পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় স্ত্রী মমতাজ বেগমকে হত্যার মামলায় স্বামী সফিকুল ইসলামকে (৪৬) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

সোমবার (২ জুন) দুপুরে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে চলা বিচারপ্রক্রিয়া শেষে এ রায় ঘোষণা করেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক মো.

কামরুজ্জামান। মামলার অপর ১০ আসামিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্ত সফিকুল ইসলাম বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের তরঙ্গীপাড়া গ্রামের হামেদ আলীর ছেলে।

আরো পড়ুন:

আদালতের নির্দেশনা হাতে পেলে জামায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত: ইসি সচিব

সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৬ থেকে ১৭ বছর আগে একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে মমতাজ বেগমের সঙ্গে সফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলেসহ তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়।

অভিযোগ রয়েছে, সফিকুল প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের সূত্রপাত ঘটে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলেও তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং সফিকুল এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই মমতাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই রাতে মমতাজ বেগম ও সফিকুল ইসলামের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। সেই সময় মমতাজকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। পর দিন ৯ জুলাই সকালে মমতাজের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় নিজ ঘরের মেঝেতে। স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে জানালে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায়।

প্রথমে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা দায়ের হয়। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং পারিবারিক পটভূমি বিশ্লেষণ করে হত্যার সন্দেহে নিহতের বাবা আব্দুল মান্নান ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই সফিকুলসহ মোট ১১ জনকে আসামি করে বোদা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এরপর দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানির মধ্য দিয়ে বিচারকার্য চলতে থাকে।

রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট ইয়াসিনুল হক দুলাল বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মমতাজ বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাক্ষ্য-প্রমাণে আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, স্বামী সফিকুল ইসলামই এই হত্যাকাণ্ডের হোতা। আদালত আমাদের যুক্তি গ্রহণ করেছেন এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।’’

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা মনে করি, মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে সফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি। এ কারণে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’’


 

ঢাকা/নাঈম/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মমত জ ব হত য র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ