চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এমন কিছু উদ্যমী তরুণরা দেখছে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। অক্লান্ত পরিশ্রম করছে সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে। চুয়েটের মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সংগঠন এন্ড্রোমিডা স্পেস অ্যান্ড রোবটিক্স রিসার্চ অর্গানাইজেশন (এসরো) তরুণদের স্বপ্নজয়ে সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা কাজ করছে মহাকাশ, রোবটিক্স, সাইবার নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। সুযোগ করে দিচ্ছে বিশাল আকাশ সম্পর্কে জানতে, কাছে থেকে দেখতে। বিগত সময়ে এই সংগঠন দেখিয়েছে তাদের গতিময়তা। বিগত এক বছরের মধ্যেই আয়োজন করেছে রকেট লঞ্চিং প্রকল্প, টেলিস্কোপ নির্মাণ প্রকল্প, রোবটিক্স কোডিং প্রতিযোগিতা, নো-কোড অ্যাপ তৈরির কর্মশালা, সার্কিট সলভিং অলিম্পিয়াড, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রোগ্রামিং শেখানোর ওয়েবিনারসহ নানা সেমিনার ও পার্টনারশিপ কার্যক্রম। বিশাল আকাশে বুক ভরে জ্বালানি নিয়ে ছুটবে রকেট– এই রকেট বানিয়েছে বাংলাদেশের কোন শিক্ষার্থী, তা দেখবে পুরো বিশ্ব। এমন স্বপ্ন থেকেই শুরু হয় চুয়েট এসরোর রকেট উৎক্ষেপণ প্রকল্প ‘স্টারল্যাপ’। অনেকদূর এগিয়েছে এই প্রকল্প। ইতোমধ্যে রকেট ডিজাইন, রকেট বডি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং ইঞ্জিন পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যেই আশা করা যাচ্ছে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করবে এই রকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনের একটি দল কাজ করছে এই রকেট নিয়ে। এসরোর প্রাক্তন সদস্য, দেশীয় কিছু কোম্পানি এবং এসরোর সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে এই প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে সলিড ফুয়েল ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে অ্যামেচার ধরনের রকেট। তবে ভবিষ্যতে আরও উন্নত ইঞ্জিন ব্যবহার করে তৈরি করা হবে অত্যাধুনিক মহাকাশে গমনোপযোগী রকেট। স্টারল্যাপের স্বপ্ন দেখছে শিগগিরই আন্তর্জাতিক রকেটবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘আমেরিকার রকেট্রি চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা, পাশাপাশি বাংলাদেশে রকেট শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া। এই সংগঠনের আরেকটি যুগান্তকারী প্রকল্প হলো টেলিস্কোপ তৈরির প্রকল্প। এই প্রকল্পে তৈরি হয়েছে একটি শক্তিশালী ডবসোনিয়ান মডেলের টেলিস্কোপ, যার নাম ASRROscop। সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত এই টেলিস্কোপটি প্রায় ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রমণ্ডলী পর্যবেক্ষণে সক্ষম বলে জানা গেছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে টেলিস্কোপটির মূল কাঠামোটি তৈরি হয়েছে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পিভিসি পাইপ দিয়ে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মিররের হোল্ডার দুইটিই থ্রিডি প্রিন্টেড, যা শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী মনোভাবের পরিচায়ক। ভিত্তির কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাইউড এবং টেলিস্কোপটিতে একটি ফোকাসার ও পাথফাইন্ডার যুক্ত করা হয়েছে, যা পর্যবেক্ষণের সুবিধা বাড়িয়েছে। টেলিস্কোপটির মূল লক্ষ্য হলো আকাশে থাকা বিভিন্ন জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণ করা ও গবেষণার জন্য মহাবিশ্বের ছবি সংগ্রহ করা। এই উদ্যোগের পেছনে ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফাহিম ফয়সাল শুভ, যিনি স্ব-উদ্যোগে প্রথমবারের মতো চুয়েটে টেলিস্কোপ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়া এই প্রকল্পে রয়েছে আরও ৬ জন সদস্য। এ ছাড়া ক্লাবটি রোবটিক্স কোডিং প্রতিযোগিতা, নো-কোড অ্যাপ তৈরির কর্মশালা, সার্কিট সলভিং অলিম্পিয়াড, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রোগ্রামিং শেখানোর ওয়েবিনারসহ নানা সেমিনার ও পার্টনারশিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এই প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

পেঁয়াজের কেজি ৮০–৮৫ টাকা, সবজিও চড়া

বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি।

করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।

গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। যেমন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা। এদিকে তিন সপ্তাহ ধরেই বাজারে আগের চেয়ে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে এ দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম ছিল।

ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা।চার মাস পর আবার মূল্যস্ফীতি বাড়ল

মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টানা চার মাস কমার পর মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জুনে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্ষা ও বন্যার মৌসুমের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

গত জুন মাসে দেশের যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল, তা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণ হলো, জুলাইয়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। শাকসবজির দামও ছিল চড়া।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এই সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ