বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের দুই দিন আগে ঘোষণা করা হলো আইসিসি হল অব ফেমে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সাত ক্রিকেটারের নাম। এ পর্যায়ে জায়গা করে নেওয়া সাত ক্রিকেটার হলেন এম এস ধোনি, ম্যাথু হেইডেন, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, হাশিম আমলা, গ্রায়েম স্মিথ, সারা টেলর ও সানা মীর।

গতকাল লন্ডনের অ্যাবে রোড স্টুডিয়োতে এক গালা ইভেন্টে নামগুলো ঘোষণা করেছেন আইসিসিপ্রধান জয় শাহ। এ তালিকায় থাকা সানা মীর পাকিস্তানের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে এ সম্মানে ভূষিত হলেন।

২০০৫ সালে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক হয় সানা মীরের। পাকিস্তান নারী দলের ১২০টি ওয়ানডের ৭২টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ১০৬ টি-টোয়েন্টির ৬৫টিতে নেতৃত্বের ভার ছিল তাঁর কাঁধে।

পাকিস্তানের হয়ে ২০১০ ও ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসে সোনার পদকও জিতেছেন সানা। আর ব্যক্তিগতভাবে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার হিসেবে তিনি নিয়েছেন ১৫১ উইকেট। ২০১৮ সালে বোলারদের ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে সবারও ওপরে ছিলেন সানা।

আরও পড়ুনপিসিবির হল অব ফেমে ইনজামাম, মিসবাহ, মুশতাক ও আনোয়ার১০ জানুয়ারি ২০২৫

ইতিহাস গড়ে হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া নিয়ে সানা মীর বলেছেন, ‘শৈশবে স্বপ্ন দেখতাম, একদিন আমাদের দেশে একটি নারী ক্রিকেট দল থাকবে। আর আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।

সেই সব কিংবদন্তির পাশে আমাকে রাখা হয়েছে, যাঁদের আমি ব্যাট বা বল হাতে নেওয়ার অনেক আগে থেকে আদর্শ মনে করতাম। এটা এমন একটা মুহূর্ত, যা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। এই সম্মান পেয়ে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আশা করি, এর প্রতিদান ক্রিকেটকে কোনো না কোনোভাবে ফিরিয়ে দিতে পারব।’

সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক ধোনি দেশকে অসামান্য সব সাফল্য এনে দিয়েছেন। তাঁর হাত ধরেই ওয়ানডেতে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ভারত। ২০১১ সালে ওয়ানডেতে বিশ্বকাপ জেতার আগেই অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।

২০০৭ সালের সেই ট্রফিও আসে ধোনির হাত ধরেই। দুই সংস্করণে বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি ধোনির নেতৃত্বে ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও জেতে ভারত। ব্যক্তিগতভাবে ওয়ানডেতে ৩৫০ ম্যাচ খেলে ৫০.

৫৭ গড়ে ১০,৭৭৩ রান করেন ধোনি। আর ৯০ টেস্টে ৩৮.০৯ গড়ে তাঁর রান ৪,৮৭৬। অন্য দিকে টি-টোয়েন্টিতে ৯৮ ম্যাচ খেলে ৩৭.৬০ গড়ে ধোনি করেছেন ১,৬১৭ রান।

আরও পড়ুনআইসিসির হল অব ফেমে অ্যালিস্টার কুক, ডি ভিলিয়ার্স ও নীতু ডেভিড১৬ অক্টোবর ২০২৪

হল অব ফেমে জায়গা পেয়ে ধোনি নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন এভাবে, ‘আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া একটি বড় সম্মান। এটি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অবদানের স্বীকৃতি। কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের পাশে নিজের নাম থাকা এক অসাধারণ অনুভূতি। এটি এমন এক অর্জন, যা আমি সারা জীবন লালন করব।’

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ম্যাথু হেইডেন আগ্রাসী ও বিধ্বংসী ব্যাটিং স্টাইলের কারণে বেশ পরিচিত ছিলেন। ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে ট্রফি জেতানোর পথে ৩টি সেঞ্চুরি করেন হেইডেন। এর আগে ২০০৩ সালে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩০টি টেস্ট সেঞ্চুরি নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন বর্তমানে ধারাভাষ্যকার হিসেবে পরিচিত এই ক্রিকেটার।

হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুজন। একজন হাশিম আমলা, যিনি লম্বা সময় ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং স্তম্ভ ছিলেন। আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠা এই ব্যাটসম্যান ব্যক্তিগতভাবে অনেকগুলো মাইলফলকেরও মালিক। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি তাঁর (২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১)। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৫৫।

আমলার দক্ষিণ আফ্রিকান সতীর্থ গ্রায়েম স্মিথ মাত্র ২২ বছর বয়সে অধিনায়কত্ব পেয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন ক্রিকেটে। বাঁহাতি এই ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকাকে রেকর্ড ১০৯ টেস্টে নেতৃত্ব দেন, যার ৫৩টিতে দল জয়ও পেয়েছে। স্মিথ এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি ১০০ ম্যাচের বেশি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। টেস্টে রেকর্ড গড়া স্মিথ ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৫০ ম্যাচে।

আরও পড়ুনহঠাৎ অবসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ১ ঘণ্টা আগে

সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরির ক্রিকেট ক্যারিয়ারও অনবদ্য। তিনি সেই তিন ক্রিকেটারের একজন, যাঁরা টেস্টে ৪ হাজার রান করার পাশাপাশি ৩০০ উইকেটও নিয়েছেন। ২০০৯ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে রানার্সআপ হওয়া নিউজিল্যান্ড অধিনায়কও ছিলেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার।

হল অব ফেমে জায়গা পাওয়া অন্য ক্রিকেটার হলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি নারী ক্রিকেটার সারাহ টেলর। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সেনানী ছিলেন টেলর। এ ছাড়া ঘরের মাঠে ২০১৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যও ছিলেন তিনি। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর করা ৪৫ রান দলের জয়ে বড় ভূমিকাও রেখেছিল। উইকেটরক্ষক হিসেবে সব সংস্করণ মিলিয়ে তাঁর ডিসমিসাল সংখ্যা ২৩২।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বক প আইস স উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আগে একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে ত্রুটি, এখতিয়ারে ঘাটতি এবং নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সেটিকে সত্যিকারের এখতিয়ারসম্পন্ন, ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকার কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিয়োগ পদ্ধতিটা এমনভাবে করেছি যাতে অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় মানুষরা কমিশনে জায়গা পান।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোকেও এই কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়েছে। এর ফলে কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”

অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আগের কমিশনের এখতিয়ারে গুরুতর সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে। এবার সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।”

এছাড়া, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।

অধ্যাদেশে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের সুপারিশ বা নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এর বাধ্যবাধকতা আইনি কাঠামোয় যুক্ত করা হয়েছে।”

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন