ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে স্বস্তি
Published: 5th, June 2025 GMT
একদিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীসহ আশপাশের মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরছে। এতে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ভোর থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে ভোগান্তির নৌপথ খ্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে এবার ভোগান্তি নেই। স্বস্তিতেই ফেরি বা লঞ্চে করে নদী পার হয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলার মানুষ।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয় জানায়, পদ্মাসেতু চালুর পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রী অর্ধেক হয়ে গেছে। তবে ঈদসহ যে কোনো উৎসবে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। এ নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় বিগত কয়েকটি ঈদে যাত্রীরা ভোগান্তি ছাড়াই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছে। এবারের ঈদেও নদী পারাপারে ভোগান্তি নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পাটুরিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার পান্না লাল নন্দী জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে নৌপথ পারাপারে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। সাধারণ যাত্রীদের পারাপারের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ২০টি ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ১৩টি লঞ্চ চলাচল করছে।
আরো পড়ুন:
৩৫ মণের ‘কালো মানিক’ নিয়ে খালেদা জিয়ার বাড়ির পথে কৃষক সোহাগ
ঈদযাত্রা: উত্তরে গাড়ির চাপ, নেই যানজট, স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে মানুষ
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা ঘাটের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ জানান, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে পাঁচটি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। ঘাট এলাকায় ভিড় থাকলেও চাপ নেই।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ে বাণিজ্য শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক সালাম হোসেন জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে নৌবহরে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় যাত্রী ও যানবাহন চালকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। পানি বৃদ্ধির কারণে পদ্মা নদীতে স্রোত বেড়েছে। ফলে ফেরির ট্রিপে সময় কিছুটা বেশি লাগছে।
তিনি আরো জানান, রাতভর যানবাহন ও যাত্রীর বেশ চাপ ছিল। তবে সকালের দিকে অপেক্ষামাণ সব যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। এখন ঘাট এলাকায় পরিবহন বাস, ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি রানিংয়ে আছে। পশুবাহী ট্রাকগুলো ফেরিতে উঠে নদী পার হচ্ছে। নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। এবারের ঈদে যাত্রীরা স্বস্তিতে নৌপথ পারাপারে হতে পারছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা/চন্দন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ লতদ য় স বস ত
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদের তীরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর আদালতে মামলাটি করেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা মামলাটি দায়ের ও আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও মৌজায় ধোপাজান নদের তীরে তাঁর পরিবারের ২ একর ৪০ শতক ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা চলমান। কিন্তু লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং ধোপাজান নদে বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি নিয়ে তাঁর জমি থেকে জোরপূর্বক নদের পাড় কেটে ও ফসলি জমি নষ্ট করে বালু উত্তোলন করেছে।
বাদীর অভিযোগ, ২৭ অক্টোবর রাতে তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লিমপিডের লোকজনকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখেন। বাধা দিলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, আসামিপক্ষ তাঁর জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করেছে। এতে তাঁর জমির একাংশ নদে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত ধোপাজান নদ। ভারত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা এই নদের ইজারা ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। ড্রেজার দিয়ে অবাধ বালু উত্তোলনের ফলে এলাকায় ব্যাপক ভাঙন ও পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ায় সরকার ওই সময় ইজারা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। নদটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন।
ইজারা বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এই নদে প্রকাশ্যে বালু লুট শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসে এখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো ধোপাজান নদ থেকে নানাভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এর মধ্যেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠানটিকে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চলমান কাজে এ বালু ব্যবহার করা হবে। তবে ধোপাজান নদ বিআইডব্লিউটিএর আওতাভুক্ত নয়। এরপর আগস্টে জেলা প্রশাসন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ধোপাজান নদে বিটি বালু নেই, এখানে রয়েছে উন্নতমানের সিলিকা বালু। এ বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং অনুমোদনপ্রক্রিয়াটিও বিধিসম্মত হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর পর থেকেই লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত বুধবার একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
নদের তীরের মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন, নানাভাবে এই বালু তোলা বন্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু ফল হচ্ছে না। এর সঙ্গে বড় বালুখেকোরা জড়িত। তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালীসহ সুবিধাভোগীদের ম্যানেজ করে বালু তুলে বিক্রি করছেন। এই বালু লুট বন্ধ করতে হবে।