ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫-এর পর্দা উঠেছে রোমাঞ্চ আর প্রত্যাশার উত্তাপে। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই দিনে গ্রুপ ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’-র গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলো সম্পন্ন হয়েছে। ফলাফল ও পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই আসরে ইউরোপের ক্লাবগুলো শুরু থেকেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় একপ্রকার হুমকির মতো হাজির হয়েছে।

গোলবন্যায় বার্তা দিয়ে দিলো জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন:
উদ্বোধনী দিনেই বায়ার্ন মিউনিখ ‘সি’ গ্রুপে তাদের প্রথম ম্যাচে যেন গোলবন্যার এক প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিল। নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটি ছিল কেবল গোলপোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি নামমাত্র প্রতিপক্ষ। ম্যাচে বায়ার্নের জয় ১০-০, যা শুধু বড় জয় নয়, বরং এক প্রকার হুঁশিয়ার, তারা এ টুর্নামেন্টে এসেছেন কাপ জিততেই।

যদিও অকল্যান্ড তুলনামূলক দুর্বল দল, তবুও বায়ার্নের পজিশনিং, পাসিং-ফ্লো আর এক্সিকিউশন দেখে বোঝা গেল, এই জার্মান দল এখনো আগের মতোই ধারালো।

আরো পড়ুন:

ভরা মাঠে ক্লাব বিশ্বকাপ ড্রয়ে শুরু মায়ামির

তেহরানে আটকা ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার তারেমি, ক্লাব বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ‘মিস’

পিএসজি’র বড় জয়:
ফরাসি ক্লাব পিএসজি ‘বি গ্রুপে’ নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়েছে ৪-০ ব্যবধানে। যা কেবল স্কোরবোর্ডের পরিসংখ্যান নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ। পিএসজি বরাবরের মতো তারকাসমৃদ্ধ দল, কিন্তু তারা এবার তাদের রেজিলিয়েন্স (প্রতিকূলতা মোকাবেলার ক্ষমতা) দিয়ে নজর কাড়ল।

নেইমার পরবর্তী যুগে পিএসজি নতুন কেমিস্ট্রি নিয়ে খেলে যাচ্ছে এবং এই ম্যাচে তা দারুণভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মাঝমাঠে জোতা ও অ্যাসেনসিওর প্রভাব এবং আক্রমণে র‍্যান্ডাল কলো মুয়ানির অবদান ছিল স্পষ্ট।

চেলসি দেখাল একরাশ পরিণত ফুটবল:
ইংলিশ ক্লাব চেলসি ‘ডি গ্রুপে’ নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের এলএএফসি’র। খেলার ভেন্যু ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু মাঠের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন কেবল ইংলিশ তারকারা। পেদ্রো নেতো ও এঞ্জো ফার্নান্দেজের গোলে চেলসি জয় তুলে নেয় ২-০ ব্যবধানে। শুরু থেকেই তাদের পজিশন প্লে, মিডফিল্ড কন্ট্রোল এবং ট্যাকটিক্যাল ডিসিপ্লিন প্রশংসার দাবিদার।

এ ম্যাচে তরুণ লিয়াম ডেলাপের অ্যাসিস্ট ছিল চোখে পড়ার মতো। চেলসি দেখিয়েছে তারা শুধু স্কোরলাইন নয়, ছকভাঙা পরিকল্পনাতেও এগিয়ে।

বোকার দাপট আর বেনফিকার প্রত্যাবর্তন—দুই অর্ধে দুই নাটক:
দিনের সবচেয়ে নাটকীয় ম্যাচটি ছিল ‘সি গ্রুপে’ বেনফিকা ও বোকা জুনিয়র্সের। আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বোকা প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় ইউরোপের বর্ষীয়ান ক্লাব বেনফিকা। আনহেল ডি মারিয়া ও নিকোলাস ওটামেন্ডি দুই অভিজ্ঞ আর্জেন্টাইনের গোলে ২-২ সমতা ফেরায় তারা।

এই ম্যাচের পারফরম্যান্সে বোকার আক্রমণাত্মক শুরু এবং বেনফিকার ধারাবাহিক প্রত্যাবর্তন দুইটিই ফুটবলপ্রেমীদের চোখে সম্মানের দাবিদার।

এবারের আসরে ইউরোপ এগিয়ে, কিন্তু লাতিন আমেরিকার লড়াকু মনোভাব জবাব দিচ্ছে। প্রথম দুই দিনের পারফরম্যান্স থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার— ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো (বায়ার্ন, চেলসি, পিএসজি) শুধু শক্তিশালী নাম নয়, মাঠের খেলায়ও তারা এগিয়ে। তবে দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবগুলো, বিশেষ করে বোকা জুনিয়র্স, তাদের হার না মানা মানসিকতায় টুর্নামেন্টে প্রাণ এনে দিয়েছে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল র প রথম প এসজ ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ

বিদেশে খেলোয়াড় পাঠানোর নামে মানব পাচারের ঝুঁকি রোধ এবং যোগ্য খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করতে নতুন নিয়ম চালু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ৯ অক্টোবর এনএসসি এক চিঠিতে ফেডারেশনগুলোকে জানিয়েছে, এখন থেকে বিদেশে ক্রীড়া দল পাঠানোর আগে ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ফ্লাইটের কমপক্ষে ১০ দিন আগে জিওর (সরকারি আদেশ) জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও পারফরম্যান্স–সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্রও এনএসসিকে দিতে হবে।

অভিযোগ আছে, কিছু ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অনেক বছর ধরেই দলের সঙ্গে ভুয়া খেলোয়াড়-কর্মকর্তা পাঠিয়ে আদম পাচার করে আসছে। দুই একটা ঘটনা সামনে এলেও এসবের বেশির ভাগই থেকে যায় আড়ালে। ছোট খেলাগুলো থেকেই এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। এনএসসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতেই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ফ্লাইটের অন্তত ১০ দিন আগে জিওর প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম করা হয়েছে। এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) আমিনুল এহসান সরাসরি তা না বললেও তাঁর কথায়ও সে আভাস আছে, ‘আমি বলব না শুধু আদম পাচার রোধ করতে এই নিয়ম করেছি। তবে কোথাও কোথাও এসব খেলার নামে মানব পাচারের প্রশ্ন চলে আসে।’

অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।ফারহাদ জেসমিন, সাবেক অ্যাথলেট ও বিএও অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান

এনএসসির কাছে ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন এত দিন জিওর জন্য খেলোয়াড়দের নামই শুধু পাঠাত। যাঁর নাম দেওয়া হতো, তিনি আসলেই খেলোয়াড় কি না বা খেলোয়াড় হলে তাঁর যোগ্যতা কী বা যোগ্য কাউকে বাদ দিয়ে অযোগ্য কাউকে নেওয়া হচ্ছে কি না, এসব যাচাই–বাছাই করা হতো না। এনএসসি তাই জানত না কিসের ভিত্তিতে একজন খেলোয়াড়কে দলে নির্বাচিত করা হয়েছে। নতুন নিয়মে এনএসসিকে এসব দিতে হবে।

জিওর জন্য আবেদনকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে সময় লাগে বলে ১০ দিন আগে তালিকা চাওয়ার যুক্তি আছে। কিন্তু পারফরম্যান্স আর ফিটনেসের তথ্যপ্রমাণও পাঠানোর নিয়মটা একটু অভিনবই, যা নিয়ে অবশ্যই নানা রকম প্রশ্ন তোলা যায়। তবে জিওর জন্য ফ্লাইটের ১০ দিন আগে নাম চাওয়ার নিয়মটাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাথলেটস কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক অ্যাথলেট ফারহাদ জেসমিন লিটি বলেছেন, ‘অনেক সময় শুনি, কোনো কোনো ফেডারেশন ভুয়া খেলোয়াড় নিয়ে যায়। এনএসসির উদ্যোগটাকে তাই ভালোই বলব। এটা জবাবদিহির মধ্যে পড়ে।’

আরও পড়ুনবিশ্বকাপের আগে সৌদি লিগে খেলতে চেয়েছিলেন মেসি, সৌদি সরকারের ‘না’১১ ঘণ্টা আগেআদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

ক্রীড়াঙ্গনে স্বজনপ্রীতি ঠেকাতেও এ নিয়ম ভূমিকা রাখবে বলে ফারহাদ জেসমিনের আশা, ‘অনেক ফেডারেশন অনেক সময় যোগ্যতার বিচার না করে নিজেদের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিদেশভ্রমণই মুখ্য, পারফরম্যান্স মুখ্য নয়।’ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ‘এটা ভালো উদ্যোগ। কারণ, এনএসসির জানার অধিকার আছে, বিদেশে টুর্নামেন্টে আমরা কাদের নিয়ে যাচ্ছি।’ সম্প্রতি হকি তারকা রাসেল মাহমুদকে বয়সের অজুহাতে বাদ দেয় হকি ফেডারেশন। এ নিয়ে সমালোচনা হলে এনএসসিকে বিষয়টি তদন্তও করতে হয়।

এনএসসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব খেলাতেই বিদেশে দল পাঠানোর জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। কিন্তু আদম পাচার যেহেতু সব ফেডারেশন করে না, ক্রিকেট-ফুটবলসহ অনেক ফেডারেশনের জন্য নির্বাচিত খেলোয়াড়দের তথ্য এনএসসিকে দেওয়াটা বিব্রতকর হতে পারে। কারণ, এই ফেডারেশনগুলো একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দল গড়ে। তাদের সব তথ্য চাওয়া ফেডারেশনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কি না, এমন প্রশ্ন আসেই।

আরও পড়ুনআগে চা পরে লাঞ্চ—বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের শতবর্ষ পুরোনো এক রীতি১৫ ঘণ্টা আগে

এনএসসির পরিচালক আমিনুল এহসান অবশ্য তা মনে করেন না, ‘প্রায় প্রতিদিনই এনএসসির কাছে অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, কোনো না কোনো কর্মকর্তার অপছন্দের কারণে নাকি তিনি দল থেকে বাদ পড়েছেন। এ কারণেই খেলোয়াড় নির্বাচনের তথ্যগুলো এনএসসির জানা থাকলে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে একটা উত্তর দেওয়া যায়। এটা ফেডারেশনের কাজে হস্তক্ষেপ নয়। স্বচ্ছতার স্বার্থে এনএসসি তা জানতে চাইতে পারে।’

আরও পড়ুনঅনুশীলনে বলের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ১৭ বছর বয়সী ক্রিকেটারের মৃত্যু২১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’
  • খেলার নামে আদম পাচার ঠেকাতে তৎপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ
  • বোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানেরা ডোবান—আজ কী করবে বাংলাদেশ