ছবি: সংগৃহীত

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তেহরানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করল ইসরায়েল

এক–দুজন নয়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এটির অবস্থান ইরানের রাজধানী তেহরানের আলবোরজ পর্বতমালার পাদদেশে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই পাঁচ অধ্যাপক দেশটির পরমাণু গবেষণা প্রকল্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ছিলেন।

পরমাণু গবেষণায় ওই পাঁচ নক্ষত্রকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। এমনটাই জানিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মো. নাকিব হাসান। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক হোস্টেলে থাকছেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের। তেহরান থেকে টেলিফোনে তিনি জানান, একসঙ্গে এতজন অধ্যাপককে হারিয়ে শোকে মুষড়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। এককথায় শোকে স্তব্ধ পরমাণু গবেষণার জন্য বিশেষায়িত ইরানের শীর্ষস্থানীয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়টি এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শোক জানিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

নাকিব জানান, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা রাহিনীর ক্রমাগত হামলার কারণে তাঁরা একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। বাংলাদেশ থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন, কখন যেন কী হয় এ ভাবনায়! সারাক্ষণ বাংলাদেশ থেকে স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শুভান্যুধায়ীদের ফোনে একধরনের ট্রমা তৈরি হয়েছে নাকিবের মনে। কারণ, জীবনে তিনি কোনো দিন এমন দুঃসহ ও ভয়ার্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি।

নাকিব বলেন, ১৩ জুন ভোরে আবাসিক এলাকায় টার্গেট করে তাঁদের এই পাঁচ শিক্ষককে হত্যা করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। যদিও ওই শিক্ষকদের কেউ তাঁর বিভাগের নন, তারপরও তাঁরা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ছিলেন। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর বেহেস্তি ইউনিভার্সিটি কখনো এমন নৃশংস ঘটনার শিকার হয়নি। একসঙ্গে এতজন অধ্যাপককে তাদের হারাতে হয়নি।

এ বছরের জানুয়ারিতে বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাকিব হাসান তেহরানের শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। তিনি জানান, নিহত পরমাণুবিজ্ঞানীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করতেন। তাঁরা সবাই ছিলেন পরমাণুবিজ্ঞানী।

বাংলাদেশের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার সন্তান নাকিব হাসান জানান, গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় ইসরায়েলি হামলায় ওই বিজ্ঞানীরা নিহত হন। রোমহর্ষ সে খবর তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতি থেকে জানতে পারেন। এ ছাড়া শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা মিডিয়া গ্রুপে হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই পাঁচ অধ্যাপকের ছবি দেওয়া হয়েছে।

নিহত ওই পরমাণুবিজ্ঞানীদের মধ্যে ড. আহমাদরেজা জোলফাগারি, ড. ফেরেদুন আব্বাসি ও ড. আবদলহামিদ মিনুচেহর শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। বাকি দুজন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. আমির হোসেন ফাকেহি ও ড. মোহাম্মাদ মেহদি তেহরানচি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করতেন।

শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রথিতযশা পরমাণুবিজ্ঞানী ছিলেন ড. মাজিদ শাহরিয়ারি, যাঁকে ২০১০ সালে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ গাড়ি বোমা হামলায় হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানের আরও চার পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাঁরা হলেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ আকবর মোতালেবি জাদেহ, মেকানিকসের বিশেষজ্ঞ আলী বাখোরি কাতিরিমি, পদার্থবিদ্যার বিশেষজ্ঞ মনসুর আসগারি ও ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ সাইদ বার্জি।

আইডিএফ দাবি করেছে, নিহত পরমাণুবিজ্ঞানীরা ইরানের পরমাণু গবেষণার জনক মোহসেন ফাখরিজাদেহর উত্তরসূরি। ২০২০ সালে ইসরায়েল তাঁকেও হত্যা করে।

নাকিব জানান, চার দিন ধরে তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের সামরিক স্থাপনাগুলোয় ইসরায়েল ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে। অন্যান্য বেসামরিক এলাকায় খুব একটা হামলা চালাচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। ইরানি নাগরিক থেকে শুরু করে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকেরা ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছেন।

নাকিব হাসান জানান, তাঁর জানামতে, ইরানজুড়ে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় দেশটির অনেক শীর্ষ স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা মারা গেলেও বাংলাদেশি কোনো নাগরিক হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। রোববার তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা টেলিফোনে যোগাযোগ করে তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ