বয়সের ভারে ন্যুব্জ মা, তবু শয্যাশায়ী ছেলের শেষ আশ্রয় তিনি
Published: 10th, July 2025 GMT
সত্তরোর্ধ্ব হেনা বেগমের দুই ছেলে। স্বামী ও ছোট সন্তানের মৃত্যুর পর অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। এর মধ্যে বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। নিজে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। নিজের জীবন চলানোই যেখানে কঠিন, সেখানে অসুস্থ ছেলেকে সামলাচ্ছেন হেনা বেগম।
ভাইয়ের দেওয়া জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ একটি ঘরে ভাঙা দুটি চৌকি। ঘরের বেড়ার কোনায় টানানো মৃত ছোট ছেলের ছবি, অল্প কয়েকটি বাসনপত্র—এইটুকুই মা-ছেলের জগৎ। একপাশে অসুস্থ মা, অন্যপাশে বড় ছেলে। অভাব ও নানা সংকটে জর্জর দুজনের দিকে কেউ ফিরেও তাকান না। জামালপুর পৌর শহরের মৃধাপাড়া এলাকায় এভাবেই চলছে তাঁদের জীবনযুদ্ধ।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ঘরের ছোট্ট একটা টেবিলের ওপর খালি দুটি পাতিল। কখনো পাতিলে রান্না হয়েছে কি না, দেখে বোঝার উপায় নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়েছে। চৌকিতে অসুস্থ শেখ ফরিদ গড়াগড়ি করছেন। অপেক্ষায় আছেন মায়ের। মা তাঁর জন্য অন্যের বাড়ি থেকে খাবার আনতে গেছেন। মা খাবার আনলে সেই খাবার খাবেন। কিন্তু অপেক্ষা যেন ফুরায় না।
হেনা বেগম কানে শোনেন না। কিছু জিজ্ঞাসা করতে হলে ইশারার মাধ্যমে বোঝাতে হয়। পরে তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় কথা হয়। আলাপচারিতায় জানা যায়, তিনি স্থানীয় আবদুস ছালামের স্ত্রী। তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামী আবদুস ছালাম ২৫ বছর আগে মারা গেছেন। ব্যবসায়ী স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের নিয়ে অথই সাগরে পড়েন। এর মধ্যে ১০ বছর আগে ছোট ছেলেটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান। কয়েক বছর আগে বড় ছেলে শেখ ফরিদ অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। চিকিৎসার অভাবে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ছোট্ট একটি বাড়ি ছিল, সেই বাড়ি বিক্রি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন চলার মতো কিছুই নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেনার এক স্বজন বলেন, ‘তাঁদের দুঃখ দেখে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। বড় ছেলে ফরিদ দুবার স্ট্রোক করে এখন শয্যাশায়ী। বয়সের ভারে ক্লান্ত তাঁর মা। যেখানে তাঁরই সেবা পাওয়ার কথা, সেখানে তিনি ছেলের সেবা করছেন। নিজে না খেয়ে ছেলের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে ছোটাছুটি করেন। প্রতিবেশী ও কিছু স্বজনের দয়ায় তাঁরা কোনোমতে বেঁচে আছেন।’ তিনি বলেন, হেনার দুই মেয়ে আছেন। কিন্তু তাঁদেরই ঠিকমতো চলে না। তাঁরা যেটুকু পারেন, সহায়তা করেন।
হেনা বেগম বলেন, ‘আমার কোনো কামাই করার মতো ছেলে মানুষ নাই। ২৫ বছর ধরে স্বামী মারা গেছে। দুইডা পুলা। এডা মারা গেছে। আর এডা অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে। সব তো আপনারা নিজের চোখেই দেখতেছেন। আল্লাহ যা দেয় আর নিজে ঘুরে ঘুরে যা পাই, তা দিয়ে দুজনের পেট চালাই। আমাদের আল্লাহ আছে। ১০ জনে যা দেয়, আমি আর আমার ছেলে খাই।’
অসুস্থ ছেলে সম্পর্কে বলেন, ‘পুলাডা কত বছর ধরে পইড়া আছে। কিছুই বোঝে না, শুধু চৌকির মধ্যে শুয়ে থাকে। একটা হাত অবশ হয়ে আছে। ওই যে আমি যা আনব, সেটাই খাওয়াই। আমার পুলাডা ভালো হইলে আমারে দেখতে পাইত। এহন বুড়া বয়সে পুলারে দেখতে হচ্ছে।’
অসুস্থ শেখ ফরিদ থেমে থেমে বলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ। আমার মায়ে আমাকে দেহে। সকাল থেকে এহন পর্যন্ত কিছুই খাইনি। মায়ে ভাত আনতে গেছে। আনলে খামু। সব আমার দোষ। আমি ভালো থাকলে মায়ের এত কষ্ট হইত না। মায়ে নিজেই চলতে পারে না, সেখানে মায়ে আমারে দেখে। মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নাই। মাই আমার এহন পৃথিবী। মানুষের কাছ থেকে কিছু আনলে মায়ে না খেয়ে আমারে খাওয়ায়। মায়েরও অসুখ। আমগরে কেউ নাই।’
জামালপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বড় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পলিথিন বন্ধে শুরু হচ্ছে যৌথবাহিনীর কঠোর অভিযান
নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধে যৌথবাহিনীর কঠোর অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, “বারবার সতর্ক করার পরও যারা নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন থেকে আর কোনো ছাড় থাকবে না। যৌথবাহিনীকে নিয়ে অচিরেই কঠোর অভিযান শুরু হবে।”
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ ও বাণিজ্যিক পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে সবার সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। এ ব্যাপারে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে একটি নিরবচ্ছিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মাহাবুবুর রহমান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, র্যাবের এডিজি (অপারেশনস) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ, আজিমপুর সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ-উজ-জামান খান, র্যাব-১০ এর কমান্ডার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত কমিশনার ফারুক আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এবং ডিএমপির ডিসি লালবাগ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ জেলায় একটি মোবাইল কোর্ট অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের দায়ে একটি মামলার করা হয় এবং পলিথিন জব্দ করা হয়। একই দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় একটি পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং বৈদ্যুতিক মিটার খুলে জব্দ করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ