চিকিৎসকেরা অভিনেত্রী তানিন সুবহাকে ‘ক্লিনিক্যালি ডেথ’ ঘোষণা করেছেন। এই অভিনেত্রী কিশোরী বেলায় মা হয়েছেন। মেয়ের জন্য টাকা আয় করার সময় সহজ রাস্তার খোঁজ করছিলেন—সেই খোঁজেই এক সময় শোবিজে আসেন তানিন।
ছোটবেলা থেকেই বাবা মায়ের সঙ্গে সৌদি আরবে ছিলেন তানিন সুবহা। সেখান থেকে যখন বাংলাদেশে আনে ২০০৮ সালে। তখন তিনি ক্লাস এইটের স্টুডেন্ট। বাবা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। এক কিশোরীর গল্প এখান থেকেই অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে।
ক্লাস এইটে পড়ার সময় তার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিযে হয়। মেয়ের মা হন তানিন সুবহা। কিন্তু বিয়েটা টেকেনি সুবহার। আবার পড়াশোনা করা শুরু করেন। তানিন সুবহা মেয়েকে নিয়েই বাবার বাড়িতে ছিলেন। বাচ্চার খোঁজ নিচ্ছিলো না তার বাবার পরিবারের কেউ। বাচ্চাকে ভালো রাখার জন্য তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত হতে চাচ্ছিলেন তানিন সুবহা। বান্ধবীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ক্লোজ আপ ওয়ান গানের অডিশনে গিয়েছিলেন তানিন।
আরো পড়ুন:
শাকিব খান সম্পর্কে এই চমকপ্রদ তথ্যগুলো জানেন?
এক সিনেমায় কত পারিশ্রমিক পান নয়নতারা?
২০১২ সালে ক্লোজ আপ ওয়ানে অংশ নেন তানিন সুবহা। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। একটা সময় বাদ পড়ে যান। এনটিভিতে কান্নাকাটি করেন। মায়ের কাছে মেয়েকে রেখে প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলেন তিনি। তখন মেয়ের বয়স ছয় মাস। ব্রেস্ট ফ্রিডিং করাতেন। সারাদিন মেয়েকে দূরে রেখে অডিশনের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থতা বোধ করেন তিনি।
কিন্তু ওই অডিশন থেকেই শোবিজে কাজ করার স্বপ্ন আরও জোরালোভাবে দেখতে শুরু করেন তানিন। ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। এই মাধ্যমেই পরিচালক সৈয়দ বাবুলের সঙ্গে পরিচয় সুবহার। এরপর বিনোদন জগতের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় গড়ে ওঠে। শুরুতে বিজ্ঞাপন, তারপর মডেলিং শুরু করেন। ২০১৪ সালের দিকে আবুল কালাম আজাদ তাকে কল দিয়ে মোশাররফ করিমে সঙ্গে নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। প্রথম নাটক ‘জমজ’ এ মোশাররফ করিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেন তানিন সুবহা। তানিন সুবহা অভিনীত সাতটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।
২০২২ সালে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে তানিন সুবহা বলেন, ‘‘আমার সেই মেয়ের বয়স এখন ১১ বছর।’’
শোবিজে ধীরে ধীরে উপস্থিতি বাড়ছিলো তানিনের। যদিও মেয়েকে সেভাবে কখনও সামনে আনেননি তানিন।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নাফ নদী আর সীমান্ত দেখতে কক্সবাজারের যে দুটি স্থানে পর্যটকের ভিড়
ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। সাগর, নদী, পাহাড় আর ঝরনা ঘুরে দেখার পর অনেকে ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন নাফ নদীর তীরে। পাঁচ কিলোমিটার চওড়া নাফ নদীর ওপারে (পূর্ব দিকে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। বর্তমানে এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হাতে।
টেকনাফ সীমান্তের অন্তত ৮০ কিলোমিটারজুড়ে যেকোনো জায়গা থেকে নাফ নদী ও মিয়ানমার সীমান্ত দেখা যায়। তবে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় চারটি পয়েন্ট থেকে—হ্নীলা ইউনিয়নের পাহাড়চূড়ার জাদিমুরা, টেকনাফ পৌরসভার নেটং বা দেবতার পাহাড়, চৌধুরীপাড়ার ট্রানজিট জেটি এবং শাহপরীর দ্বীপ জেটি। এর মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ এবং ট্রানজিট জেটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও সেখানে ভিড় করছেন। জেটিতে উঠে নাফ নদী, প্যারা বন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য এবং ওপারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দেখার সুযোগ মিলছে।
গত সোমবার বিকেলে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক শ নারী-পুরুষের ভিড়। বেশির ভাগই পর্যটক। তাঁরা ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাখাইন রাজ্যের ছবি তুলছেন। জেটির এক-তৃতীয়াংশ নদীর পানিতে বিস্তৃত। সেখানে দাঁড়ালে মনে হয় সাগরের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন।
কেউ সিঁড়িতে, কেউবা রেলিংয়ের পাশে বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। এই জেটি দিয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রলার ও স্পিডবোটে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করেন।
জেটিতে কথা হয় ঢাকার মিরপুরের ব্যবসায়ী আকমল হোসেনের সঙ্গে। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ছয়জন সদস্য নিয়ে এসেছেন তিনি। ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। শুক্রবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারে পৌঁছে শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে এসে জেটির খোঁজ পান।
আকমল হোসেন (৫২) বলেন, ‘নাফ নদীর এই সীমান্তটা এতই সুন্দর যে না এলে বুঝতাম না। পাশাপাশি শাহপরীর দ্বীপের ইতিহাসটাও জানা হলো। সম্রাট শাহ সুজা ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর নামের সঙ্গে মিলিয়ে দ্বীপের নামকরণ—বেশ চমকপ্রদ।’
কুমিল্লার মতিউল ইসলাম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দেখতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পর্যটকদের এখন ট্রলার ও স্পিডবোটে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় এত দিন রাখাইন রাজ্য দখল, মর্টার শেল পড়ার খবর পড়েছি। আজ সীমান্তটা চোখে দেখলাম।’
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে জেটিতে আসেন আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২৫ বছর আগে টেকনাফ এসেছিলাম। তখন এই জেটি ছিল না। এখন জেটিতে দাঁড়িয়ে মিয়ানমারের জলসীমা আর নাফ নদীর সৌন্দর্য দেখা যায়।’
কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, জেটিতে উঠতে ১০ টাকার টিকিট কাটতে হলেও শৌচাগার নেই। এতে নারী ও শিশুদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
জেটির ইজারাদারের পক্ষে আদায়কারী নুরুল ইসলাম বলেন, জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে জেটি পরিচালনা করা হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনগামী যাত্রী ও পর্যটকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা, ইজিবাইক, টমটম, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে ভিড় বাড়ছে। প্রথম দিন ৮০০ দর্শনার্থীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে। এখন দ্বিগুণ আদায় হচ্ছে।
টেকনাফের নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটি। নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। সোমবার দুপুরে