চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ এক কিশোর মোহাম্মদ আরিফের (১৫) মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তাকে ছাত্রদল কর্মী উল্লেখ করে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।

গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিটি করপোরেশন ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের হাটহাজারী থানার সন্দ্বীপ কলোনি এলাকায় গুলিতে আহত হয় আরিফ। সে ওই এলাকার ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে এবং কলোনি ইউনিট ছাত্রদলের একজন কর্মী ছিল। এ ঘটনার জন্য নিহত কিশোরের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ সুমন ও তাঁর ভাই ভুট্টো জড়িত বলে অভিযোগ করে তাঁদের বিচার দাবি করছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপ কলোনিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘ভুট্টো-সুমন’ ও ‘সাখাওয়াত’ নামে দুটি পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সুমন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড শাখার সভাপতি এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাখাওয়াত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে পরিচিত। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সুমন গ্রেপ্তার হলেও আবার জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর সন্দ্বীপ কলোনির পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসীকে নিরাপদ আশ্রয় দেন সুমন। যাতে পাহাড়ি খাসজায়গা তাঁর দখলে থাকে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সুমন ও তাঁর বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় একটি রাজনৈতিক দল।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সশস্ত্র লোকজন নিয়ে কলোনিতে আসেন সুমন। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের ধাওয়া দেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে তাঁরা পালিয়ে যান। এর মধ্যে একটি গুলি এসে লাগে আরিফের পেটে। পরে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার পর কলোনিতে সুমনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি অটোরিকশা উদ্ধার করে।

নিহত আরিফের বড় ভাই আলাউদ্দিন তাঁর ভাইকে গুলি করে মারার পেছনে সুমনকে দায়ী করে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.

ইলিয়াস নিহত আরিফকে ছাত্রদল কর্মী উল্লেখ করে হত্যার বিচার দাবি করেন। সন্দ্বীপ কলোনি এলাকায় সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান প্রশাসনের কাছে।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী অঞ্চল) কাজী মো. তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ আরিফ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে নিজ উপজেলায় অবরুদ্ধ নুরুল হক, উদ্ধারে সেনাবাহিনী–পুলিশ

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নুরুল হক ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।

জানা গেছে, রাতে বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায় আয়োজিত এক স্মরণসভায় অংশ নিয়ে ফেরার পথে অবরুদ্ধ হন নুরুল হক। এর ঘণ্টা তিনেকের মাথায় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

তবে রাত দেড়টার দিকে নুরুল হক ফেসবুকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে তখনো অবরুদ্ধ থাকার কথা জানান। নুরুল হক লিখেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে ‘সন্ত্রাসীদের’ রাস্তা থেকে হটাতে পারেনি।

শুরুতে দেওয়া পোস্টে নুরুল হক লিখেছেন, ‘গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি, রড, রামদা নিয়ে আমাদের পথরোধ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে।’

পরে সেখান থেকে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় নুরুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে গলাচিপায় গণসংযোগ কর্মসূচি হিসেবে কালারাজা বাজারে একটি দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন এবং কুমারখালী বাজারে একটি পথসভায় অংশ নেন তিনি। রাত ১০টার দিকে তাঁর দলীয় কর্মী প্রয়াত বাদল মেম্বারের স্মরণসভায় অংশ নিয়ে গলাচিপার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এ সময় পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের অনুসারীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর পথরোধ করে, দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। তখনই তিনি জেলা পুলিশ সুপার ও গলাচিপা থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেন বলেও জানান নুরুল হক।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাসান মামুন প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল হক নূর এলাকায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি গত বুধবার প্রকাশ্যে একটি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে জেলা বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার চরবিশ্বাস বাজারে তাঁর লোকজন বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে এলাকার লোকজন নুরুল হকের ওপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন।

হাসান মামুন আরও বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। এসব ঘটনা ফেসবুকে দেখেছি। ভিপি নূরের অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জেনে তাঁকে উদ্ধারের জন্য আমি সেনাবহিনী ও পুলিশ-প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করেছি। আমি চাই, গলাচিপা উপজেলার পরিবেশ শান্ত ও সুশৃঙ্খল থাকুক।’

পরবর্তীতে নুরুল হকের সঙ্গে থাকা গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিকবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল আমীন মুঠোফোনে জানান, সেনাবাহিনী আর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিতে অপারগতা জানিয়ে নুরুল হকসহ তাঁদের গলাচিপা ছেড়ে পটুয়াখালী জেলা শহরে চলে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। তবে তাঁরা গলাচিপা ডাকবাংলোয় রাতে থাকার জন্য রওনা হয়েছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশাদুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ