পঞ্চগড়ে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
Published: 2nd, June 2025 GMT
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় স্ত্রী মমতাজ বেগমকে হত্যার মামলায় স্বামী সফিকুল ইসলামকে (৪৬) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) দুপুরে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে চলা বিচারপ্রক্রিয়া শেষে এ রায় ঘোষণা করেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালতের বিচারক মো.
দণ্ডপ্রাপ্ত সফিকুল ইসলাম বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের তরঙ্গীপাড়া গ্রামের হামেদ আলীর ছেলে।
আরো পড়ুন:
আদালতের নির্দেশনা হাতে পেলে জামায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত: ইসি সচিব
সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৬ থেকে ১৭ বছর আগে একই গ্রামের আব্দুল মান্নানের মেয়ে মমতাজ বেগমের সঙ্গে সফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলেসহ তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে দাম্পত্য জীবনে অশান্তি শুরু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সফিকুল প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের সূত্রপাত ঘটে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলেও তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং সফিকুল এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই মমতাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই রাতে মমতাজ বেগম ও সফিকুল ইসলামের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। সেই সময় মমতাজকে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। পর দিন ৯ জুলাই সকালে মমতাজের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় নিজ ঘরের মেঝেতে। স্থানীয়রা বিষয়টি পুলিশকে জানালে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায়।
প্রথমে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা দায়ের হয়। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং পারিবারিক পটভূমি বিশ্লেষণ করে হত্যার সন্দেহে নিহতের বাবা আব্দুল মান্নান ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই সফিকুলসহ মোট ১১ জনকে আসামি করে বোদা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এরপর দীর্ঘ সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানির মধ্য দিয়ে বিচারকার্য চলতে থাকে।
রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট ইয়াসিনুল হক দুলাল বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মমতাজ বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাক্ষ্য-প্রমাণে আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, স্বামী সফিকুল ইসলামই এই হত্যাকাণ্ডের হোতা। আদালত আমাদের যুক্তি গ্রহণ করেছেন এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।’’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা মনে করি, মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণে সফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়নি। এ কারণে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’’
ঢাকা/নাঈম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মমত জ ব হত য র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের ‘সুন্দর’ বাজেট বিলকে ‘জঘন্য’ বললেন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন শীর্ষ মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের ‘সুন্দর’ দাবি করা বাজেট বিলটিকে তিনি ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনা দুই মিত্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের সৃষ্টি করেছে।
বুধবার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
নতুন বিলে বহু ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড় ও প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং একই সাথে মার্কিন সরকারকে আরো অর্থ ধার করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিলটি গত মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে।
আরো পড়ুন:
অভিনেতাকে গুলি করে হত্যা
যুক্তরাষ্ট্র শুল্কচুক্তি ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে: চীন
মঙ্গলবার (৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, ‘যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাদের জন্য লজ্জা। এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর অসহনীয় ঋণের বোঝা চাপাবে।’
ইলন মাস্ক কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসনের “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা (ডিওজিই)- এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেছেন। ওই দপ্তরে তার কাজ ছিল সরকারি খরচ কমানো ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ খাত চিহ্নিত করে সেগুলো বাতিল করা।
মাস্ক তার পোস্টে বলেন, ‘আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই বিশাল শুয়োরের মাংসে ভরা কংগ্রেসীয় বিলটি জঘন্য ন্যক্কারজনক। যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, আপনারা জানেন যে আপনারা ভুল করেছেন। বিলটি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং এর ফলে দেশের নাগরিকরা ভয়াবহ ঋণের চাপে পড়বে।’
আমেরিকান রাজনীতিতে "শুয়োরের মাংস" বলতে আইন প্রণেতাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্পে ব্যয় বোঝায়। মাস্ক অন্য একটি পোস্টে একটি রাজনৈতিক সতর্কতা যোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের নভেম্বরে, আমরা আমেরিকান জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী সমস্ত রাজনীতিবিদকে বরখাস্ত করব।’
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” নামে পরিচিত এই বাজেট প্রস্তাবটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উদ্যোগ। বিলে রয়েছে ২০১৭ সালের করছাড় অব্যাহত রাখা, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ, জাতীয় ঋণের সীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো।
তবে এসব খরচের ভার সামলাতে গিয়ে বিলটি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কড়া কাটছাঁট করার প্রস্তাব দিয়েছে। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) বলছে, এর ফলে মেডিকেইডে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার কমানো হবে, খাদ্য ভর্তুকি কর্মসূচি (এসএনএপি) থেকেও কমিয়ে দেয়া হবে ২৬৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, মাস্কের সমালোচনার জবাব দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই জানেন যে, এই বিলের ব্যাপারে ইলন মাস্ক কী অবস্থান নিয়েছেন। তবে, মাস্কের এই মন্তব্য তার মতামত পরিবর্তন করে না। প্রেসিডেন্টের মতে, এটি একটি বড় এবং সুন্দর বিল। প্রেসিডেন্ট এই ক্ষেত্রে অটল আছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ