অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়: কাদের গনি চৌধুরী
Published: 31st, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিই একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বের কারণ।
তিনি বলেন, সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয়, তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। কোনো জাতি বা দেশের ভেতর একবার অপসংস্কৃতি ঢুকলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
শনিবার সন্ধ্যায় টেলিভিশন রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ট্যাব) আয়োজিত ট্যাব মিডিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, কোনো সভ্য সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষের শুভ বোধ ও সুচিন্তা বিকাশের জন্য। যেনতেন প্রকারে আনন্দ বিনোদনের জন্য নয়। অসংযত আমোদ ফুর্তিকে তাই সংস্কৃতি বলা যায় না। তাকে আমরা বলবো অপসংস্কৃতি। ভোগবাদী উচ্ছৃঙ্খল জীবনের যে আনন্দ, তা সংস্কৃতি নয়। মনে রাখবেন, জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো সমাজ কিংবা কোনো জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষময় করে। চেতনাকে নষ্ট করে। জীবনকে নাশ করে। স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এ থেকে কোনো ফল পাওয়া যায় না। অপসংস্কৃতি মূলত মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়।
ম্যাথিউ আর্নল্ড’র একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ম্যাথিউ আর্নল্ডের মতে, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া। ’ মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা। ’ আর ড.
তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেকের ধারণা বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি। এটা ঠিক নয়। যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে সেটাই হলো অপসংস্কৃতি। সেটা দেশি বা বিদেশি হোক। কোনো সংস্কৃতি যখন ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয় তখন তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়। এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ হয় বিপথগামী। চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, জীবন নির্বাহের যাবতীয় রীতিনীতি অপসংস্কৃতির কারণে অধঃপতন ঘটছে। কুরুচিপূর্ণ রচনা সাহিত্য অঙ্গনকে গ্রাস করছে।
কাদের গনি আরও বলেন, অপসংস্কৃতি আজ সংস্কৃতি আসন দখল করে নিয়েছে। আজকাল অনেক তরুণকে মেয়েদের মতো হাতে বালা বা পিতলের কড়া এবং এক কানে দুল পরতে দেখা যায়। আবার মেয়েদের অনেক সময় ছেলেদের মত শার্ট, টাইট জিন্স-প্যান্ট, চুলের বয়-কাট। ছেলেরা ফ্যাশন করে ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে। এসব আনন্দ হলেও এটা কিন্তু অপসংস্কৃতির নামান্তর। আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এখন বিত্তবান ক্ষমতাশালীরা নিজেদের চিত্তবিনোদনের পথ পাল্টে ফেলেছেন। রুচিবিকৃতি নেমে গেছে চরম পর্যায়ে, যা থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে অনুসরণ করার মতো কিছুই দিয়ে যেতে পারছি না।
বিএফইউজের মহাসচিব বলেন, আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি তা যদি দেশকে ভালোবাসতে না শেখায়, জীবনকে প্রেমময় না করে, মানুষের প্রতি দরদি না করে, তাহলে সে শিক্ষা হলো অপশিক্ষা আর অপশিক্ষার পথ ধরে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে শিকড় গাড়ে। আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে যে অপসংস্কৃতি হিংস্র থাবা বিস্তার করে আছে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে আমরা আমাদের রীতিনীতি, দেশের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আমাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অথচ আমাদের এ নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আজ বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ভেতর দিয়ে একটা দেশের নিজস্ব ইতিহাস, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ধরন উল্টাপাল্টা করে দেওয়া হয়। অস্পষ্ট করে তোলা হয় তার আত্মপরিচয়।
ট্যাব সভাপতি কাদের মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি, ড. জাহাঙ্গীর আলম রুস্তম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ, সানাউল হক বাবুল, এরফানুল হক নাহিদ, আবুল কালাম আজাদ, সুহৃদ জাহাঙ্গীর ও দুলাল খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তানিয়া আফরিন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এফইউজ অপস স ক ত র আম দ র জ বনক আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্র্যাব স্টার অ্যাওয়ার্ড পেলেন এরশাদ হাসান
শ্রেষ্ঠ মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা হিসেবে ‘ট্র্যাব স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেলেন নাট্যকর্মী মো. এরশাদ হাসান। ২৮ জুলাই, জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি বিভিন্ন শাখায় গুণীজনদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তির পর অনুভূতি ব্যক্ত করে এরশাদ হাসান বলেন, “এই স্বীকৃতি শুধু আনন্দের নয়, আরো দায়িত্ব ও অনুপ্রেরণার।”
আরো পড়ুন:
রতন থিয়াম মারা গেছেন
‘ট্রায়াল অব সূর্যসেন’ নাটকের ৩৮তম মঞ্চায়ন
দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে অভিনয়, নাট্য সংগঠন এবং নির্দেশনার মাধ্যমে অবিচল কর্মযাত্রায় এরশাদ হাসান নিজেকে একজন পরিশ্রমী ও বহুমুখী শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, নায়লা আজাদ নূপুরসহ বরেণ্যদের নির্দেশনায় অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি টিভি নাটকেও শরীফুল (ললিতা), হেকমত, শীতল সাঁই, সঞ্জয়, রহমতসহ বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন এরশাদ।
খল অভিনেতা শিবা সানু, রুমানা ইসলাম মুক্তি, মো. আশরাফুল হক ডন, অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু, গীতিকার ইথুন বাবু, কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী চৌধুরী, অভিনেতা চঞ্চল খান, সাইদ হোসেনসহ অনেকে এই সম্মাননা পেয়েছেন।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এটিএন বাংলার উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান ও সম্প্রচার) তাশিক আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ও উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন আনোয়ারা বেগম নিপা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুহৃদ জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক, টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব) এবং সভাপতিত্ব করেন কাদের মনসুর, সভাপতি, টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত