ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিকল্পনা চীনা ব্র্যান্ড শেইনের
Published: 9th, June 2025 GMT
চীনের ফ্যাশন ব্র্যান্ড শেইন ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স রিটেইলের ভারতে তৈরি করা পোশাক আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করবে। শেইন ব্র্যান্ডের জন্য ভারতে তৈরি হওয়া পোশাক আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি শুরু হবে। ভারত থেকে শেইন ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য সরবরাহকারীর সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর থেকেই এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিল প্রতিষ্ঠান দুটি। আগামী এক বছরে শেইনের জন্য ভারত থেকে পণ্য সরবরাহকারীর সংখ্যা ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজারে উন্নীত করা হবে। খবর রয়টার্স
এ বিষয়ে শেইন রয়টার্সকে জানিয়েছে, রিলায়েন্সের সঙ্গে তাদের অংশীদারত্ব ছিল শুধু ভারতের বাজারে ব্র্যান্ড লাইসেন্স প্রদান পর্যন্তই। তবে রিলায়েন্স এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
শেইন বিভিন্ন নকশা ও ধরনের পোশাক বিক্রি করে থাকে। এসব পোশাক সাধারণত ৫ থেকে ১০ ডলারে বিক্রি করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ১৫০টি দেশে পোশাক সরবরাহ করে শেইন, যা চীনের সাত হাজার কারখানা থেকে কম মূল্যে সংগ্রহ করা হয়।
শেইনের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে কোম্পানিটিকে পণ্য তৈরির নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে।
অ্যাপের মাধ্যমে ২০১৮ সালে ভারতে যাত্রা শুরু করেছিল শেইন। তবে ২০২০ সালে ভারত সরকার চীনা অ্যাপের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় শেইনের অ্যাপটিও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ‘শেইনইন্ডিয়া ডট ইন’ নামে আবার আত্মপ্রকাশ করে সেই অ্যাপ।
বর্তমানে রিলায়েন্স ১৫০টি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। এ ছাড়া আরও ৪০০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির একটি সূত্র। শেইন ও রিলায়েন্সের লক্ষ্য হলো এক বছরের মধ্যে ভারতের এক হাজার কারখানায় শেইন ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করা। এই পোশাক ভারতের বাজারে বিক্রির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, শেইন শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ওয়েবসাইটে ভারতে তৈরি পোশাক তালিকাভুক্ত করতে চায়। সূত্রটি আরও জানায়, কয়েক মাস ধরেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরবরাহকারীদের ওপর।
শেইন জানায়, ভারতের বাজারে উৎপাদন, সরবরাহ, বিক্রয় ও পরিচালনার দায়িত্ব পুরোপুরি রিলায়েন্স রিটেইল পালন করবে। এ নিয়ে গত ডিসেম্বরে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সংসদে বলেছিলেন, এই অংশীদারত্বের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারের জন্য শেইন ব্র্যান্ডের পোশাকের জন্য ভারতীয় সরবরাহকারীদের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
চাহিদার ভিত্তিতে উৎপাদনে ঝুঁকছে রিলায়েন্স
শেইনের বার্ষিক আয় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। মূলত কম দামে পোশাক বিক্রির ফলে বিশ্ববাজারে শেইনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে রয়েছে। ব্র্যান্ডটির বেশির ভাগ পোশাক এখনো চীনেই তৈরি হয়। এ ছাড়া তুরস্ক, ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশেও তাদের পোশাক তৈরি করা হয়। তবে চীন–মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।
শেইনের অ্যাপ ভারতে চালুর মাত্র চার মাসেই অ্যাপল ও গুগল প্লে স্টোরে মোট ২৭ লাখ বার ডাউনলোড হয়েছে। বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ওই অ্যাপ থেকে ডাউনলোড প্রতি মাসে গড়ে ১২০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
শেইনের ভারতীয় ওয়েবসাইটে মোট ১২ হাজার নকশার পোশাক রয়েছে। শেইনের যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে অবশ্য পণ্যের সংখ্যা ছয় লাখ। নারীদের পোশাক ক্যাটাগরিতে ভারতে সবচেয়ে সস্তা পোশাকের দাম ৩৪৯ রুপি বা ৪ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে একই রকম পণ্যের দাম ৩ দশমিক ৩৯ ডলার।
রিলায়েন্স চায়, তাদের সরবরাহকারীরা অন-ডিমান্ড বা চাহিদা অনুযায়ী কাজ করুক। এ জন্য প্রথমে প্রতিটি নকশার ১০০টি করে পোশাক তৈরি করা হবে। পরবর্তী সময়ে বিক্রি ভালো হলে উৎপাদন বাড়ানো হবে।
শেইনের নতুন ধরনের সাপ্লাই চেইন, ডেটাচালিত ডিজাইন প্রক্রিয়া ও ব্যতিক্রমী ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানার জন্য সম্প্রতি চীন সফরে যান রিলায়েন্সের কর্মকর্তারা। শেইন ইন্ডিয়ার সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মানিশ আজিজ তাঁর লিংকডইন পোস্টে শেইনের স্কেল ও গতিকে অসাধারণ বলে উল্লেখ করেন।
ব্রুকস ব্রাদার ও মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের মতো ব্র্যান্ডের সঙ্গেও রিলায়েন্সের অংশীদারত্ব রয়েছে। তাদের আজিও নামের একটি ই-কমার্স সাইট রয়েছে, যা অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট, ফ্লিপকার্ট ও টাটার জুডিওয়ের মতো রিটেইলারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।
সূত্র জানায়, রিলায়েন্স নতুন সরবরাহকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির পাশাপাশি তাদের বিনিয়োগেও সহযোগিতা করবে, যা প্রকারান্তরে শেইন-রিলায়েন্স অংশীদারত্বকে বৈশ্বিক পরিসরে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ইন ব র য ন ড র য ক তর ষ ট র সরবর হ শ ইন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//