হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট সড়কে দুই দিন বন্ধ থাকার পর আবার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই সড়কপথে বাস চলাচল হয়। হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নতুন মিনিবাস চালু করা নিয়ে বিরোধের কারণে গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দুই দিন আঞ্চলিক ওই সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ ছিল।

আরও পড়ুনহবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট সড়কে দুই দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ২২ ঘণ্টা আগে

সোহেল আহমেদ জানান, দুই জেলার বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক সড়কে বাসের চলাচল শুরু হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত নতুন করে যাত্রীদের জন্য মিনিবাস সার্ভিস চালু করেন। গত সোমবার যাত্রী নিয়ে একটি মিনিবাস শায়েস্তাগঞ্জ গেলে এতে বাধা দেন হবিগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতি ও জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন। তাঁদের দাবি, এ সড়কপথে নতুনভাবে মিনিবাস চলাচলের কোনো অনুমোদন নেই। অন্যায়ভাবে নতুন মিনিবাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটিতে নিয়মিত যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে, তাই অতিরিক্ত বাস সংযুক্ত করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

অন্যদিকে ওই দ্বন্দ্বের জেরে হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক রুটে চলাচলকারী বাসগুলোকে মৌলভীবাজারের ওপর দিয়ে চলাচল করতে বাধা দেয় জেলার বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন। বাস ভাঙচুরের আশঙ্কায় মঙ্গলবার থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ওই রুটে কোনো বাস চলাচল করেনি। এতে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।

হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা দুই জেলার বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন আগামী শনিবার এ বিষয়ে একটি সমঝোতামূলক বৈঠকে বসব। আশা করি, তখনই সব সমস্যার সমাধান হবে। এর আগে জনগণের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়—এ কারণে দুই জেলার রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে।’ একই কথা জানিয়েছেন বিষয়ে মৌলভীবাজার শ্রমিক ইউনিয়ন বাস লাইন সভাপতি কুতুব মিয়া।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আসুন, কোলদের প্রতি মানবিক হই

মানুষের নাকি রাষ্ট্রের নির্মম ঔদাসীন্য ও হিংস্র বিদ্বেষের শিকার হলো অতি সংখ্যালঘু কোল জাতির পাঁচ পরিবার। ঘটনা এ রকম: প্রায় আড়াই দশক ধরে রুমালী হাসদাসহ পাঁচ কোল পরিবার এই ভূমিতে বসবাস করছিল। তারা জানত, জমিটা খাস এবং তাদের জাতভাই তিলক মাঝি, দিনু মাঝি, ভাদু মাঝিসহ কয়েকজনের নামে জমির রেকর্ড আছে। 

রাজশাহী থেকে স্টিফেন সরেন আমাকে কাগজ পাঠিয়েছেন। আমি দেখলাম, এসএ রেকর্ডে এই কোলদের নাম আছে। তাদের অভিযোগ, জাতিতে হিন্দু সাজিয়ে এবরিজিনালদের জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন মকবুল হোসেন। তাঁর ওয়ারিশরা পরে আদালতে মামলা করেন। কোল পরিবারগুলো অভাব–অনটন ও নানা কারণে মামলার খোঁজ নিতে পারেনি। আদালত একতরফা রায় দেন। 

২৭ অক্টোবর কোলদের মাটির বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তারা আশ্রয় নেয় বাঁশঝাড়ে। পত্রিকায় দেখলাম, গোদাগাড়ী উপজেলার ইউএনও কোলদের দেখতে গিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। 

অনেক সময় বলা হয়, রাষ্ট্র এই অবহেলিত প্রান্তিক মানুষদের থেকে অনেক দূরে থাকে। এই দূরত্ব বাস রুটের বা সড়কপথের দূরত্ব নয়। অন্য এক দূরত্ব। দৃষ্টিভঙ্গির, অবহেলার, উপেক্ষার, না দেখার। সর্বোপরি অমর্যাদার।

প্রশাসনের প্রতি আমার অনুরোধ হলো, এই কোলদের পুনর্বাসনসহ জমির মামলার বিষয়ে সহায়তা করুন। বাদীর কাগজপত্র সঠিক কি না, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমি হস্তান্তরে প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৭ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে কি না, এসব দেখা গুরুত্বপূর্ণ। কেন কোল সম্প্রদায় মামলার আপিল করেনি, সেটি দেখা। তারা কি আদৌ উকিল নিয়োগ করেছিল? আপিলের সুযোগ থাকলে আপিলের ব্যবস্থা করা জরুরি। আর মানবিক কারণে হলেও ওদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। 

অনেক সময় বলা হয়, রাষ্ট্র এই অবহেলিত প্রান্তিক মানুষদের থেকে অনেক দূরে থাকে। এই দূরত্ব বাস রুটের বা সড়কপথের দূরত্ব নয়। অন্য এক দূরত্ব। দৃষ্টিভঙ্গির, অবহেলার, উপেক্ষার, না দেখার। সর্বোপরি অমর্যাদার। কেউ কি আমাকে বলবেন, কোনো কোল জাতির মানুষ কোনো দিন ডিসি অফিসে গেছেন কি না? ইউএনও অফিসে কোনো তথ্য কি আছে, কোনো কোল জাতির মানুষ দেখা করতে গেছেন? যদি গিয়ে থাকেন, কেমন রিসেপশন তিনি পেয়েছিলেন? নাকি গভীর এক হতাশা ও দুঃখ নিয়ে তাঁকে ফিরতে হয়েছে চিরচেনা তাঁর গ্রামে, যেখানে তাঁর থাকার ঘরের নিশ্চয়তা নেই? আমাদের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা লেখা আছে। 

ভারতের সংবিধানে ট্রাইবালদের জন্য সমতা শুধু নয়, অগ্রাধিকারের কথা লেখা আছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মহাশ্বেতা দেবী লিখেছেন, ‘কার্যকালে দশকের পর দশক ধরে শব্দগুলো সংবিধানে শোভা হয়ে থাকে এবং আদিবাসীদের দুঃখ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার দপ্তর থেকে হতাশা নিয়ে ফিরে এসে আদিবাসীরা স্টেশনে উবু হয়ে বসে থাকে, ট্রেন ধরে, সাঁইত্রিশ মাইল হেঁটে গ্রামে ফেরে এবং
অপরিচিত, হিংস্র আলোকোজ্জ্বল নয়া ভারত থেকে স্বীয় পরিবেশের অপরিমেয় অন্ধকারে ফিরে স্বস্তি পায় (জগমোহনের মৃত্যু)।’

আমি দেখলাম ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোল জাতির সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ৮২২। আর ২০১১ সালে ছিল ২ হাজার ৮৪৩ জন। তার আগে যেমন ২০০১ বা ১৯৯১ শুমারিতে তাদের নামই ছিল না। সরকারি রেকর্ডে তারা ছিল পরিচয়হীন। আমি ঢাকা শহরে কোল জাতির কোনো মানুষ খুঁজে পাইনি। অনেক বছর আগে প্রথম এক কোচ ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছিল। ভর্তির আগে আমার কাছে এসেছিল একটু সাহায্যের জন্য। আমি তাকে বলেছিলাম, অর্থের অভাবে কোচ ছেলের পড়া হবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেটি হওয়া উচিত হবে না। ছেলেটি বিসিএস ক্যাডারে চাকরি করছে এখন। কোলদের এখানে আসতে অনেক সময় লাগবে। আসুন, সবাই ওদের পাশে দাঁড়াই। 

পাঁচ কোল পরিবার উচ্ছেদ নিয়ে খুব বেশি রিপোর্ট হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তেমন হইচই হয়নি। প্রথম আলোসহ কয়েকটি পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সম্পাদকীয় লিখেছে। বাড়িঘর ভাঙার ছবি, ধ্বংসস্তূপের ছবি ছাপা হয়েছে। এসবের কোনোটিই আমাদের রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। আমরা ইনক্লুসিভ, মানবিক ও সংবেদনশীল রাষ্ট্রের কথা বলি। এর জন্য রাষ্ট্রকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। 

বাঙালি অনেক বড় জাতি। সংখ্যায় পৃথিবীতে অষ্টম আর বাংলাভাষীর বিচারে বিশ্বে পঞ্চম। এত বড় জাতি ৩ হাজার ৮২২ জনের কোলদের সহজেই এগিয়ে নিতে পাশে দাঁড়াতে পারে। 

সঞ্জীব দ্রং কলাম লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসুন, কোলদের প্রতি মানবিক হই