গাজীপুরের শ্রীপুর-টেংরা সড়কের চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শতাধিক মরা গাছের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান স্থানীয় লোকজনের জন্য আতঙ্কের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই এসব মরা গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ছে সড়কে, বাড়ছে ছোট-বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এমনকি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে গাছ পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনাও ঘটেছে। কৃষকের ফসলি জমি থেকে শুরু করে বাড়ির ছাদের ওপর পর্যন্ত হেলে আছে এসব মরা গাছ, অথচ আইনগত জটিলতার কারণে সেগুলো অপসারণ করা যাচ্ছে না। বিষয়টি হতাশাজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯৯৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বন বিভাগ কর্তৃক এ গাছগুলো রোপণ করা হয়। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে আকাশমণি, কড়ই, গর্জন ও ইউক্যালিপটাস। চার থেকে পাঁচ বছরে নানা সময়ে এসব গাছ মারা গেছে। কিন্তু গাছগুলো অপসারণে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় উপকারভোগীদের নিজেদের মধ্যে চলমান মামলা ও বন বিভাগের ছাড়পত্র না থাকা।

বন বিভাগ ও স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, উপকারভোগীদের দ্বন্দ্বের কারণেই গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। বন বিভাগের কর্মকর্তারা দুই পক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেও কোনো সমাধান করতে পারেননি। কারণ, কেউই ছাড় দিতে রাজি নন। অথচ এসব গাছের মূল্যের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ উপকারভোগীরাই পাবেন, বাকিটা পাবে বন বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা।

গাড়িচালক ছাড়াও স্থানীয় স্কুলশিক্ষক থেকে শুরু করে মুদিদোকানি, কৃষক—সবাই একবাক্যে স্বীকার করছেন, মরা গাছগুলো সড়কে তাঁদের চলাচলে প্রাণঝুঁকি তৈরি করেছে। একজনের ধানের জমিতে গাছ ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, অথচ সরকারি গাছ হওয়ায় তিনি নিজেও তা সরাতে পারছেন না। চরম অসহায়ত্বের মধ্যে পড়েছেন ওই ভুক্তভোগী।

একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়কে শতাধিক মরা গাছ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে আর প্রশাসন কেবল ‘দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা চলছে’ বলে দায় সারবে, তা সন্তোষজনক নয়। বন বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। উপকারভোগীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনে প্রয়োজনে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

আমরা আশা করব, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগ দ্রুত এই মরণফাঁদ অপসারণ করে শ্রীপুর-টেংরা সড়ককে নিরাপদ করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার

প্রথম আলো ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, সেদিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল, এখন তার বয়স ২৭ বছর। ভাবা যায়! আর ধরা যাক, প্রথম আলো প্রকাশের প্রথম সপ্তাহে ৭ বছরের যে শিশু গোল্লাছুটের ছবির ধাঁধা মিলিয়েছিল, এখন তার ৭ বছরের একটা সন্তান আছে। মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’

দেশে কিংবা বিদেশে, ঢাকায় কিংবা চট্টগ্রামে, রাজশাহী কিংবা যশোরে, যেখানেই যাই, কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন, হয়তো কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ করপোরেট অফিসার, কেউ এনজিও নেতা, কেউ অধ্যাপনা করছেন; এসে বলেন, ‘আমি তো প্রথম আলো পড়ি, শুধু তা-ই নয়, আমি বন্ধুসভার সদস্য ছিলাম।’ কেউ বলেন, ‘আমি তো আপনাদের জিপিএ–৫ সংবর্ধনায় গিয়েছিলাম।’ বিদেশ থেকে আসেন এমআইটি থেকে পাস করা উদ্যোক্তা বা বিজ্ঞানী, এসে বলেন, ‘আমি তো গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতাম, সে কারণেই আজ আমি এই জায়গায়।’

মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’

আনন্দ-বেদনার ঘটনাও ঘটে। বুয়েটের এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, লেখাপড়া তো অনিশ্চিত হলোই, জীবনই হয়ে গেল এলোমেলো। তাঁকে নিয়ে তাঁর মা আসতেন প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শসভায়। শিক্ষার্থী মাদকমুক্ত হলেন। পাস করে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারলেন। তাঁর মা এসে আমাদের বলেছিলেন, ‘প্রথম আলোর জন্য দোয়া করি, প্রথম আলো যেন বেহেশতে যায়।’ আবার প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তি পেয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেধাবী সন্তানেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম স্নাতক হিসেবে মেয়েরা চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে আবার প্যারিস কিংবা মন্ট্রিয়লে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, চাকরিও করছেন।

কিন্তু সবার আগে প্রথম আলো করতে চেয়েছে সাংবাদিকতা। দলনিরপেক্ষ থাকব, স্বাধীন থাকব, জনগণের পক্ষে থাকব, সত্য কথা সাহসের সঙ্গে বলে যাব—২৭ বছর আগে থেকেই এই ছিল আমাদের নীতি। প্রথম আলো প্রকাশের আগেও গল্প আছে। আমরা আরেকটা সংবাদপত্রে ছিলাম অনেকেই। সেই পত্রিকার উদ্যোক্তা তখনকার সরকারের এমপি নির্বাচিত হলেন। আমরা ভাবলাম, আমরা তো দলনিরপেক্ষ কাগজ করতে চাই। তখনই ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয় ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামের মধ্যস্থতায়। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে সব সময় স্মরণ করি। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিষয়ে কোনো দিন হস্তক্ষেপ করেননি, কোনো দিনও জানতে চাননি কী ছাপা হবে বা এটা কেন ছাপা হলো। শুধু উৎসাহ দিয়ে গেছেন।

মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমাকে পাঠিয়ো না’, ৯ বছরের শিশু কেন স্কুল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করল
  • দেখে এলাম চক্ষু মেলিয়া (শেষ পর্ব) 
  • পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার