Prothomalo:
2025-09-22@03:40:30 GMT

বাজেট কেন কাজ করে না

Published: 22nd, June 2025 GMT

আমরা জানি, বাজেট উপস্থাপন একাধারে আর্থিক পরিকল্পনা; আবার রাজনৈতিক অঙ্গীকারেরও বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এবারের ২০২৫-২৬ বাজেট এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে এসেছে। বৈশ্বিক মন্দা, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—দেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতা এ বাজেটকে অতীতের তুলনায় ভিন্নমাত্রায় মূল্যায়নের সুযোগ এনে দিয়েছিল।

কিন্তু সামগ্রিক পর্যালোচনায় এবারও বাজেট আমাদের জাতীয় পুঁজির সংবর্ধনের একটি নির্ভরযোগ্য রূপকল্প দিতে পারেনি। এখানে-ওখানে সামান্য কৃচ্ছ্রসাধনের ইঙ্গিত থাকলেও ভবিষ্যৎমুখী তৎপরতা নেই। আছে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগও, তবে অনেকটাই সোনার হাঁস মেরে ফেলার মতো এলোপাতাড়ি তৎপরতা। এতে জাতির ভবিষ্যৎযাত্রা কণ্টকমুক্ত হবে না।

৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এ বাজেট এখনো পরিস্থিতি ও ব্যয় বরাদ্দ বিবেচনায় উচ্চাভিলাষী। অঙ্কের এ বিশালতা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা এখনো মূল প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় যে দিকটি শুরুতেই আলোচনার দাবি রাখে, তা হলো রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা। এনবিআরের ওপর নির্ভর করে সরকার পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিগত তিন অর্থবছরের হিসাব দেখলে দেখা যায়, প্রতিবারই এই প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, কখনো প্রশাসনিক অদক্ষতা, কখনো করনীতির অস্বচ্ছতা, কর অব্যাহতি আবার কখনো করদাতাদের আস্থার অভাবের কারণে।

অথচ বাজেট বক্তৃতায় করকাঠামো সংস্কারের কোনো কার্যকর রূপরেখা এখনো দৃশ্যমান নয়। করের আওতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও কর আদায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রণোদনার পরিবর্তে বাধ্যবাধকতা আরোপ কিংবা কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যায়নি। অন্যদিকে সবাই বলছেন, মধ্যবিত্ত ও উঠতি মধ্যবিত্তের জন্য উচ্চ কর আদায় তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে সংকুচিত করবে।

ব্যয়ের খাত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাতে সন্দেহ নেই, অবকাঠামো উন্নয়ন একটি প্রয়োজনীয় ধারা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বলতা যখন প্রকট, তখন কেবল বরাদ্দ দিয়ে কতটুকু অগ্রগতি সম্ভব। বিগত বছরগুলোয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের হার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

বহু প্রকল্প সময়মতো শেষ হয় না, আবার প্রকল্প ব্যয়ের হিসাবেও স্বচ্ছতা নেই। নেই যথাযথ নজরদারি। উন্নয়নের নামে অনেক সময় দেখা যায় একটি পদচারী-সেতু বা ছোট একটি উপজেলা সড়ক তৈরিতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তা ঢাকার অভিজাত এলাকায় একটি চারতলা ভবন তৈরির সমান। ফলে প্রশ্ন আসে, উন্নয়ন ব্যয় আসলেই জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না।

মূল্যস্ফীতি এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক সংকট। গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, খাদ্যপণ্যে তা ১২ শতাংশেরও ওপরে। এ অবস্থায় শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত ও পল্লি এলাকার সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা কেবলই সংকুচিত হচ্ছে। বাজারে গেলেই বোঝা যায় মানুষ কীভাবে দিন পার করছে।

অথচ বাজেটের ভাষা এতটাই বিমূর্ত ও হিসাবনির্ভর যে সেখানে মানুষের ভোগান্তির বাস্তব চিত্রের কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। প্রস্তাবিত বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো নীতিগত বা অভিনব হস্তক্ষেপও নেই। নেই শহরে রেশনিং-ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব, নেই ভর্তুকিভিত্তিক গণপরিবহন বা আবাসন খাতে কোনো সরাসরি সহায়তা। উল্টো বরং গণপরিবহনে খরচ বাড়বে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে কিছু বরাদ্দ বাড়লেও তা মাথাপিছু সংখ্যার হিসাবে একেবারেই নগণ্য। গুণগত বরাদ্দ আর অনিয়মের কথা নাহয় আপাতত বাদই দিলাম।

দারিদ্র্যকে জোরে আঘাত করতে চাইলে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর সেটা করতে হলে করহার কমিয়ে কর খাতকে সম্প্রসারণেরও বিকল্প নেই। সেটা করতে হলে চাই সাহস, চাই অভিনব বাস্তবায়ন দক্ষতা আর রাজনৈতিক সুশাসন। এমনকি উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ভালো সমঝোতা।

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান, যা দেশের অর্থনীতির গতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি, সে ক্ষেত্রেও বাজেট আশাবাদী হলেও কার্যকর নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য বাজেটে করছাড়, ব্যাংকঋণে সহজ শর্ত কিংবা সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেমের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিনিয়োগকারীদের যেসব বাধার সম্মুখীন হতে হয়—জমি বরাদ্দ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা আর্থিক খাতে তারল্যসংকট, তা মোকাবিলায় কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে নেই।

সরকার কর্তৃক ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়লে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা, বিশেষ করে এসএমই উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হবেন। তার প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একই ছবি। দেশের রপ্তানিমুখী খাত, যেমন তৈরি পোশাক, চামড়া কিংবা তথ্যপ্রযুক্তিতে করছাড় রাখা হয়েছে, কিন্তু ডলার-সংকট, এলসি সংকোচন ও রপ্তানি আয়ের অর্থ দেশে পুনর্বিনিয়োগে জটিলতা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে বাজেটে নীরবতা অনেকটাই রহস্যজনক। যখন খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে বাজারে উদ্বেগ আর ঋণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি বারবার উঠে আসছে গণমাধ্যমে, তখন বাজেটে এ খাতে মৌলিক কোনো সংস্কার প্রস্তাব না থাকা হতাশাজনক। বরং ব্যাংকগুলোর মূলধনের ঘাটতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বচ্ছতার অভাব এবং গভর্ন্যান্স দুর্বলতা পরোক্ষভাবে স্বীকৃত হলেও কোনো সমাধানের পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে অর্থনীতির সব খাতের জন্য স্বল্প হারে সুদ এবং তারল্যের সরবরাহ নির্ভর করে একটি শক্তিশালী ব্যাংক-ব্যবস্থার ওপর।

বৈদেশিক খাতেও আমাদের সংকট কম নয়। রপ্তানি আয় তুলনামূলকভাবে কম, বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়লেও এখনো ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। রেমিট্যান্স, যা এক দশক ধরে আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তি ছিল, তা হুন্ডির প্রবণতা ও প্রণোদনার কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বাড়লেও আকাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে পারছে না। একই মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংকগুলোর হুন্ডি বা লুটপাট বন্ধ হওয়ায় রেমিট্যান্স বেশ বাড়লেও নতুন চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি নিয়ে তেমন কোনো বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেই। প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করতে হলে কেবল নগদ প্রণোদনা নয়; বরং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম, সহজ ট্রান্সফার চ্যানেল এবং হুন্ডির বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োজন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বাজেটের এই বিপুল অঙ্ক, উচ্চাভিলাষী রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয় পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তখনই সফল হয়, যখন তা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা বেশ কিছু কাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত-নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর, বেসরকারি খাতে ঋণ সংকুচিত হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা বরং সংকুচিত হচ্ছে। 

অর্থনীতির এই সংকটকালীন বাজেট হতে পারত একটি রূপান্তরকামী দলিল, যেখানে প্রশাসনিক সংস্কার, নীতি কার্যকরকরণ এবং জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপনের স্পষ্ট লক্ষণ থাকত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বাজেটের ভাষা অনেকটা পূর্বসূরিদের মতোই—সংখ্যার খেলা, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি অথচ কাঠামোগত পরিবর্তনের কোনো দৃশ্যমান রূপরেখা নেই। বাজেট বক্তৃতা যেন জনগণকে সন্তুষ্ট করার একটি কৌশল, বাস্তবায়নের ক্ষেত্র সেখানে গৌণ হয়ে পড়ে।

এই মুহূর্তে দেশের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি, যার ভিত্তি হবে তথ্য, বাস্তবতা ও জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে ব্যক্তি খাতকে যেকোনো মূল্যে উৎসাহিত করে জাতীয় পুঁজি গঠনভিত্তিক এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ। কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা, রপ্তানিমুখী নীতিসহায়তা এবং কর্মসংস্থানমুখী প্রণোদনা—এই সবকিছু একত্রে কাজ করলেই কেবল বাজেট সত্যিকার অর্থে দেশের অগ্রগতির সেতুবন্ধ হতে পারে।

দারিদ্র্যকে জোরে আঘাত করতে চাইলে কর্মসংস্থান বাড়িয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর সেটা করতে হলে করহার কমিয়ে কর খাতকে সম্প্রসারণেরও বিকল্প নেই। সেটা করতে হলে চাই সাহস, চাই অভিনব বাস্তবায়ন দক্ষতা আর রাজনৈতিক সুশাসন। এমনকি উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ভালো সমঝোতা।

মামুন রশীদ অর্থনীতি বিশ্লেষক

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব কল প ন ই র জন ত ক ক ঠ ম গত প রকল প ব যবস থ দ র বলত হ ত কর র অর থ র র জন ন র ভর র জন য বর দ দ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম নগরে নেতৃত্বশূন্য যুবদল, হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি। এক বছর পার হলেও নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নগরে সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে দলটি। কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

নেতা-কর্মীরা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কমিটি থাকলে দলের প্রার্থীদের জন্য ওয়ার্ড, থানা কমিটিসহ তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারণা চালানো সহজ হতো। এখন কমিটি না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগেই কমিটি ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয় নেতাদের পছন্দের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিটি গঠন করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।

২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল।

২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর চার মাসের মাথায় ঘোষণা করা হয় ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর থেকে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল।

কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মহানগর যুবদলের শীর্ষ দুই পদের জন্য প্রার্থীদের রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। পদ পেতে আগ্রহী অর্ধশতাধিক ব্যক্তি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা দেন। প্রার্থীরা এতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের ভূমিকা–সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করেছেন। পরের মাসের শেষের দিকে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।

আহ্বায়ক পদ পেতে রাজনৈতিক বৃত্তান্ত জমা দেওয়া কয়েকজন হলেন নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল হোসেন ও সাবেক সহসভাপতি শাহেদ আকবর প্রমুখ।

সদস্যসচিব পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন নগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি ফজলুল হক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এর মধ্যে এমদাদুল হককে গত ১২ জুলাই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তিনি দাবি করেছেন, পদপ্রত্যাশী হওয়ায় মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। কমিটির শীর্ষ পদের জন্য আরও আলোচনায় আছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ। নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পদে না থাকলেও দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সামনেও করব।’

নির্বাচনের আগেই কমিটি আসবে। সৎ, ত্যাগী ও দলের দুঃসময়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মূল্যায়ন হবে।—মীর হেলাল উদ্দীন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক, বিএনপি

নগর যুবদলের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, বর্তমানে কোনো কমিটি না থাকলেও তাঁরা দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু সাংগঠনিক কাজকে এগিয়ে নিতে নেতৃত্বের প্রয়োজন। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে নেতৃত্ব থাকা দরকার। কমিটি থাকলে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের প্রার্থীর জন্য ভোট চাইতে সুবিধা হবে। এরই মধ্যে বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠন উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কমিটি না থাকায় যুবদল পিছিয়ে রয়েছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে দলকে এগিয়ে রাখতে নির্বাচনের আগে কমিটি ঘোষণা করা দরকার জানিয়ে নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি শাহেদ আকবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে কমিটি থাকলে দলের কাজ আরও গতিশীল হবে।’

নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন যেহেতু কয়েক মাস পরে। আশা করা যায় এর আগেই কমিটি ঘোষণা হতে পারে।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই কমিটি আসবে। সৎ, ত্যাগী ও দলের দুঃসময়ে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মূল্যায়ন হবে।’

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটির যাচাই-বাছাই প্রায় শেষ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। আরও কয়েকটি জেলার কমিটিও পরিকল্পনায় রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ