ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চাহিদার চেয়ে বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেও সীমান্তবর্তী এ জেলার খামারিরা কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি গবাদি পশু লালন-পালন করেছেন। এসব কোরবানিযোগ্য পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে। আসন্ন ঈদে কোরবানির পশু বিক্রি করে ভালো লাভের আশা করছেন খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে খামারগুলোতে পশু পালন করা হয়েছে ২ লাখ ৬৯১টি। জেলাজুড়ে মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬৬ হাজার পশু বেশি রয়েছে।

খামারিরা জানিয়েছেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পশুগুলোর বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন তারা। কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ও গো-খাদ্য ছাড়াই প্রাকৃতিক ও দানাদার খাবার খাইয়ে পশু পালন করা হচ্ছে। এসব কোরবানিযোগ্য পশু বেচা-কেনা করা হবে স্থানীয় হাটগুলোয়। এছাড়া, জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হবে। ন্যায্য দামে বিক্রির মাধ্যমে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

আরো পড়ুন:

নজর কাড়ছে সুন্দরী ও রাজাবাবু 

ঈদে পশুরহাট এলাকায় ব্যাংক লেনদেন রাত ১০টা পর্যন্ত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার খামারি এস এম কামাল বলেছেন, এবারের কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টিরও বেশি পশু প্রস্তুত করেছি। তবে, গতবারের তুলনায় এবার পশু পালনে খরচ বেড়েছে। তারপরও ন্যায্য মূল্যে গরুগুলো বেচতে পারলে লাভবান হওয়া যাবে।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার খামারি রফিকুল ইসলাম বলেছেন, অন্য জেলার ব্যাপারীরা আমাদের জেলার পশুগুলো স্থানীয় হাটের চেয়ে খামার থেকেই বেশি কেনেন। স্থানীয় হাটগুলোতেও আশানুরূপ দামেই কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। তবে, স্থানীয় পশুর হাটগুলো এখনো জমে ওঠেনি। কয়েক দিনের মধ্যে জমজমাট পশু বেচাকেনা শুরু হবে।

গৃহিণীরাও প্রস্তুত করছেন কোরবানির পশু
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামগুলোতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গৃহিণীরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ছাগল ও ভেড়া পালন করছেন। প্রাকৃতিক ও দানাদার খাবার খাইয়ে এসব পশুকে প্রস্তুত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পশু নিজ বাড়ির জন্য বেশি প্রস্তুত করেন গৃহিণীরা। তবে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি পশুগুলো বাজারে বিক্রি করেন তারা।

গৃহিণীরা জানান, গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে কম-বেশি গরু-ছাগল পালন করা হয়। গরুগুলো কোরবানির জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়। ছাগলগুলো নিজেদের কোরবানির জন্য রেখে দেওয়া হয়। এসব পশু ছোট হওয়ায় তাদের পালনে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার তাহেরা বেগম বলেন, বাড়িতে পালন করার শখ থেকেই একটি ছাগল কিনেছিলাম। একটি বাচ্চা জন্ম দেয় ছাগলটি। বাচ্চাটা কোরবানির জন্য লালন-পালন করেছি। অর্থিক সঙ্কটের কারণে গরু কোরবানি দিতে না পারলেও নিজের বাড়িতে পোষা ছাগল কোরবানি দেওয়া যাবে। 

ন্যায্য দাম পেলে ঘুরে দাঁড়াবেন খামারিরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নানা সমস্যার কারণে পশুর খামারি কমে গিয়েছিল। তবে, এবার জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। অল্প সময়ের ব্যবধানে পাঁচ শতাধিক খামারি বেড়েছে। তারা প্রত্যেকে দেশি-বিদেশি পশু পালন করে লাভের আশা করছেন। তবে, বরাবরই আলোচনায় থাকে ন্যায্য মূল্য।

খামারি আব্দুল হান্নান বলেছেন, গত বছরের তুলনায় জেলায় খামারির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে, পশুর সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। শেষ পর্যন্ত ন্যায্য মূল্য পেলে পশু পালনে সুদিন ফিরে আসবে। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে। 

ভারতীয় গরুর আমদানির শঙ্কায় খামারিরা
চাঁপাইনববাগঞ্জের খামারিরা যখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন, তখন ভারতীয় গরুর আমদানির শঙ্কা তাদের পোড়াচ্ছে। পশুর হাটগুলোতে ভারতীয় গরু এলে লোকসানে পড়বেন তারা। ভারতীয় গরু কোনোভাবেই যেন আমদানি না করা হয়, সে দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে জেলার খামারিদের আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা ‘গুড়ে বালি’ হয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক বলেছেন, এ খাতকে ধরে রাখতে ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। খামার ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও গো-খাদ্যের দাম কমানোসহ ভূর্তকি দিলে খামারিরা সব সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ড.

গোলাম মোস্তফা। 

তিনি বলেছেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের প্রত্যাশা, সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি থাকায় প্রতিবেশী দেশ থেকে গরু আসবে না। ফলে, খামারিরা এবার ভালো দাম পাবেন। উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে এবারও চাহিদার অতিরিক্ত পশু চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, আশা করছি, খামারিরা পশুর নায্য মূল্য পাবেন। ক্রেতারাও নায্য মূল্যে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র হ ট প ইনব বগঞ জ র জন য বল ছ ন করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের
  • বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অসম্ভব উদ্বেগের জায়গায় যাচ্ছে