অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
Published: 21st, June 2025 GMT
বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ইস্যু। এটি এখন আর কেবল শহরকেন্দ্রিক কোনো সমস্যা নয়, বরং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি বাস্তবতা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নগরায়ণ এবং ভোক্তা অভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে, যার পরিণতিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হলে ভবিষ্যতে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যখন দেখা যায় এই বর্জ্য জলাশয়, নদনদী, খাল-বিল এমনকি সাগরেও গিয়ে পৌঁছায়। এটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, জলজ প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং সামগ্রিকভাবে বাস্তুসংস্থান বিপর্যস্ত হয়। শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে বর্ষাকালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। একদিকে এটি যেমন জনদুর্ভোগ বাড়ায়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, এটি পরিবেশে শত বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে এবং সহজে পচে না। ফলে এটি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, যখন এই বর্জ্য পোড়ানো হয়, তখন তা থেকে বায়ুতে বিষাক্ত রাসায়নিক, যেমন– ডাইঅক্সিন ও ফিউরান ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করা মাইক্রোপ্লাস্টিক ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পরিবেশগত চাপে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে তা পরিবেশগত দুর্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। আজকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবেশগত সুরক্ষা ও পরিবেশগত বিধিমালা মেনে চলা বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাজারে প্রবেশাধিকার, মানসম্পন্ন মূলধন এবং ভোক্তাদের আস্থায় প্রবেশের জন্য অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগামী দিনে বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হয়ে উঠবে। পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে তাই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সঠিক কাঠামো ও বাস্তবভিত্তিক কৌশল না থাকায় দেশে এখন পর্যন্ত একটি সমন্বিত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই সংকট নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ও পরীক্ষিত ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ করা বিস্তৃত বেসরকারি খাতের জন্য সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ২০২২ সালে ইউনিলিভার, ইপসা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম নগরীতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এই উদ্যোগটি একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথক্করণ, রিসাইক্লিং এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় জনসাধারণ, বর্জ্য সংগ্রহকারীদের এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্পটি একদিকে যেমন প্লাস্টিক বর্জ্য কমাচ্ছে, অন্যদিকে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জুন ২০২২ থেকে এপ্রিল ২০২৫ সময়ে প্রকল্পটি প্রায় ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৬ হাজার ৮০ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (এসইউপি) এবং ৭,৯২০ টন রিসাইকেলযোগ্য রিজিট প্লাস্টিক। এই উদ্যোগ দেখিয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রয়াস থাকলে বাংলাদেশেও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতা অর্জন সম্ভব। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সার্কুলার বা চক্রাকার ইকোনমি মডেল গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করে পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত বর জ য স গ র জন য পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
ইউআইইউ মার্স রোভার টিমের অনন্য সাফল্য, শুনুন পেছনের গল্প
মমঙ্গল গ্রহের উপযোগী রোবট বানিয়ে ‘ইউআইইউ মার্স রোভার টিম’ ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বমঞ্চে টানা ছয়টি সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের পতাকাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। প্রতিটি সাফল্যের পেছনে রয়েছে অদম্য সংগ্রাম, অধ্যবসায় ও নিরলস পরিশ্রমের গল্প।
সাফল্য এসেছে আন্তর্জাতিক পরিসরেঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) ইউআইইউ মার্স রোভার টিম ২০২৫ সালের ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ (ইউআরসি) প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতার সায়েন্স মিশনে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ১০০-এর মধ্যে পূর্ণ ১০০ নম্বর পেয়ে এক বিরল রেকর্ড করে। তবে এই মঞ্চে এটি তাদের প্রথম অর্জন নয়। সাফল্যের ধারাবাহিকতা চলছে টানা পাঁচ বছর ধরে। একই বছরে অনুষ্ঠিত আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে (এআরসি) দলটি ১৮ ফাইনালিস্টের মধ্যে বিশ্বব্যাপী তৃতীয় এবং এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
যেভাবে শুরু২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের কয়েকজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় গঠন করেন ইউআইইউ মার্স রোভার টিম। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে তাঁরা বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার সাফল্য নিয়ে আসেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯৯টি দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ৩৬টি ফাইনালিস্ট দলকে পেছনে ফেলে এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বব্যাপী ১৩তম স্থান অধিকার করে দলটি।
২০২৩ সালে ১০৪টি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে, ৩৭টি ফাইনালিস্ট দলের মধ্য থেকে ইউআইইউ বিশ্বব্যাপী নবম ও এশিয়ায় আবারও ১ম স্থান অধিকার করে। এ ছাড়া ২০২৩ সালে তুরস্কে আয়োজিত আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় ১৯টি ফাইনালিস্ট দলের মধ্যে ইউআইইউ তৃতীয় এবং সিস্টেম বিভাগের ম্যাটেরিয়াল সিলেকশন চ্যালেঞ্জে বিশেষ পুরস্কার অর্জন করে।
২০২৪ সালে ১০২টি প্রাথমিক দল ও ৩৮ ফাইনালিস্টের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পঞ্চম ও এশিয়ায় আবারও চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। ছয়টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে প্রতিবারই এশীয় অঞ্চলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিরল রেকর্ড করেছে ইউআইইউ মার্স রোভার টিম।
ইউআইইউ মার্স রোভার টিমের বানানো রোবট