সত্তরোর্ধ্ব হেনা বেগমের দুই ছেলে। স্বামী ও ছোট সন্তানের মৃত্যুর পর অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। এর মধ্যে বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। নিজে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। নিজের জীবন চলানোই যেখানে কঠিন, সেখানে অসুস্থ ছেলেকে সামলাচ্ছেন হেনা বেগম।

ভাইয়ের দেওয়া জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ একটি ঘরে ভাঙা দুটি চৌকি। ঘরের বেড়ার কোনায় টানানো মৃত ছোট ছেলের ছবি, অল্প কয়েকটি বাসনপত্র—এইটুকুই মা-ছেলের জগৎ। একপাশে অসুস্থ মা, অন্যপাশে বড় ছেলে। অভাব ও নানা সংকটে জর্জর দুজনের দিকে কেউ ফিরেও তাকান না। জামালপুর পৌর শহরের মৃধাপাড়া এলাকায় এভাবেই চলছে তাঁদের জীবনযুদ্ধ।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ঘরের ছোট্ট একটা টেবিলের ওপর খালি দুটি পাতিল। কখনো পাতিলে রান্না হয়েছে কি না, দেখে বোঝার উপায় নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়েছে। চৌকিতে অসুস্থ শেখ ফরিদ গড়াগড়ি করছেন। অপেক্ষায় আছেন মায়ের। মা তাঁর জন্য অন্যের বাড়ি থেকে খাবার আনতে গেছেন। মা খাবার আনলে সেই খাবার খাবেন। কিন্তু অপেক্ষা যেন ফুরায় না।

হেনা বেগম কানে শোনেন না। কিছু জিজ্ঞাসা করতে হলে ইশারার মাধ্যমে বোঝাতে হয়। পরে তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় কথা হয়। আলাপচারিতায় জানা যায়, তিনি স্থানীয় আবদুস ছালামের স্ত্রী। তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামী আবদুস ছালাম ২৫ বছর আগে মারা গেছেন। ব্যবসায়ী স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের নিয়ে অথই সাগরে পড়েন। এর মধ্যে ১০ বছর আগে ছোট ছেলেটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান। কয়েক বছর আগে বড় ছেলে শেখ ফরিদ অসুস্থ হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। চিকিৎসার অভাবে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ছোট্ট একটি বাড়ি ছিল, সেই বাড়ি বিক্রি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন চলার মতো কিছুই নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেনার এক স্বজন বলেন, ‘তাঁদের দুঃখ দেখে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। বড় ছেলে ফরিদ দুবার স্ট্রোক করে এখন শয্যাশায়ী। বয়সের ভারে ক্লান্ত তাঁর মা। যেখানে তাঁরই সেবা পাওয়ার কথা, সেখানে তিনি ছেলের সেবা করছেন। নিজে না খেয়ে ছেলের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে অন্যের বাড়িতে ছোটাছুটি করেন। প্রতিবেশী ও কিছু স্বজনের দয়ায় তাঁরা কোনোমতে বেঁচে আছেন।’ তিনি বলেন, হেনার দুই মেয়ে আছেন। কিন্তু তাঁদেরই ঠিকমতো চলে না। তাঁরা যেটুকু পারেন, সহায়তা করেন।

হেনা বেগম বলেন, ‘আমার কোনো কামাই করার মতো ছেলে মানুষ নাই। ২৫ বছর ধরে স্বামী মারা গেছে। দুইডা পুলা। এডা মারা গেছে। আর এডা অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে। সব তো আপনারা নিজের চোখেই দেখতেছেন। আল্লাহ যা দেয় আর নিজে ঘুরে ঘুরে যা পাই, তা দিয়ে দুজনের পেট চালাই। আমাদের আল্লাহ আছে। ১০ জনে যা দেয়, আমি আর আমার ছেলে খাই।’

অসুস্থ ছেলে সম্পর্কে বলেন, ‘পুলাডা কত বছর ধরে পইড়া আছে। কিছুই বোঝে না, শুধু চৌকির মধ্যে শুয়ে থাকে। একটা হাত অবশ হয়ে আছে। ওই যে আমি যা আনব, সেটাই খাওয়াই। আমার পুলাডা ভালো হইলে আমারে দেখতে পাইত। এহন বুড়া বয়সে পুলারে দেখতে হচ্ছে।’

অসুস্থ শেখ ফরিদ থেমে থেমে বলেন, ‘আমি খুব অসুস্থ। আমার মায়ে আমাকে দেহে। সকাল থেকে এহন পর্যন্ত কিছুই খাইনি। মায়ে ভাত আনতে গেছে। আনলে খামু। সব আমার দোষ। আমি ভালো থাকলে মায়ের এত কষ্ট হইত না। মায়ে নিজেই চলতে পারে না, সেখানে মায়ে আমারে দেখে। মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নাই। মাই আমার এহন পৃথিবী। মানুষের কাছ থেকে কিছু আনলে মায়ে না খেয়ে আমারে খাওয়ায়। মায়েরও অসুখ। আমগরে কেউ নাই।’

জামালপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.

শাহাদৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মা ও ছেলের খবর শুনে সেখানে গিয়েছিলেন। তাঁদের প্রাথমিকভাবে কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান। তাঁদের দুজনের ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বড় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডে‌কে‌ছে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

আজ দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের করবী হলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

রবিবার (২ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। 

শুধু বৈধ নিরাপত্তা পাশধারী স্বীকৃত সাংবাদিকরা এতে অংশ নিতে পারবেন। 

প্রেস উইং থেকে  স্বীকৃত সাংবাদিকদের সোমবার দুপুর ১২টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ