কক্সবাজারে প্যারাসেইলিং থেকে ছিটকে পড়লেন নারী পর্যটক, কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ
Published: 20th, May 2025 GMT
কক্সবাজারের দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেইলিং করার সময় এক দুর্ঘটনায় সমুদ্রের পানিতে ছিটকে পড়ে আহত হয়েছেন এক নারী পর্যটক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির প্যারাসেইলিং কার্যক্রম। প্রশাসনের দাবি, নিয়ম না মেনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছিল প্যারাসেইলিং।
আজ বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘ফ্লাই এয়ার সি’ নামের প্রতিষ্ঠানের প্যারাসেইলিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেসার।
বেশ কয়েক বছর ধরে সৈকতের দরিয়ানগর ও হিমছড়ি সৈকতে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে প্যারাসেইলিং স্পোর্টস কার্যক্রম। এর মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস কার্যক্রম। আকাশে ওড়ার এই কসরতে পাখির চোখে নিচের মেরিন ড্রাইভ, সমুদ্রসৈকত, পাহাড়-ঝরনা দেখে আনন্দ উপভোগ করেন পর্যটকেরা। টিকিটের মূল্য রাখা হয় জনপ্রতি ২ হাজার ও ২ হাজার ৫০০ টাকা। ২ হাজার টাকার টিকিটে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট আকাশে ওড়া যায়। আর ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিটে আকাশে ওড়ার পাশাপাশি সমুদ্রের লোনাপানিতে দুবার পা ভেজানোর সুযোগ থাকে।
স্থানীয় লোকজন জানান, আজ সকাল থেকে বাতাস না থাকায় ‘ফ্লাই এয়ার সি’ নামের প্রতিষ্ঠানের প্যারাসেইলিং কার্যক্রম ঠিকমতো চলছিল না। এ জন্য বেশ কিছু পর্যটক দরিয়ানগর সৈকতে বাতাস শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বেলা একটার দিকে বাতাসের গতি কিছুটা বাড়লে এক নারী পর্যটক এতে অংশ নেন। শুরুতে বাতাসে ভেসে তিনি উঁচুতে উঠেছিলেন বেশ কিছু দূর। তবে এরপর হঠাৎ সমুদ্রের পানিতে পড়ে যান প্যারাসেইলসহ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবকেরা পানি থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করেন।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেসার বলেন, প্যারাসেইলিং করতে গিয়ে ছিটকে পড়ে পর্যটক আহত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। প্যারাসেইলিংয়ের কর্মীরা তড়িঘড়ি করে আহতকে সরিয়ে নেন। তবে নিয়ম অমান্য করে প্যারাসেইলিং কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে মালামাল জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই প্যারাসেইলিং বন্ধ থাকবে।
ফ্লাই এয়ার সি স্পোর্টস প্যারাসেইলিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, প্যারাসেইল থেকে ছিটকে পড়ে কেউ আহত হননি। বাতাস কম থাকার কারণে সকাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বেলা একটার দিকে একজন নারী প্যারাসেইলিং করার মুহূর্তে বাতাসের গতি কম থাকায় পানিতে পড়ে যান। তবে তিনি আহত হননি। অভিযোগ পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিজ ইনতেসার ঘটনাস্থলে পৌঁছে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার চায় জামায়াত
গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের বাস্তবায়ন চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভাষ্য, সংস্কারকে স্থায়ী এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই গণভোট প্রয়োজন। যাতে সংবিধানের সংশোধনী বা অন্য কোন উপায়ে ভবিষ্যতে বাতিল করা না যায়। গণভোট জাতীয় নির্বাচনে আগে না কি একসঙ্গে হবে তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করার প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।
রোববার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে বিফ্রিংয়ে দলের এই অবস্থান জানিয়েছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। জামায়াত আগের প্রস্তাবে জানিয়েছিল, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল চায়। আগের নিয়মে সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হবেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
রোববার কমিশনের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা এবং প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে।
ডা. তাহের বলেন, গত ২৬ এপ্রিল প্রথম দিনের সংলাপে যেসব বিষয়ে জামায়াত একমত ছিল না, এর কয়েকটিতে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে রাজি হয়েছে। সংস্কারের জন্য দেশ ও জাতির স্বার্থে জামায়াত দলীয় সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠেছে। অন্য দলগুলোর কাছ থেকে একই ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের প্রস্তাব করেছিল জামায়াত। তবে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। দলটি ১৬৬ সুপারিশের ৭৭টিতে আগে একমত ছিল। দুই দিনের বৈঠক শেষে এই সংখ্যা ১২০ এর বেশি জানিয়ে ডা. তাহের বলেছেন, কমিশনের অবস্থান হল, নির্বাচনকালীন সরকার নির্বিঘ্নে পরিচালনার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার হাতে উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা থাকা উচিত। নির্বাচনকালীন সরকার যেহেতু সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য হবে, তাই জামায়াত এই কমিশনের এই সুপারিশে একমত হয়েছে।
নির্বাচন কবে চান- এ প্রশ্নে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেছেন, সংস্কার শেষ যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে বিলম্ব করা উচিত নয়। জামায়াত চায়, সংসদ এবং স্থানীয় দুই নির্বাচনই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হোক।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারো বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগ আদালত গ্রহণ করলে, সেই আসামি দণ্ডিত হওয়ার আগেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এতে আগে রাজি না হলেও রোববার একমত হয়েছে জামায়াত।
ডা. তাহের বলেছেন, সাধারণ নিয়মে কারো দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। জুলাই গণহত্যার বিষয়ে ব্যবস্থা হিসেবে কমিশন সুপারিশ করেছে, আইসিটিতে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। জামায়াত এতে একমত হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আইসিটিতে। অভিযোগ করা হচ্ছে, সাজার আগেই তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য করতে নির্বাচনী আইনে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডা. তাহের বলেছেন, ত্রিয়াত্তরেও আইসিটি আইনে অভিযুক্তরা নির্বাচনে অযোগ্য ছিল। জুলাই গণহত্যার চূড়ান্ত বিচার শিগগিরই হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের পর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন আসামিরা। এসব বিবেচনায় জামায়াত একমত হয়েছে ট্রাইব্যুনাল কারো বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করলে, সেই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প দিয়েছিল। এগুলো হলো- অধ্যাদেশ, নির্বাচনের আগে গণভোট, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট, গণপরিষদ, পরবর্তী সংসদ এবং একই সঙ্গে গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচন।
বিএনপি চায় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোরর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে জুলাই সনদ সই হবে। পরবর্তী সংসদে সনদ অনুযায়ী সাংবিধানিক সংস্কার হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি চায় গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার হবে।
জামায়াত কমিশনের স্প্রেডশিটে সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে মতামত জানায়নি। রোববার জানায়, গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার হবে। দলটির নায়েবে আমির বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যে জুলাই সনদ সই হওয়ার পর, তা গণভোটে অনুমোদনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কার হবে।
ডা. তাহের সমকালকে বলেছেন, অতীতে সংবিধানের কিছু সংশোধনী সংসদে বাতিল হয়েছে। আবার কিছু আদালতের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যে সংস্কার হতে যাচ্ছে, তা চিরস্থায়ী করতে জামায়াত গণভোট চায়। গণভোটে সংবিধানের সংশোধনী অনুমোদিত হলে, পরবর্তীতে কোনো সংসদ, আদালত বাতিল করতে পারবে না।