৎ সমুদ্রের পানিতে পড়ে যান প্যারাসেইলসহ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকেরা পানি থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করেন।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেসার বলেন, প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে ছিটকে পড়ে পর্যটক আহত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। প্যারাসেইলিংয়ের কর্মীরা তড়িঘড়ি করে আহতকে সরিয়ে নেন। তবে নিয়ম অমান্য করে প্যারাসেইলিং কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে মালামাল জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই প্যারাসেইলিং বন্ধ থাকবে।

ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, প্যারাসেইল থেকে ছিটকে পড়ে কেউ আহত হননি। বাতাস কম থাকার কারণে সকাল থেকে  কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বেলা একটার দিকে একজন নারী প্যারাসেইলিং করার মুহূর্তে বাতাসের গতি কম থাকায় পানিতে পড়ে যান। তবে তিনি আহত হননি। অভিযোগ পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেসার ঘটনাস্থলে পৌঁছে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩