রূপগঞ্জে সাব্বির হোসেন খোকা নামে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এক নেতাকে নিয়ে ছাত্রদল-যুবদলের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ দুজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১০ জুন) উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদলের ছোট ভাই মামুন ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভুলতা ইউনিয়ন সদস্য সাব্বির হোসেন খোকা।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সাব্বির হোসেন খোকাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান।

এ সময় তাকে ছাড়িয়ে নিতে ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য শান্ত ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে এক পক্ষের লোকজন অপর পক্ষের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলি করেন।

এতে ভুলতা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদলের ছোট ভাই মামুন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বাদলের লোকজন ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য সাব্বির হোসেনকে পিটিয়ে আহত করেন।

পরে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা গুলিবিদ্ধ মামুনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র পগঞ জ য বদল ন র য়ণগঞ জ ছ ত র দল য বদল র স ঘর ষ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুরে আসুন হাওরে

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’—
জীবনানন্দ দাশের এই পঙ্‌ক্তির অর্থ যেন নতুন করে জন্ম নেয়, যখন আপনি হাওরের বুক চিরে এগিয়ে চলেন, আর কুয়াশা ঢাকা পাহাড়ের রেখা আপনাকে নিয়ে যায় এক অলৌকিক বাস্তবতায়।
যান্ত্রিক শহরের ক্লান্তিকর ছায়া থেকে মুক্তি পেতে আমরা পাঁচ বন্ধু এক সন্ধ্যায় হুট করেই ঠিক করলাম– এবার একটু ভিন্ন কিছু হোক। ঢাকার ধুলো পড়া স্বপ্ন ফেলে আমরা ছুটে চললাম সুনামগঞ্জের দিকে। গন্তব্য টাঙ্গুয়ার হাওর। রাত সাড়ে ১২টা। বাসের জানালায় কেবল আঁধার, মাঝেমধ্যে হেডলাইটের ছায়ায় উঁকি দিয়ে যায় পিচঢালা পথের রেখা। গন্তব্য যতই কাছে আসে, পথ ততই রূপকথায় বদলে যেতে থাকে। দুই পাশে বিস্তৃত জলরাশির মাঝ দিয়ে স্নিগ্ধ এক পথ ধরে চলছি আমরা। সকালবেলা তাহিরপুর ঘাটে এসে পৌঁছালাম। হালকা নাশতার পর যখন আমরা পা রাখলাম নৌকায়, ঠিক তখনই যেন ঢুকে পড়লাম অন্য এক জগতে। দিগন্তবিস্তৃত হাওরের বুকে হালকা হাওয়ার স্নেহে মেঘমালা ভেসে বেড়ায় দূরের পাহাড় ছুঁয়ে।
এ এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা– যেন জলও কথা বলে, আকাশও দেয় সাড়া। চারপাশে শুধু পানি আর পানি। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে ছোট ছোট চর, যেখানে গবাদি পশু চরাচ্ছেন কেউ, কারও কোলে হাঁসের ছানা। হাওরের মানুষ যেন পানির সন্তান। বর্ষায় মাছ ধরে, শীতে চাষ করে, আর এই মাঝামাঝি ঋতুতে– তারা পর্যটককে দেয় হাসিমাখা আতিথেয়তা।
দুপুরে পৌঁছালাম পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। সেখানে পানি এতটাই স্বচ্ছ, ডুবে যাওয়া পাতার হাড় জিরজিরে দাগ পর্যন্ত চোখে পড়ে। গোসল, আহার আর বিশ্রামের পর ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় চেপে ঘুরে বেড়াই করচ-হিজল বনের গভীরে। বিকেলে এলাম নীলাদ্রি লেকে। চুনাপাথরের খনি আজ রূপ নিয়েছে নীল জলে ভরা এক হৃদয়ে। স্থানীয়দের কাছে এটি শহীদ সিরাজ লেক হলেও, পর্যটকের কাছে এর পরিচয়– নীলাদ্রি। লেকের নীল জল যেন গহিনে কিছু কথা জমিয়ে রেখেছে, যা কেবল নীরব চাহনিতেই ধরা পড়ে। সন্ধ্যা নামল জাদুকাটা নদীর ধারে। সীমান্তঘেঁষা সেই জায়গা থেকে দেখা যায় মেঘালয়ের পাহাড়। সীমান্ত এলাকায় সোডিয়াম লাইটের আলোর নিচে গাঢ় হয়ে ওঠে এক স্বপ্নময়তা— যেন রূপকথার কোনো নিঃশব্দ গ্রাম। দলবেঁধে সবার কণ্ঠে– যেখানে সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার।
রাতটা কাটল হাউসবোটে। পূর্ণিমার আলোয় জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব– সে দৃশ্য দেখে নিঃশব্দে কবি মন বলে উঠে– ‘বলুন দেখি কোথা যাই, কোথা গেলে শান্তি পাই?
ভাবিলাম বনে যাব, তাপিত হিয়া জুড়াব–
সেখানেও অর্ধরাত্রে, কাঁদে মৃগী কল্প গাত্রে!’
রাত্রির বুক ফুঁড়ে উঠে আসে গান, গল্প আর হাসির ঢেউ। তারপর ঘুমিয়ে পড়ি আমরা প্রকৃতির কোলজুড়ে– চাঁদের পাশে ছায়া হয়ে।
হাওরে হাউসবোট
টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্যতম আকর্ষণ হলো নৌকায় থাকার দিনগুলো। বৃষ্টির সময় নৌকায় বসে চায়ের চুমুকে দূর মেঘালয়ের পাহাড়গুলোর দৃশ্য যেন জাগিয়ে তুলে যে কারও ভেতরের কবিকে। 
এমনই একটি হাউসবোট হলো ‘জলছবি’। এ হাউসবোটে যা যা সুবিধা পাবেন তা হলো– ছয়টি কেবিন অ্যাটাচ ওয়াশরুম (হাই কমোড), একটি ডিলাক্স কেবিন, রুফটপ ডাইনিং।
এ ছাড়াও নিতে পারেন জলতরঙ্গ প্যাকেজ। প্যাকেজে থাকবে হাওরের সম্পূর্ণ খাবার ও জলতরঙ্গ বোটে দু’দিন এক রাত থাকা। এ ছাড়া নীলাদ্রি লেক, শিমুল বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, টেকেরঘাট, জাদুকাটা নদী, টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ তো থাকছেই। জনপ্রতি ৫ হাজার ৫০০ টাকায় ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে টাঙ্গুয়ায় ঘুরে আসতে পারেন টিজিবির সিন্দাবাদ তরী হাউসবোট নিয়ে। বোটে রয়েছে ৮টি কেবিন, যার ছয়টিই অ্যাটাচ বাথসহ। 
বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর হয় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় স্পট। চারদিক বিস্তৃত জল, তার মাঝে ছোট ছোট গাছগাছালি ভরা ডুবোচর আর দূরের মেঘ-পাহাড় যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য এখানে অবর্ণনীয়, লাল আভায় রাঙা আকাশ আর জলের প্রতিফলন মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। জলের বুকে ভেসে চলা এক রোমাঞ্চকর অনুভব, যেখানে প্রকৃতি, প্রশান্তি আর বিলাসিতা একসঙ্গে মিশে যায়। হাওরের নীরব সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্যই যেন তৈরি হয়েছে ‘ফ্যালকন দ্য আইকনিক হাউসবোট’।  
হাওরে সাধারণত যে হাউসবোটগুলো আছে, সেগুলোর স্বত্বাধিকারী পুরুষ। প্রচলিত এ ধারা ভেঙেছে বেহুলা-দ্য হাউসবোট। এ হাউসবোটের স্বত্বাধিকারী ও পরিচালনাকারী সবাই নারী। এ বোটে মোট ৮টি কেবিন রয়েছে। আছে সিঙ্গেল ও কাপল প্যাকেজ। 
কীভাবে যাবেন
টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার জন্য প্রথমে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলায়। ঢাকা থেকে সড়কপথে সরাসরি সুনামগঞ্জে যাওয়া যায়। সেখান থেকে তাহিরপুর যেতে হবে লেগুনা কিংবা অটোরিকশায়। এ ছাড়া এ পথে মোটরবাইকেও যাত্রী পরিবহন করা হয়। তাহিরপুর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের হাউসবোট পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনি চাইলে ঢাকা থেকেও প্যাকেজ নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে আসতে পারেন। v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ