পাঁচ বছরের ছোট্ট মোহাম্মদ জুবায়েত এখনও রাত হলে বাবার জন্য অপেক্ষা করে। ঘুমানোর আগে বাবার বালিশ আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, বাবা কখন আসবে?’ তার মা জুবেদা খাতুন চোখের পানি চেপে রাখেন, উত্তর দিতে পারেন না। কারণ তার বাবা জুয়েল মিয়া আর কোনোদিনই ফিরবেন না।

গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গার্মেন্টস শ্রমিক জুয়েল মিয়া (৪২)। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কাকদা গ্রামের দিনমজুর আবদুল হাইয়ের ছেলে। থাকতেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনায় ভাড়া বাসায়।

সেই দিনের কথা মনে করে কাঁদতে কাঁদতে জুবেদা খাতুন বলেন, ‘‘সেদিন দুপুরে স্বামী কল করে বলেছিল, দেশের অবস্থা খারাপ। বাইরে বের হয়ো না। আমি রাস্তায় আছি। চারদিকেই মানুষ।’’

কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় খবর আসে  জুয়েল গুলিবিদ্ধ। ছুটে গিয়ে তিনি দেখেন, স্বামী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। কয়েকটি হাসপাতালে নিলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।

‘‘কয়েকটা গুলি শুধু আমার স্বামীকে শেষ করল না, আমার সংসারটাও শেষ করে দিলো।’’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন জুবেদা।

দীর্ঘ দেড় যুগের দাম্পত্যজীবনে এক যুগ পর জুবায়েতের জন্ম হয়। বাবা জুয়েল ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন। আজ সেই ছেলে বাবার স্মৃতি বুকে নিয়ে বড় হচ্ছে। আর সংসারের হাল ধরে একা লড়ছেন জুবেদা।

স্বামীর আয়ে চলত অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়িসহ পুরো সংসার। সেই আয়ে ছেদ পড়েছে। বৃদ্ধ শ্বশুরকে অসুস্থ শরীর নিয়েই অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়।

জুয়েলের ভায়রা ভাই আরিফুর ইসলাম সরকার জানান, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিয়মিত মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন জুয়েল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর ভয় করেননি। কিন্তু আজ তার পরিবার নিঃস্ব।

স্বামীর ইচ্ছা ছিল একমাত্র ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়ানোর। সেই ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জুবেদা।

তিনি বলেন, ‘‘সরকার যেটুকু সাহায্য দিয়েছে, তা দিয়ে তো সংসার চলে না। সন্তান মানুষ করা, চিকিৎসা, সংসারের খরচ সব কিছুতেই এখন অনিশ্চয়তা।’’

জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবারগুলো কেমন আছে, সন্তানদের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আদৌ কি বাস্তবায়িত হবে? নাকি কেবলই চোখের জলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পরিবারের সদস্যদের? এখনো জানেন না জুবেদার মতো বহু ভুক্তভোগী।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন: চার হলের ভিপি-জিএস হলেন যারা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ গণনার কার্যক্রম শুরু হয়। গণনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ হচ্ছে সিসি ক্যামেরায়, প্রদর্শন করা হচ্ছে সব কেন্দ্রের এলইডি স্কিনে।

আরো পড়ুন:

প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট

চাকসুর ফল: এক কেন্দ্রে ভিপি-এজিএসে এগিয়ে ছাত্রদল, জিএসে বাম

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ি, পাঁচটি কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার তথা ডিন কার্যালয়ে ভোট গণনা শেষে সেখান থেকেই আলাদাভাবে হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আর চাকসুর ফল ঘোষণা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, “ভোট গণনার পুরো বিষয়টি সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রের এলইডি স্কিনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোনো কারণে স্কিন বন্ধ হয়ে গেলে ভোট গণনাও বন্ধ রাখা হবে।”

তিনি বলেন, “ওএমআর পদ্ধতিতে ভেন্ডর মেশিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল- এই দুই প্রক্রিয়ায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। পুরোদমে ভোট গণনার কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”

ইতোমধ্যে হল সংসদের ভোটের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে।

মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল

চাকসু নির্বাচনে মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল সংসদের ফলাফল রাত পৌনে ১টায় ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ফলাফলে ১৮২ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) হয়েছেন তাজিন ইবনে হাবিব, ১৪৪ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হয়েছেন সাদমান আল-তাছিন এবং ২৯০ ভোট পেয়ে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন।

হলটিতে মোট ভোটার ছিলেন ৫১৬ জন। হলটির কেন্দ্র ছিল বিজ্ঞান অনুষদে।

সোহরাওয়ার্দী হল

সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ফলাফল রাত ১টার পর ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

ঘোষিত ফলাফলে ভিপি হয়েছেন নেয়ামত উল্লাহ ফারাবি, জিএস হয়েছেন নুরন্নবী সোহান এবং এজিএস হয়েছেন রেসালাতুর রহমান।

এ হলে ছাত্রশিবিরের পুরো প্যানেল বিজয়ী হয়েছে।

এফ রহমান হল

এরপর এফ রহমান হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ৩৬৯ ভোট পেয়ে ভিপি হয়েছেন শাহরিয়ার সোহাগ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট।

৩৭৯ ভোট পেয়ে জিএস হয়েছেন মো. তামিন চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জাবের আহমদ পেয়েছেন ৩২ ভোট।

এছাড়া ২৯৮ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন সাইদুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুর রহমান পেয়েছেন ২৬০ ভোট।

শাহজালাল হল

শাহজালাল হল সংসদের ফলাফল রাত দেড়টার দিকে ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, হলটিতে ভিপি পদে ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আলাউদ্দিন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী মামুনুর রশিদ পেয়েছেন ৭৩৪ ভোট।

৬৯৭ ভোট পেয়ে জিএস হয়েছেন রায়হান চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৬৭৩ ভোট।

এছাড়া ১১০১ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন ইমতিয়াজ জাবের। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ আল নোমান পেয়েছেন ৫৯১ ভোট।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ