কয়েক দিন আগে ফুঁসে উঠেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর নাম করে বলেছিলেন, ‘একসময় উনি নিজেকে চা–ওয়ালা বলতেন। এরপর বললেন চৌকিদার। এখন সিঁদুর বেচতে এসেছেন। এভাবে সিঁদুর বেচা যায় না। এতে দেশের মা–বোনেদের অসম্মান করা হয়।’
প্রায় একই প্রতিধ্বনি শোনা গেল পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মানের কথায়। রাজ্যের মা–বোনদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ওদের দেওয়া সিঁদুর মোদির নাম করে আপনারা কি সিঁথিতে লাগাবেন? এটা কি এক দেশ এক ভোটের মতো এক দেশ এক স্বামী প্রকল্প?
দিন কয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন। তাঁর ভাষণের অনেকটা জুড়ে ছিল সিঁদুর মাহাত্ম্য। তা শুনে ক্ষুব্ধ মমতা জানতে চেয়েছিলেন, অন্যদের হাতে সিঁদুর তুলে দেওয়ার আগে কেন তিনি নিজের স্ত্রীর সিঁথি সিঁদুরে রাঙাচ্ছেন না? চেনা ঢংয়ে আক্রমণাত্মক মমতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলেন, মনে রাখবেন, আপনি দেশের সব নারীর স্বামী নন।
এই মুহূর্তে সিঁদুর বিতর্ক এতটাই তীব্র যে শাসক দল বিজেপিকে কিছুটা পিছু হটতে হয়েছে। সরে আসতে হয়েছে ঘটা করে রাজ্যে রাজ্যে ঘরে ঘরে গিয়ে বিবাহিত নারীদের হাতে সিঁদুরের কৌটা তুলে দেওয়ার কর্মসূচি থেকে।
দেশের সব সংবাদপত্র, সব টিভি নিউজ চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওই কর্মসূচির কথা লিখলেও বিজেপির আইটি সেলের কর্তা অমিত মালব্য দিন চারেক পর জানান, এমন কোনো কর্মসূচিই নাকি দল গ্রহণ করেনি। সবটাই নাকি গণমাধ্যমের কল্পনা। সিঁদুর রাজনীতি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখতে পেয়ে তাঁদের এই বোধোদয় কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক জল্পনা।
এমনটা যে হতে পারে, সেই ভাবনা তখন সম্ভবত বিজেপির হর্তাকর্তাদের মাথায় আসেনি।
সিঁদুরের প্রেক্ষাপটের দিকে একটু তাকানো যাক। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামের নিস্তরঙ্গ প্রশান্তি খান খান করে দিয়েছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীর বন্দুক। বেছে বেছে মারা হয়েছিল ২৬ জন পুরুষকে, যাঁদের অধিকাংশ স্ত্রী–পরিবার নিয়ে ভূস্বর্গ বিহারে এসেছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ জনই হিন্দু, একজন স্থানীয় ঘোড়াচালক। তিনি মুসলিম। হিন্দু পর্যটককে বাঁচাতে গিয়ে তাঁকে মরতে হয়।
আচম্বিত ওই ঘটনায় গোটা দেশ যখন বিহ্বল ও ক্ষুব্ধ, তখনই ৬ মে গভীর রাতে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। পরদিন ভোরে প্রভাতি দৈনিকগুলো জানিয়ে দিল, সেই হামলার পোশাকি নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। দেশবাসী এ কথাও জানল, অভিযানের নামকরণ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। লোগোর ডিজাইনও নাকি তাঁরই পছন্দ করে দেওয়া।
নরেন্দ্র মোদির আমলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২০১৬ সালে, উরি সেনাছাউনিতে হামলার পর। নিহত হয়েছিলেন ১৯ সেনাসদস্য। তখন সেনা অভিযানের কোনো পোশাকি নাম ছিল না। থাকলেও দেশবাসী জানতে পারেনি।
পরের হামলা তিন বছর পর, ২০১৯ সালে। সেই বছর পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৪০ জন জওয়ান। ঘটনার ১২ দিন পর ভারতীয় বিমানবাহিনী আক্রমণ চালিয়েছিল। তাতে একটা মিগ–২১ ধ্বংসও হয়েছিল। সেই অভিযান ‘বালাকোট সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে পরিচিত। বাহিনীর সাফল্য ঘিরে সরকারি দাবি বহু প্রশ্নের জন্মও দিয়েছিল। বিরোধীরা ভারতীয় বিমান সেনার সাফল্যের প্রমাণ দাবি করেছিলেন। সে জন্য তাঁদের প্রবল সমালোচিতও হতে হয়েছিল। শাসকের চোখে তা ছিল দেশদ্রোহের শামিল। সত্য–মিথ্যা উন্মোচিত না হলেও সেই প্রচার উতরে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দলকে। দ্বিতীয়বারের মতো দিল্লির মসনদে বসেছিলেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদি এখন প্রায় বক্তৃতায় নারীর সিঁদুর নিয়ে কথা বলেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাভারে ট্যানারিতে এসেছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া
ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরের ট্যানারিগুলোতে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করে। রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত এ শিল্পনগরে সাড়ে তিন লাখের বেশি কাঁচা চামড়া এসেছে।
বিসিক চামড়াশিল্প নগরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহরাজুল মাঈয়ান জানান, শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিক থেকে চামড়াশিল্প নগরীতে কাঁচা চামড়া নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করে। আজ রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ৫৭৩টি ট্রাকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার কাঁচা চামড়া এসেছে। ধীরে ধীরে চামড়াবাহী ট্রাক আসার সংখ্যা কমছে।
গতকাল দুপুরের পর থেকে চামড়াশিল্প নগরের বিভিন্ন ট্যানারিতে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা, এতিমখানা, আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসব কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন ট্যানারির মালিকেরা।
চামড়াশিল্প নগরে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর এখন লবণ দেওয়া হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।