Samakal:
2025-09-23@19:59:56 GMT

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে কে জিতল

Published: 25th, June 2025 GMT

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে কে জিতল

মধ্যপ্রাচ্যে সদ্য শেষ হওয়া সংঘাতে জয়পরাজয় নির্ধারণ একটি জটিল বিষয়। ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র– সবাই মনে করে তাদের বিজয় হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিজয় কার বা কে পরাজিত হয়েছে, তা কিছু ঘটনায় স্পষ্ট হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে নিউইয়র্ক টামইস।

সোমবার সকালে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক করে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করেছে। তাছাড়া আগের সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের একের পর এক হত্যা করে। এতে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইরান আত্মরক্ষায় স্বাভাবিকভাবেই পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। 

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ঘোষণা দেয়। এ ক্ষেত্রে বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইজিআরসি) কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিকে বেছে নেয়। দুটি কারণে ইরান এই ঘাঁটিতে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। এক.

এটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। দুই. আইজিআরসি মনে করে, ঘাঁটিটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সমন্বয়ে জড়িত। তাছাড়া ইরানি কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, হামলায় ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রাখা যায়। 

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরান ‘কাতার ঘাঁটিতে হামলা আসন্ন’ এমন আগাম বার্তা দেয়। এর পর কাতার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করা হয়। মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করার পর ইরান সরকার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, আমরা শত্রুদের দেখিয়ে দিলাম, আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার যুগ শেষ হয়ে গেছে।  
কাতারের আকাশে যখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আলোর ঝলকানি দিচ্ছিল, তখন ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেশাত্মবোধক গান চলছিল। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের গৌরবের কথা ঘোষণা দিচ্ছিলেন উপস্থাপকরা। 

ইরানের নেতারা আশায় ছিলেন, প্রতিশোধমূলক হামলার ফলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে হামলা না করার জন্য চাপ দেবেন। 
কাতারে হামলার আগে ইরানের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, কোনো মার্কিন নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা ইরানের নেই। হতাহতের ঘটনা ঘটলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশোধ নিতে প্ররোচিত করতে পারে। 

ঘাঁটিতে হামলার পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরানের ছোড়া ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের ১৩টিই ভূপাতিত করা হয়েছে। একটি আঘাত হানলেও কোনো হতাহত নেই। ক্ষয়ক্ষতি খুবই কম হয়েছে। এমনকি আগে থেকে জানানোর জন্য ট্রাম্প ইরানকে ধন্যবাদও জানান। ট্রাম্প বলেন, আশা করি ইরানের মনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আর কোনো ঘৃণা নেই।       

এর পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার সকালে তা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েল উভয়ের সমালোচনা করেন। 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানের পরিচালক আলি ভায়েজ মনে করেন, প্রতিটি পক্ষই জয়ের জন্য যুক্তি তুলে ধরতে পারে। তাদের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি এড়ানো। যুক্তরাষ্ট্র বলতে পারে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল বলতে পারে তারা ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। ইরান বলতে পারে তারা শক্তিশালী সামরিক শক্তিকে পিছু হটিয়ে দিয়েছে। 
যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে কিংবা ইরান এখন কী করতে পারে, সেই প্রশ্ন এখন বড়। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে– এর মানে এই নয় যে, শত্রুতা শেষ হয়ে গেছে।  

যুক্তরাষ্ট্র এখনও বুঝতে সক্ষম হয়নি ইরান কী পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। দেশটি আরও মজুতের সক্ষমতা রাখে কিনা তাও যুক্তরাষ্ট্রের জানা নেই। এ অবস্থায় ট্রাম্প আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবেন কিনা, এটাও বড় প্রশ্ন।  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন হাবিবুর

ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যদের চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান। পুলিশের নিজস্ব ওয়্যারলেসে (বেতারবার্তা) এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয় উল্লেখ করেছেন ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়্যারলেস অপারেটর মো. কামরুল হাসান।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুল।

গত বছরের ১৭ জুলাই ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন কামরুল। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁর ডিউটি (দায়িত্ব) ছিল। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওয়্যারলেসে (কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ান–১) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন হাবিবুর রহমান। তখন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বার্তাবাহক হিসেবে তিনি (কামরুল) ও তাঁর দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।

হাবিবুর রহমানের সেই ওয়্যারলেস বার্তার অডিও রেকর্ড জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে সেই অডিওটি দুবার শোনানো হয়।

সাক্ষী কামরুল হাসান জবানবন্দি দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?’

জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এটি মামলার আর্গুমেন্টের (যুক্তিতর্ক) জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে না ওপরে, সেটা অবান্তর।

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এ বিষয়টি ম্যাটার অব আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। উনি বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা যখন আর্গুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।

এ মামলায় গতকাল আরও দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁরা হলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এসআই (উপপরিদর্শক) কামরুল হোসাইন ও মো. আনিসুর রহমান। এ ছাড়া সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের এসআই মো. শাহেদ জোবায়েরের পুনঃ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আজ সাক্ষ্য দেবেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, হবে সরাসরি সম্প্রচার

ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার (আজ) সাক্ষ্য দেবেন। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলা তদন্তের সময় শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ জব্দ করেছেন, সেই ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হবে।

উত্তরা ও সিলেটের মামলায় প্রতিবেদন

দাখিলের সময় বাড়ল

গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২২ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল–১। এই মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১০ আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের সময় সিলেটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ