ইরানে সরকার পরিবর্তন সহজ নয়, পরিণতিও অনিশ্চিত
Published: 23rd, June 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’-এর ইঙ্গিত দিলেও বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে ততটাই জটিল। এমনকি এর ফলাফলও ওয়াশিংটনের কল্পনার মতো নাও হতে পারে।
সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে।
সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন- ইরানে সরকার পতন হলেও এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েলপন্থি প্রশাসনের গঠন কোনোভাবেই নিশ্চিত নয়। বরং এমন চরমপন্থি নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসতে পারে যারা আমেরিকা ও ইসরায়েলের হামলার জবাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দ্রুত পরমাণু বোমা তৈরির পথেও এগোতে পারে।
তাদের মতে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিহত হলে তাকে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হলেও পুরো শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। যা ইরানকে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে। এর ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার ঢেউ তুলতে পারে।
কোয়িনসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সহ-সভাপতি ত্রিতা পারসি সিএনএনকে বলেন, ‘ইরানি সেনাবাহিনীর কিছু অংশ যদি ক্ষমতা গ্রহণ করে, তাহলে যে ধরনের সরকার যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে, সেটি পাওয়া যাবে না। বরং আরও কঠোর ও রক্ষণশীল শাসন আসার আশঙ্কা থাকবে।’
ত্রিতা পারসি আরও বলেন, ‘ইরান এমন একটি দেশ যেখানে বহু বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে। শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে পড়লে এসব গোষ্ঠী সুযোগ নিয়ে দেশটিকে আরও বিভক্ত ও অস্থির করে তুলতে পারে।’
পারসি বলেন, ‘শাসনব্যবস্থার পতন মানেই হচ্ছে রাষ্ট্রের পতন, যার পরিণতিতে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, তা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আজীবনের জন্য নির্বাচিত হন ৮৮ সদস্যবিশিষ্ট এক্সপার্ট অ্যাসেম্বলির মাধ্যমে। তবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো উত্তরসূরির নাম ঘোষণা করেন না।
তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, খামেনি নিহত হলে তার উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনার জন্য তিনজন জ্যেষ্ঠ ধর্মগুরুর নাম ইরানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনায় আছে বলে দাবি করেছেন দেশটির তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শাসন পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যতটা অনিশ্চিত, ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ—যেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ বিভাজন, চরমপন্থার উত্থান ও আঞ্চলিক অস্থিরতা একসঙ্গে দেখা দিতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম র ক ন য ক তর ষ ট র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ২১ জুলাইকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ পালনের দাবি
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই দিনটিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন করার দাবি জানিয়েছে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবার। এ ছাড়া তারা বলেছে, নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদাসহ প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।
হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে—ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের কবর সংরক্ষণ করতে হবে। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে উত্তরায় একটি মসজিদ নির্মাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন দুর্ঘটনায় নিহত নাজিয়া ও নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর যখন বাচ্চাদের পেয়েছেন, তখন তাঁরা তাদের চিনতে পারেননি। অনেক দিন হলো তাঁরা ঘরে রান্না করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, কারও সঙ্গে দেখা করেন না।
নিহত সবাইকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবির প্রসঙ্গে আশরাফুল ইসলাম বলেন, শুধু পাইলট আর শিক্ষক শহীদ হতে পারেন না। সবাই শহীদ। সবাই ইউনিফর্ম পরা ছিল। শিক্ষার্থীরা কেন বৈষম্যের শিকার হবে?
নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি না তা তাঁরা জানেন না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যাঁরা আর কখনো কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না, অথচ তাঁদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: দগ্ধ দুই শিশু চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বলে, তারা অবর্ণনীয় ট্রমার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। অনেকের জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি।
রেজাউল করিমের ছেলে সামিউল এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এই বাবা বলেন, তাঁরা ভালো নেই। দুই মাস ধরে তাঁরা ঘুমাতে পারেন না। এ দেশে এত মানুষ, তবু পাশে কি কাউকে তাঁরা পাবেন না? এই মুহূর্তে তাঁদের স্কুলের বারান্দায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন এখানে। সরকার তাঁদের পাশে আসেনি। চোখের সামনে ছেলেকে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি, যা ভুলতে পারেন না।
সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজাউল করিম। তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে একটা কপি পেয়েছেন। এরপর আর কারও কোনো যোগাযোগ নেই।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে১১ আগস্ট ২০২৫সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এই বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’
সানজিদা বেলায়েত আরও বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামের এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে। তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তাঁরা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?
আরও পড়ুনবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যা যা জানা গেল২১ জুলাই ২০২৫আহত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সানজিদা বেলায়েত। তিনি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি জানান।
আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন বলেন, তাঁদের কান্না শুকিয়ে গেছে। সরকারের কাউকে তাঁরা পাশে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।
গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ছিল। আহত হয় অনেকে।
আরও পড়ুনউত্তরায় মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা তদন্তে সরকারের কমিশন গঠন২৭ জুলাই ২০২৫