শিশুশ্রম থাকলে অর্থনৈতিক নৈতিকতা থাকে না: শারমীন মুরশিদ
Published: 21st, June 2025 GMT
কোনো সমাজে শিশুশ্রম থাকলে সেখানকার অর্থনীতির নৈতিকতা থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিনি বলেন, শিশুশ্রম সম্মানজনক নয়। এটি শিশুর অধিকার হরণ করে। দারিদ্র ও শিশুশ্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই শিশুশ্রম নিরসনে দারিদ্র বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না। রাষ্ট্র, সমাজ, প্রাইভেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
শনিবার ঢাকার এফডিসিতে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের’ শীর্ষক ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
শারমীন মুরশিদ বলেন, বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি আমাদের সব অগ্রযাত্রাকে উইপোকার মতো খেয়ে ফেলেছে। সে সময়ে প্রত্যেক প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যেন দুর্নীতি না করেন সেই প্রত্যাশা থাকবে।
তিনি বলেন, একটি স্বৈরাচার সমাজব্যবস্থার ভেতরে আমরা একটি সংবেদনশীল, যত্নশীল পলিসি প্রত্যাশা করতে পারি না। বিগত সরকার বাল্যবিয়ের মতো একটি সংবেদনশীল সামাজিক বিষয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করে ভয়ংকর উদাহরণ তৈরি করেছিল। ফলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমাদের দীর্ঘদিনের অর্জন টেকসই হয়নি। যেদেশে আইন করে যৌতুক ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যায়নি, সেদেশে শুধু আইন দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করা কঠিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে যে রকম লুটপাট করেছে তা আমদের সবার জানা। একইভাবে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের ছাপ রেখে গেছে বিগত সরকার।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বিগত আওয়ামী সরকার দুই দফায় বিভিন্ন প্রকল্পে যে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে, ব্যাপক দুর্নীতির কারণে তার সুফল পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের টাকা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী শিশু নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আয়বর্ধনমূলক কাজের জন্য নির্ধারিত টাকা প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা আশা করবো হাসিনা সরকার পালিয়ে যাবার পর ক্ষমতার পালা বদলে দুর্নীতির যেন পালাবদল না হয়। শিশুশ্রম নিরসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশি—বিদেশি অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ও আইএলও বাংলাদেশ অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং মন্ত্রিপরষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।
এই ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাবেক বিতার্কিক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা। তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হলে চলবে না। আমরা সবাই একসাথে কাজ করলে আগের মতো এবারও সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রশাসন সব ব্যবস্থা নিল, কিন্তু মানুষ যদি সচেতন না হন, এর সুফল সেভাবে পাওয়া যাবে না। তাই করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর। ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। একেবারে জরুরি না হলে মার্কেট, শপিংমল ত্যাগ করা উচিত। করোনার এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘর থেকে বের না করা উচিত। কারণ, মনে রাখতে হবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোও প্রস্তুত করা হচ্ছে। যেখানে যে সংকট আছে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে কোনটিতে সংক্রমণের হার বেশি, কেন আক্রান্ত হচ্ছে– সেসব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। শুরুতে কিছুটা সংকট থাকলে বর্তমানে তা অনেকটা কেটে গেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক পেতে আমি সার্বক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রাখছি।’ সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন ছড়াচ্ছে। ভারতের এনবি ১.৮.১ নামের নতুন ধরনটিও ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত ২৩ মে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এনবি ১.৮.১ ধরনটির সংক্রমণের হার তুলনামূলক বেশি এবং এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। নতুন এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সামান্য অবহেলা বড় মাশুল দিতে হতে পারে। তাই মাস্ক পড়া ও সচেতনতা বাড়ার বিকল্প নেই।’