‘পার’ এর সাহিত্য আলোচনা-‘বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি; শিল্পী, লেখকদের
Published: 21st, June 2025 GMT
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো শানু মোস্তাফিজের শিল্প-সাহিত্য সংগঠন ‘পার’-এর ব্যতিক্রমধর্মী সাহিত্য আলোচনা।
শুক্রবার ‘বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি; শিল্পী, লেখকদের করণীয়’ শীর্ষক এই আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যপত্র ‘খনন’-এর সম্পাদক বাদল শাহ আলম।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী উপস্থাপিত প্রবন্ধে তিনি বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ইতিহাসের নানা বাঁক ধরে শিল্প-সাহিত্যের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন। প্রবন্ধটি ছিল তথ্যমূলক, গভীরভাবে চিন্তা উদ্রেককারী এবং উপভোগ্য।
আরো পড়ুন:
‘একবার নারী হন, হে প্রভু’
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
বর্তমানে দেশে সাহিত্যভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান ক্রমেই কমে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে ‘পার’-এর এই ঘরোয়া আয়োজন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, সৃজনশীল মানুষদের ভাবনা ও চর্চা সক্রিয় করতে এবং সময়ের প্রেক্ষিতে শিল্পের ভূমিকা পুনর্বিবেচনার জন্যই এই আয়োজন। বাদল শাহ আলমের বক্তব্য সেই চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করেছে।
প্রবন্ধে বাদল শাহ আলম সাহিত্যের আদিপর্ব থেকে শুরু করে মধ্যযুগ, রেনেসাঁ, ফরাসি বিপ্লব, মার্কসবাদ, রুশ ও চীনা বিপ্লব পর্যন্ত ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সমাজ ও শিল্প-সাহিত্যের পারস্পরিক প্রভাব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “একজন লেখক-শিল্পীকে তার শিল্পকর্ম তৈরির আগে সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি গভীরভাবে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। রাজনীতি ও অর্থনীতি জানা না থাকলে কেউ প্রকৃত লেখক হতে পারেন না।”
শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’ ও ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের উদাহরণ টেনে তিনি দেখান, কীভাবে সাহিত্যে সময় ও সমাজের চিত্র প্রতিফলিত হয়। “শেক্সপিয়ার রাজতন্ত্র ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা আজও আমাদের সমাজে ঘটছে”, বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সমসাময়িক পরিস্থিতির বিশ্লেষণে বাদল শাহ আলম বলেন, “প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল, ইরান-ইসরায়েল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এসব আসলে খনিজ সম্পদ ও ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াই। এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের বোঝা দরকার, না হলে তাদের মূল্য চুকাতে হবে।”
ভারতের আদিবাসী ও মাওবাদীদের ওপর নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে তিনি অরুন্ধতি রায়ের লেখনী ও সক্রিয়তার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের বায়ান্ন, একাত্তর এবং সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের সময়ে লেখক-শিল্পীদের সক্রিয় অবস্থানও তুলে ধরেন।
রুশ বিপ্লবের প্রভাব নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এবং তিরিশের পঞ্চপাণ্ডব কীভাবে সেই প্রভাব আত্মস্থ করে নতুন সাহিত্যধারা তৈরি করেন, তা ব্যাখ্যা করেন তিনি। বিষ্ণু দের কবিতা ও তিরিশের আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে আসে তার আলোচনায়।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ও কিছু গান ও কবিতা রচিত হয়েছে, যদিও পরিমাণে তা অল্প। কিন্তু এই সময়েই সৃষ্টি হতে পারে কালজয়ী সাহিত্য, গান, চলচ্চিত্র।”
ঢাকা/হাসান/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব দল শ হ আলম পর স থ ত প রবন ধ র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীদের প্রত্যাখ্যানের আহ্
নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়রত দলগুলোকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন’ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আয়না ঘরের কারিগর, গুম-খুন, হত্যার দোসর খুনি হাসিনা ২৪-এর এই দিনে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। দেশের টাকা যারা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের উৎখাতে ছাত্র-জনতা যখন দেশের সব অলিগলিতে আওয়াজ তুলেছিল, আবু সাঈদ দু’হাত উঠিয়ে বুক পেতে দিয়েছিল। এমনকি মা-বোনেরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমেছিল, তখন মুগ্ধের ‘পানি লাগবে’ সেই আওয়াজ এখনো কানে ভাসে।”
তিনি বলেন, “এত ত্যাগ, এত রক্ত, এত জীবন দেওয়ার মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল আর কোনো স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, টাকা পাচারকারী, আয়না ঘর তৈরির কারিগরের জন্ম যেন না হয়। আমরা ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই সেসব ক্ষমতা লোভীদের, যারা চাঁদাবাজির মাধ্যমে, স্ট্যান্ড দখল, জায়গা দখল করে নতুনভাবে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায়রত। তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।”
“তারা কী শিশুদের আত্মচিৎকার শুনতে পায়নি? হাজার হাজার মায়ের কোল খালি হয়েছে, হাজারো মেধাবী ছাত্ররা শহীদ হয়েছে, পূর্বের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য? যারা বিগত দিনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের দেশবাসী পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায় না,” যুক্ত করেন আমির।
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “এদেশ আমার, এদেশকে সুন্দর করার দায়িত্বও আমার। আসুন সবাই মিলে সন্ত্রাস, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজদের উৎপাত করি। বিদেশি তাবেদারদের চিরতরে কবর রচনা করতে করি। সবাই একাকার হয়ে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাই।”
দলের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।
এছাড়া বক্তব্য দেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, মুফতী রেজাউল করীম আবরার, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, মাওলানা মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল মজুমদার, ছাত্রনেতা মুনতাসির আহমদ, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মুফতী মাছউদুর রহমান, যুবনেতা হাম্মাদ বিন মোশাররফ, শ্রমিকনেতা হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানিয়া।
মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ ও ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, আলহাজ্ব মনির হোসেন, আমিরুল হক, হাফেজ মাওলানা ইউনুছ ঢালী প্রমুখ।
অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ সেখ বলেন, “১ বছর পূর্বে শত শত মানুষ শহীদ হয়েছিল, মানুষের চোখের পানি ঝড়েছিল, স্বপ্ন ছিল একটি সুন্দর, স্বাধীন বাংলাদেশের। আমরাও আশাবাদী ছিলাম, যারা শাহাদাত বরণ করেছে, তাদের ক্ষমতার লোভ ছিল না, পদের লোভ ছিল না। তাদের চাওয়া ছিলো দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে। আসুন সবাই মিলে দেশটাকে ভালভাবে গড়ি। কিছু মানুষ চাচ্ছে দ্রুত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বৈধতা। ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মাদের মধ্যে পিআর-এর কোনো অনুভুতি জাগ্রত হয় না। সংস্কার ও গণহত্যার বিচার তারা চায় না।” তিনি পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল দেশকে নতুনভাবে গড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে জনআকাঙ্ক্ষার সঞ্চার হয়েছে। পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বে রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তন হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত হবে। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে।”
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুতপ্ত হওয়া উচিত। সব রাজনৈতিক দল মিলেও ফ্যাসিবাদী ও খুনি হাসিনাকে পদচ্যুত করা যায়নি। কিন্তু ছোট ছোট ছাত্ররা তাদের জীবনের বিনিময়ে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করেছে। সব কৃতিত্ব ছাত্র-জনতার। আজ যারা ছাত্রদের আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে, তাদের উদ্দেশ্য কেবলই ক্ষমতা।”
প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, “জুলাই আন্দোলনের আমাদের মিছিলে সরাসরি গুলি করে আমাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল ফ্যাসিবাদী হাসিনা। আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশগড়ার আন্দোলন গড়ে তুলেছি পুনরায় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নয়।” তিনি ছাত্র-জনতার চাওয়া পাওয়া বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, “ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য এবং খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার মৌলিক অধিকারের জন্য জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। যারা দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ান হয়েছে, তারা পরীক্ষিত শোষক ও জালেম। তাদের আমলেও মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। এরশাদ, হাসিনা ও খালেদা সবাইকেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করতে হয়েছে।”
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল মুফতি রেজাউল করীরে নেতৃত্বে বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব কদম ফোয়ারা হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
দুপুর আড়াইটা থেকে জুলাই বিপ্লবের ডকুমেন্টরি প্রদর্শন এবং জাতীয় সাংষ্কৃতিক সংগঠন কলরব, মানযিল, সুরের তরীর বরেণ্য শিল্পীদের কণ্ঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবশেষে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত জুলাই যোদ্ধাদের স্মরণে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম আলোচনা করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী