বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিই একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বের কারণ।

তিনি বলেন, সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয়, তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। কোনো জাতি বা দেশের ভেতর একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

শনিবার সন্ধ্যায় টেলিভিশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ট্যাব) আয়োজিত ট্যাব মিডিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, কোনো সভ্য সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষের শুভ বোধ ও সুচিন্তা বিকাশের জন্য। যেনতেন প্রকারে আনন্দ বিনোদনের জন্য নয়। অসংযত আমোদ ফুর্তিকে তাই সংস্কৃতি বলা যায় না। তাকে আমরা বলবো অপসংস্কৃতি। ভোগবাদী উচ্ছৃঙ্খল জীবনের যে আনন্দ, তা সংস্কৃতি নয়। মনে রাখবেন, জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো সমাজ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষময় করে। চেতনাকে নষ্ট করে। জীবনকে নাশ করে। স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এ থেকে কোনো ফল পাওয়া যায় না। অপসংস্কৃতি মূলত মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়।  

ম্যাথিউ আর্নল্ড’র একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ম্যাথিউ আর্নল্ডের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া। ’ মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা। ’ আর ড.

আহমদ শরীফ সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘পরিশীলিত ও পরিশ্রুতি জীবনচেতনাই সংস্কৃতি। ’ আমিও এই ধারণা পোষণ করি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেকের ধারণা বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি। এটা ঠিক নয়। যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে সেটাই হলো অপসংস্কৃতি। সেটা দেশি বা বিদেশি হোক। কোনো সংস্কৃতি যখন ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়। এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ হয় বিপথগামী। চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবন নির্বাহের যাবতীয় রীতিনীতি অপসংস্কৃতির কারণে অধঃপতন ঘটছে। কুরুচিপূর্ণ রচনা সাহিত্য অঙ্গনকে গ্রাস করছে।

কাদের গনি আরও বলেন, অপসংস্কৃতি আজ সংস্কৃতি আসন দখল করে নিয়েছে। আজকাল অনেক তরুণকে মেয়েদের মতো হাতে বালা বা পিতলের কড়া এবং এক কানে দুল পরতে দেখা যায়। আবার মেয়েদের অনেক সময় ছেলেদের মত শার্ট, টাইট জিন্স-প্যান্ট, চুলের বয়-কাট। ছেলেরা ফ্যাশন করে ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে। এসব আনন্দ হলেও এটা কিন্তু অপসংস্কৃতির নামান্তর। আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, এখন বিত্তবান ক্ষমতাশালীরা নিজেদের চিত্তবিনোদনের পথ পাল্টে ফেলেছেন। রুচিবিকৃতি নেমে গেছে চরম পর্যায়ে, যা থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অনুসরণ করার মতো কিছুই দিয়ে যেতে পারছি না।

বিএফইউজের মহাসচিব বলেন, আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে। আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে যে অপসংস্কৃতি হিংস্র থাবা বিস্তার করে আছে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে আমরা আমাদের রীতিনীতি, দেশের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আমাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অথচ আমাদের এ নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আজ বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ভেতর দিয়ে একটা দেশের নিজস্ব ইতিহাস, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ধরন উল্টাপাল্টা করে দেওয়া হয়। অস্পষ্ট করে তোলা হয় তার আত্মপরিচয়।

ট্যাব সভাপতি কাদের মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি, ড. জাহাঙ্গীর আলম রুস্তম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ, সানাউল হক বাবুল, এরফানুল হক নাহিদ, আবুল কালাম আজাদ, সুহৃদ জাহাঙ্গীর ও দুলাল খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তানিয়া আফরিন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এফইউজ অপস স ক ত র আম দ র জ বনক আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ