বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের প্রেক্ষাপটে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ইস্যু। এটি এখন আর কেবল শহরকেন্দ্রিক কোনো সমস্যা নয়, বরং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া একটি বাস্তবতা। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নগরায়ণ এবং ভোক্তা অভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে, যার পরিণতিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই বর্জ্য যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হলে ভবিষ্যতে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যখন দেখা যায় এই বর্জ্য জলাশয়, নদনদী, খাল-বিল এমনকি সাগরেও গিয়ে পৌঁছায়। এটি নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, জলজ প্রাণীর জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং সামগ্রিকভাবে বাস্তুসংস্থান বিপর্যস্ত হয়। শহরাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে বর্ষাকালে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। একদিকে এটি যেমন জনদুর্ভোগ বাড়ায়, অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।
প্লাস্টিক বর্জ্যের আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, এটি পরিবেশে শত বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে এবং সহজে পচে না। ফলে এটি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, যখন এই বর্জ্য পোড়ানো হয়, তখন তা থেকে বায়ুতে বিষাক্ত রাসায়নিক, যেমন– ডাইঅক্সিন ও ফিউরান ছড়িয়ে পড়ে, যা মানুষের শ্বাসযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে। খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করা মাইক্রোপ্লাস্টিক ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন পরিবেশগত চাপে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে তা পরিবেশগত দুর্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। আজকের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবেশগত সুরক্ষা ও পরিবেশগত বিধিমালা মেনে চলা বিশ্বব্যাপী রপ্তানি বাজারে প্রবেশাধিকার, মানসম্পন্ন মূলধন এবং ভোক্তাদের আস্থায় প্রবেশের জন্য অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগামী দিনে বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হয়ে উঠবে। পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে তাই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, সঠিক কাঠামো ও বাস্তবভিত্তিক কৌশল না থাকায় দেশে এখন পর্যন্ত একটি সমন্বিত প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই সংকট নিরসনে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ও পরীক্ষিত ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ করা বিস্তৃত বেসরকারি খাতের জন্য সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হবে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ২০২২ সালে ইউনিলিভার, ইপসা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম নগরীতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা। এই উদ্যোগটি একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথক্‌করণ, রিসাইক্লিং এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় জনসাধারণ, বর্জ্য সংগ্রহকারীদের এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্পটি একদিকে যেমন প্লাস্টিক বর্জ্য কমাচ্ছে, অন্যদিকে বর্জ্য সংগ্রহকারীদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
জুন ২০২২ থেকে এপ্রিল ২০২৫ সময়ে প্রকল্পটি প্রায় ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৬ হাজার ৮০ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (এসইউপি) এবং ৭,৯২০ টন রিসাইকেলযোগ্য রিজিট প্লাস্টিক। এই উদ্যোগ দেখিয়েছে, একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রয়াস থাকলে বাংলাদেশেও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতা অর্জন সম্ভব। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সার্কুলার বা চক্রাকার ইকোনমি মডেল গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করে পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত বর জ য স গ র জন য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা, ফরম পূরণের সময় বাড়ল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের প্রক্রিয়ার সময় ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ফরম পূরণের বর্ধিত সময়—

১. আবেদন ফরম পূরণের বর্ধিত তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫।

২. ডাটা এন্ট্রি নিশ্চয়নের শেষ তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত।

৩. সোনালী সেবার মাধ্যমে টাকা জমার শেষ তারিখ: ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে—

২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত, ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত ও গ্রেড উন্নয়ন এবং ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শুধুমাত্র Promoted শিক্ষার্থীরা ‘F’ গ্রেড পাওয়া কোর্সে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য—

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রেজিস্ট্রেশন করা অনার্স কোর্সের সকল ছাত্রছাত্রী ২০২৩ সালের অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে Promoted হয়ে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স সম্পন্ন করেছে তারা নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে অনার্স কোর্সের সিলেবাস ও সংশোধিত রেগুলেশন অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

আরও পড়ুনআয়ারল্যান্ড সরকারের বৃত্তি: মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ৮ ঘণ্টা আগেঅনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য—

২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থী অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে Not Promoted হয়েছে অথবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি ওই সব শিক্ষার্থী অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। Not Promoted শিক্ষার্থীকে আগের বছরের পাস করা কোর্সের পরীক্ষা দিতে হবে না। তবে যারা ২০২৩ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে প্রথমবারের মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ‘C’ বা ‘D’ গ্রেড পেয়েছে শুধুমাত্র তারাই ২০২৪ সালের পরীক্ষায় উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করার জন্য পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে সর্বোচ্চ দুটি কোর্সে এবং ‘F’ গ্রেড প্রাপ্ত সব কোর্সে পরীক্ষা দিতে হবে।

# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা ঢাবি হল সংসদ নেতাসহ ৬ শিক্ষার্থী
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা, ফরম পূরণের সময় বাড়ল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
  • রাকসু নির্বাচনে এক বিভাগ থেকেই ভিপিসহ ২২ প্রার্থী
  • বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন: রাশিয়া কেন নিষিদ্ধ, ইসরায়েল কেন নয়