উৎসমুখ ভরাট, ভরা বর্ষাতেও ধু ধু বালুচর
Published: 23rd, June 2025 GMT
একটি চীনা প্রবাদ অনুযায়ী, ‘নদীকে না দেখলে নদীও তোমায় দেখবে না। আর নদী দেখা বন্ধ করলেই... সব শেষ।’ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন নদীর বর্তমান চিত্র দেখলে প্রবাদটির যথার্থতা উপলব্ধি করা যায়। এই ভরা বর্ষা মৌসুমেও খরস্রোতা পিয়াইনের বুকে বইছে খরা। একসময়ের প্রমত্তা পিয়াইন নদী এখন ধু ধু বালুচর। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিস্তৃত জনপদে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের অধিকাংশ পানি প্রবাহিত হতো পিয়াইন নদী দিয়ে। এ কারণে সচল নদীপথ হিসেবে এক সময়ে পিয়াইন নদীই সীমান্ত এলাকার লোকজনের ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল। বর্তমানে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে পিয়াইন নদী দিয়ে ভরা বর্ষা মৌসুমেও নৌকা নিয়ে চলাচল করা দুষ্কর।
উৎসমুখ ভরাট হওয়ায় পিয়াইন নদী এখন মৃতপ্রায়। দীর্ঘ সময় ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও নদীকে বাঁচাতে নেই কোনো উদ্যোগ। স্বাধীনতার আগে এমনকি পরেও পিয়াইন নদী নিয়ে নানা পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ অর্ধশত বছরেও আলোর মুখ দেখেনি পিয়াইন নদী প্রকল্প।
স্থানীয় সংগ্রামপুঞ্জির বাসিন্দা সিলেট জেলা বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক স্টালিন তারিয়ান বলেন, ‘বহু বছর আগে পিয়াইন নদীতে ছিল ভরা যৌবন। নদীর বুক চিরে স্বচ্ছ জলের ধারা বয়ে যেত। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা পিয়াইনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেন। নদীর পানি নানান কাজে ব্যবহার করতেন আশপাশের বাসিন্দারা। এখন পিয়াইন মরে গেছে। নদীটি বাঁচাতে কারও কোনো তৎপরতা নেই।’
পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক
রঞ্জন দাশ জানান, সুরমা ও কুশিয়ারা খনন প্রকল্পের সঙ্গে পিয়াইন নদীর ২৪ কিলোমিটার খনন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে পিয়াইনসহ অন্যান্য নদনদী খনন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ শুরু হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ
এছাড়াও পড়ুন:
পেঁয়াজের কেজি ৮০–৮৫ টাকা, সবজিও চড়া
বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি।
করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। যেমন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা। এদিকে তিন সপ্তাহ ধরেই বাজারে আগের চেয়ে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে এ দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম ছিল।
ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা।চার মাস পর আবার মূল্যস্ফীতি বাড়লমূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টানা চার মাস কমার পর মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জুনে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্ষা ও বন্যার মৌসুমের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
গত জুন মাসে দেশের যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল, তা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণ হলো, জুলাইয়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। শাকসবজির দামও ছিল চড়া।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এই সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।