নেপাল যারা যান, থামেলেই থাকেন। থামেল অনেকটা চকবাজারের মতো। হোটেল, রেস্ট হাউস, পানশালায় ভরপুর। রাস্তার দুই পাশে অজস্র দোকান। সবগুলো দোকান দেখতে প্রায় একই রকম। ফলে এ-গলি দিয়ে ঢুকে ও-গলি দিয়ে বেরিয়ে গেলে আবার একই গলিতে প্রবেশের আশঙ্কা আছে। পর্যটকেরা এখান থেকেই বেশি কেনাকাটা করেন। দোকানি করেন কচুকাটা। তারা জানেন কীভাবে পর্যটকদের সমাদর করে পকেট খসাতে হয়। অধিকাংশ দোকানেই বিক্রেতা নারী। পথেও নারীর আধিক্য চোখে পড়েছে। পাশ দিয়ে হুঁশ করে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। পোশাকে যথেষ্ট স্বাধীনচেতা, নম্রভাষী, শারীরিক গঠনে পরিশ্রমী। খাবার হোটেলগুলো পর্যন্ত সামলাচ্ছেন নারীরা। হু কেয়ারস!

থামেলের প্রতিটি দোকানে নেপালের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে উপজীব্য করে তৈরি করা মনোহর জিনিস পাবেন। বিশেষ করে গৌতম বুদ্ধ আর এভারেস্ট মাস্ট। ছোট্ট চাবির রিঙে খোদাই করা বুদ্ধ ধ্যানে মগ্ন। লকেটেও তাই, তিনি ঝুলছেন। জামা-কাপড়, হাতব্যাগে বুদ্ধ নেপালজুড়ে ঘরে বেড়াচ্ছেন ট্যুরিস্টদের সঙ্গে। অন্যদিকে পদে পদে এভারেস্টের আইকন। দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠবেন, রেস্ট মিলবে না। 

কিঞ্চিৎ উদাহরণ দিচ্ছি। নেপালে গিয়ে থালি খেতেই হবে। থালিতে পাঁপড় থাকবেই। পাঁপড়গুলো পর্যন্ত পর্বতশৃঙ্গের ন্যায় ত্রিভুজাকৃতির এবং অমসৃণ! রংটাও চূড়ায় পিছলে যাওয়া ভোরের সূর্যের আলোর মতো। শুভঙ্কর নন্দীনিকে বলেছিল সে চাইলে ‘পাহাড়গুলোকে পাঁপড়ভাজার মতো মরমরিয়ে’ খেয়ে ফেলতে পারে। পাঁপড়ের সঙ্গে পাহাড়ের সাদৃশ্য শুভঙ্কর এখান থেকেই পেয়েছিল কি না কে জানে! 

আরেকটি কথা, নেপালে পনির পাবেন প্রায় সব পদে। এমনকি পালং শাকেও! আর পাবেন বিভিন্ন পদের জিভে জল আনা মোমো। তবে যে থালির কথা বললাম, সেখানে ভাত ডাল শাক সবজি চাটনি পাঁপড় ছাড়াও আরেকটা জিনিস পেয়েছি- দই। পরিমাণে দুই আঙুলে উঠিয়ে তিনবার মুখে দেওয়ার মতো। বগুড়ার মানুষ অতটুকু বাটিতে দই দেখে তুলকালাম বাঁধালে দোষ দিলে অন্যায় হবে। তবে তাকে ঠান্ডা করতে হলে ঝটপট পাতে ডাল ঢেলে দিতে হবে। আহা! এমন স্বাদের ডাল খেয়েছি সেই ছেলেবেলায়। হ্যাঁ, কবুল করছি, নেপালে যে ক’দিন খেয়েছি আরাম করেই খেয়েছি। পেট একটুও বেগড়বাই করেনি। নো গ্যাস, নো এন্টাসিড। পানিটা শুধু বোতলজাত ছিল। পানশালার কথা উহ্য থাকুক। সে এক কাণ্ড বটে! 

কাঠমাণ্ডুতে মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান পাবেন না, এমনকি সিগারেটও নয়। তবে চা পান করে প্রাণ জুড়িয়েছে মাংকি টেম্পলে গিয়ে। এর আরেক নাম স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির। এটি কাঠমাণ্ডু থেকে পশ্চিমে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। খাগড়াছড়িতে আলুটিলা থেকে যেমন পুরো শহর দেখা যায়, এখান থেকে দেখা যায় কাঠমাণ্ডু। তবে সব ভুলে আপনাকে দেখতে হবে বানর দলের কর্মকাণ্ড। ঘাবড়াবেন না জনাব, তারা আপনাকে জ্বালাবে না। তারা ভদ্রতা একটু বেশিই জানে। স্থানীয়রাও দেখলাম তাদের যথেষ্ট মানে। তার চেয়ে বরং পাহাড় চূড়ায় মন্দিরের স্থাপত্য আপনাকে অনেক বেশি ঘাবড়ে দেবে। এতো সুন্দর স্থাপত্যশৈলী, এতো নির্জন চারপাশ, বানর-মানুষের সহাবস্থান, পর্যটকদের অপার কৌতূহল- এক কথায় অবিশ্বাস্য! কী করে তৈরি হলো, কেন হলো, কবে থেকে কারা করল- সব প্রশ্ন আপনাকে ঘিরে ধরবে এক লহমায়। 

আমরা এ সব কুমারদার উপর ছেড়ে দিলাম। টিকিট কেটে পাথরের ৩৬৫ সিঁড়ি ভেঙে মন্দিরে উঠে এলাম। নেপালে আরেকটি বিষয় চোখে পড়বেই তা হলো, স্থানীয়দের রঙিন প্রার্থনা পতাকা। এমনকি আমরা চুলে যে রঙিন লেইস ফিতা দেই সেগুলোও আমি নানা স্থানে বেঁধে রাখতে দেখেছি- গাছের ডালে, স্কুটির হ্যান্ডেলে, গাড়ির লুকিং গ্লাসে, এমনকি সাইকেলের চাকাতেও। 

চকিতে ফিরে তাকালাম মুরুব্বির ডাকে। তিনি মন্দিরের প্রেয়ার হুইল ঘুড়াবেন। আমাকে সেই ভিডিও করে দিতে হবে। তথাস্তু। বিনিময়ে পেলাম প্রাণ জুড়ানো সেই চা। পাহাড়ের ওপরে ফ্লাস্কে বিক্রি করছেন মধ্যবয়সী এক নারী। 

আসলে সাত দিন একটি দেশ দেখার জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। এ হলো নাকে-মুখে গুঁজে দেওয়ার মতো, স্বাদ তো বোঝা যায়ই না, অসাবধানে বিষম খেতে হয়, হজমেও অসুবিধা। কিন্তু কি করা! কুমারদা বুঝিয়ে দিয়েছেন সেদিন আমরা কোথায় কোথায় যেতে পারি। এর পরের গন্তব্য চন্দ্রগিরি পর্বত। এখানে কেবল কার রয়েছে। সেই কারে চেপে মেঘের ভেতর দিয়ে আধো আলোছায়াতে পর্বতের চূড়ায় উঠতে হয়। উফ্! কি রোমাঞ্চকর জার্নি! উঠছি তো উঠছি কত উপরে উঠছি জানি না। এই মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে চারপাশ। কেবল কারে কেবল ঝুলছি। একটু পরেই হুঁশ করে সরে গেল মেঘের দল। দাঁত কেলিয়ে বেরিয়ে এলো সূর্য। সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে তরতর গতিতে উঠছে কেবল কার। আমরা সেখানে মুখোমুখি বসে আছি। দুই চোখে গিলছি অপরূপ প্রকৃতি। মোবাইল ফোনে ফটাফট ছবি উঠছে। ডাইনে-বাঁয়ে, উপরে-নিচে ক্লিক ক্লিক ক্লিক।     

নেপাল আপনাকে সব দেবে- অ্যাডভেঞ্চার, রোমাঞ্চ, থ্রিল সব! উঁচু পাহাড়ে ট্রেকিং করতে চান? এভারেস্ট জয় করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন। পাহাড় থেকে লাফ দিতে চাইলেও সমস্যা নাই। বাঞ্জি আছে। পায়ে দড়ি বেঁধে অতো উঁচু থেকে চোখ-মুখ বুজে, দম বন্ধ করে, প্রাণ হাতে নিয়ে লাফিয়ে পড়াতেও যে আনন্দ আছে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আমি অবশ্য পুকুরের পাড় ধরে দৌড়ে এসে জলে লাফিয়ে পড়া মানুষ। কৈশরে এ কাজ অনেক করেছি। শিক্ষাও হয়েছে হাতেনাতে। ঝপাৎ করে পড়ায় বুকে ব্যথা লেগেছে। কানে জল ঢুকেছে। কানমলাও জুটেছে এন্তার। মা-বাবার সঙ্গে এখানে এলে তারা কখনও এ কাজ করতে দেবে না নিশ্চিত। তাহলে আর কী করা যেতে পারে? দড়িতে ঝুলে এক চূড়া থেকে আরেক চূড়ায় চলে যান। জিপলাইনিং আছে। খরস্রোতা ত্রিশূলী নদীতে জীবনবাজি রেখে অ্যাডভেঞ্চারে মেতে উঠতে চাইলে সে ব্যবস্থাও আছে। রাফটিং, কায়াকিং, সার্ফিং সব করতে পারবেন। না না, নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। ও দায়িত্ব ওদের। আপনার শুধু বুক ভর্তি সাহস আর পকেট ভর্তি টাকা থাকলেই হবে। 

এই যেমন প্যারাগ্লাইডিং; পাখির মতো ডানা মেলে আকাশে ভাসতে চাইলে প্যারাগ্লাইডিং করতে হবে। সারাংকোট হচ্ছে পোখরার বিখ্যাত প্যারাগ্লাইডিং স্পট। এই সারাংকোট থেকেই অন্নপূর্ণার চূড়া স্পষ্ট দেখা যায়। এ জন্য অনেকে ভোরবেলা এখানে আসেন। আমরা ঘুম নষ্ট করে ভোরে যাইনি। কারণ ও পর্ব আমরা নাগরকোটেই সেরে নিয়েছিলাম। সারাংকোটে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে মনে হবে শত শত রঙিন ফুল ভাসছে। আসলে তারা সবাই প্যারাগ্লাইডিং করা পর্যটক। এখান থেকে ফেওয়া লেকও দেখা যায়। এই লেক পোখরার আরেক আকর্ষণ! এ নিয়ে অন্য সময় বিস্তারিত লিখব। 

নেপালে গিয়ে চন্দ্রগিরির কথা ভুলে যাওয়া অন্যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই পাহাড়চূড়ার উচ্চতা ৮ হাজার ৩৫৬ ফুট। থামেল থেকে ১৬ কিমি দূরত্বে এর অবস্থান। কুমারদা গাড়ি থামালেন একটি গোল চত্বরের কাছে। বললেন, এখান থেকেই কেবল কারের টিকিট নিতে হবে। টিকিটের দাম একটু বেশিই মনে হলো; আসা-যাওয়া ১২০০ রুপি। সময় প্রায় দশ মিনিট। কিন্তু কারে ওঠার পর যে জার্নিটা শুরু হলো তার মূল্য টাকায় পরিমাপ করা সম্ভব নয়। যত উপরে উঠছি নিচে শহর ততই ছোট হচ্ছে। বড় বড় বিল্ডিংগুলো মনে হচ্ছে চারকোনা বিস্কুট। গাছগুলো তৃণসম। সবুজে আচ্ছাদিত চারপাশ। রোদ আছে। তবুও কোথা থেকে যে মেঘ এসে সবকিছু ঢেকে দিচ্ছে উপরওয়ালা মালুম। একবার ভাবুন, ৮ হাজার ফুট উপরে আপনি দড়ির ওপর ভরসা করে ঝুলছেন, হঠাৎ করেই অন্ধকারে চারপাশ দেখতে পাচ্ছেন না- মনের অবস্থা কেমন হতে পারে? আবার পরক্ষণেই মেঘ সরে গিয়ে সব ফক্ফকা!

এখানে বলে রাখি, উচ্চতায় যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয় তাদের সতর্ক হওয়াই ভালো। আমার পাহাড় থেকে নেমে আসার পরেও ঘণ্টাদুয়েক কানের ভেতর ভোঁ ভোঁ করেছে। কেউ যেন চটকনা দিয়ে বলছে- এত দিন এখানে আসিস নাই কেন বেকুব!

চন্দ্রগিরির চূড়ায় ‘ভোলেশ্বর’ মন্দির আছে। আরো আছে ভিউ টাওয়ার, রেস্টুরেন্ট এবং সুভ্যেনির শপ। আমরা শপ থেকে তিনটি গোরখা টুপি কিনলাম। আমাদের শীত করছিল। চারপাশটা ঠান্ডা। রেস্টুরেন্টের বারান্দায় বসে মুরুব্বি ওয়েটারকে ডাকলেন। এরপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, কী খাবি বল?

আমি সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এমনিতেই খাবি খাচ্ছিলাম! তার ওপর রেস্টুরেন্টের কাচের দেয়ালে কত কত যে বোতল সাজিয়ে রাখা! এই শীতে; হ্যাঁ এই শীতে ওই হলো মোক্ষম দাওয়াই।  

নেপালে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি- যে কোনো স্থাপত্যের ইতিহাস তারা স্থানীয় ও ইংরেজি ভাষায় লিখে রেখেছে। সংরক্ষণে জোর দিয়েছে। ভেঙে নতুন করে তৈরি করেনি। এমনকি রং পর্যন্ত অক্ষুণ্ন রেখেছে। ভক্তপুরের কথাই যদি বলি, একসময় নেপালের রাজধানী ছিল। কি চমৎকার সাজানো শহর; এখনও! যেন পর্যটকদের জন্যই সেজেগুজে বসে আছে। তবে যেখানেই যান মূল্য দিতে হবে। এখানেও ব্যতিক্রম হলো না। প্রবেশমূল্য ৫০০ রুপি। শহরটি মধ্যযুগীয় শিল্পসাহিত্য, কাঠের কারুকাজ, ধাতুর তৈরি মূর্তি ও আসবাবপত্রের জাদুঘর বলে পরিচিত। কাঠমাণ্ডুতে বৌদ্ধ মন্দির আর হিন্দুদের মন্দিরের অপূর্ব সমন্বয় দেখেছি। থামেলের মোড়ে মোড়ে দেখেছি মন্দির। এমনকি একেকটি বিগ্রহ এমনও দেখেছি, একহাত লম্বা। মাথার ওপর ছাউনি পর্যন্ত নেই। রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে। একেবারেই অরক্ষিত রাস্তার পাশে বসিয়ে রাখা। কিন্তু কারো কোনো বিকার নেই। কেউ এতটুকু অসম্মান করছে না। চলতি পথে যার মনে হচ্ছে ঠুস করে প্রণাম ঠুকছে। 

ভক্তপুরেও তাই দেখলাম। ভালো করে লক্ষ্য না করলে বোঝারই উপায় নেই কোনটি কার মন্দির। রাজপ্রাসাদও দেখলাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কাঠে খোদাই করা অপূর্ব কারুকাজ! প্রাচীন কৃষিভিত্তিক জীবনযাপনের ছোঁয়া পাওয়া যাবে সেখানে। কর্তৃপক্ষ কিছুই মুছে ফেলার চেষ্টা করেনি। এমনকি আপনি যদি সেখানে কুমার পাড়ায় গিয়ে ওদের সঙ্গে মাটির তৈজসপত্র বানাতে চান সে ব্যবস্থাও আছে। মুরুব্বি ওদের সঙ্গে বসে গেলেন। চেষ্টা করলেন মাটির প্রদীপ বানানোর। আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। এখানে ‘আমরা’ বলতে ভীষ্ম উপ্রেতি সঙ্গে আছেন। সজ্জন পুরুষ। পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। ওই যে, যার কল্যাণে চুঙ্গিঘর থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছিলাম। নেপালের নামকরা কবি। তিনি ভক্তপুরের প্রাচীন ইতিহাস, নিদর্শন সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। আমরা দেখে ধন্য হলাম। মুগ্ধ হলাম তার আতিথেয়তায়। 

পঞ্চম দিন আমি লক্ষ্য করলাম, ঘুরে বেড়াতে আমরা কেউই আর আগ্রহ পাচ্ছি না। কত ঘুরে বেড়ানো যায়! শরীর মহাশয়ও সিগনাল দিচ্ছে। মুরুব্বি বললেন, তিনি ফুট ম্যাসাজ করাবেন। তাছাড়া ষষ্ঠ দিনটি আমরা রেখেছিলাম কেনাকাটার জন্য। কুমারদাকে বললাম, তিনি পাইকারি বাজার দেখিয়ে দিলেন। আমরা তাকে বলেই নিয়েছিলাম, আমরা শেষ দিনটি পায়ে হেঁটে ঘুরব। 

নেপালে গেলে পর্যটক প্রথমেই যে জিনিসটি কেনেন তা হলো নেপালি টুপি। যে কোনো দোকানে পাওয়া যায়। আসার দিন সিগন্যালে ফুটপাতেও বিক্রি হতে দেখেছি। একদাম একরেট- দুইশ রুপি। আমরা পাইকারি দোকান থেকে কিনলাম একশ রুপি করে। কিন্তু ছড়কট বাঁধল সিঙ্গিং বোল কিনতে গিয়ে। পছন্দ হলে দামে মেলে না, দামে পর্তায় হলে পছন্দ হয় না। দোকানে এতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি যে, দুদিনেই সুর তোলা শিখে গেছি। ভাগ্যিস দোকানি বলেনি, সুর তোলা তো শিখেই গেছেন, বোল কিনে আর কী করবেন? তারপরও একটি কিনেছি। আর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি অফুরন্ত বিস্ময়! সবসময় সঙ্গেই থাকে। (শেষ)  
 

ঢাকা/তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক বল ক র মন দ র র ওপর আপন ক

এছাড়াও পড়ুন:

পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার

প্রথম আলো ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, সেদিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল, এখন তার বয়স ২৭ বছর। ভাবা যায়! আর ধরা যাক, প্রথম আলো প্রকাশের প্রথম সপ্তাহে ৭ বছরের যে শিশু গোল্লাছুটের ছবির ধাঁধা মিলিয়েছিল, এখন তার ৭ বছরের একটা সন্তান আছে। মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’

দেশে কিংবা বিদেশে, ঢাকায় কিংবা চট্টগ্রামে, রাজশাহী কিংবা যশোরে, যেখানেই যাই, কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন, হয়তো কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ করপোরেট অফিসার, কেউ এনজিও নেতা, কেউ অধ্যাপনা করছেন; এসে বলেন, ‘আমি তো প্রথম আলো পড়ি, শুধু তা-ই নয়, আমি বন্ধুসভার সদস্য ছিলাম।’ কেউ বলেন, ‘আমি তো আপনাদের জিপিএ–৫ সংবর্ধনায় গিয়েছিলাম।’ বিদেশ থেকে আসেন এমআইটি থেকে পাস করা উদ্যোক্তা বা বিজ্ঞানী, এসে বলেন, ‘আমি তো গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতাম, সে কারণেই আজ আমি এই জায়গায়।’

মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’

আনন্দ-বেদনার ঘটনাও ঘটে। বুয়েটের এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, লেখাপড়া তো অনিশ্চিত হলোই, জীবনই হয়ে গেল এলোমেলো। তাঁকে নিয়ে তাঁর মা আসতেন প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শসভায়। শিক্ষার্থী মাদকমুক্ত হলেন। পাস করে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারলেন। তাঁর মা এসে আমাদের বলেছিলেন, ‘প্রথম আলোর জন্য দোয়া করি, প্রথম আলো যেন বেহেশতে যায়।’ আবার প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তি পেয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেধাবী সন্তানেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম স্নাতক হিসেবে মেয়েরা চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে আবার প্যারিস কিংবা মন্ট্রিয়লে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, চাকরিও করছেন।

কিন্তু সবার আগে প্রথম আলো করতে চেয়েছে সাংবাদিকতা। দলনিরপেক্ষ থাকব, স্বাধীন থাকব, জনগণের পক্ষে থাকব, সত্য কথা সাহসের সঙ্গে বলে যাব—২৭ বছর আগে থেকেই এই ছিল আমাদের নীতি। প্রথম আলো প্রকাশের আগেও গল্প আছে। আমরা আরেকটা সংবাদপত্রে ছিলাম অনেকেই। সেই পত্রিকার উদ্যোক্তা তখনকার সরকারের এমপি নির্বাচিত হলেন। আমরা ভাবলাম, আমরা তো দলনিরপেক্ষ কাগজ করতে চাই। তখনই ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয় ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামের মধ্যস্থতায়। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে সব সময় স্মরণ করি। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিষয়ে কোনো দিন হস্তক্ষেপ করেননি, কোনো দিনও জানতে চাননি কী ছাপা হবে বা এটা কেন ছাপা হলো। শুধু উৎসাহ দিয়ে গেছেন।

মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার