Samakal:
2025-08-09@10:44:26 GMT

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে কে জিতল

Published: 25th, June 2025 GMT

মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে কে জিতল

মধ্যপ্রাচ্যে সদ্য শেষ হওয়া সংঘাতে জয়পরাজয় নির্ধারণ একটি জটিল বিষয়। ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র– সবাই মনে করে তাদের বিজয় হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিজয় কার বা কে পরাজিত হয়েছে, তা কিছু ঘটনায় স্পষ্ট হয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে নিউইয়র্ক টামইস।

সোমবার সকালে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের বিষয়ে আলোচনার জন্য জরুরি বৈঠক করে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করেছে। তাছাড়া আগের সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের একের পর এক হত্যা করে। এতে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইরান আত্মরক্ষায় স্বাভাবিকভাবেই পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। 

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পর ইরান যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার ঘোষণা দেয়। এ ক্ষেত্রে বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইজিআরসি) কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিকে বেছে নেয়। দুটি কারণে ইরান এই ঘাঁটিতে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। এক.

এটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। দুই. আইজিআরসি মনে করে, ঘাঁটিটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সমন্বয়ে জড়িত। তাছাড়া ইরানি কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন, হামলায় ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রাখা যায়। 

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইরান ‘কাতার ঘাঁটিতে হামলা আসন্ন’ এমন আগাম বার্তা দেয়। এর পর কাতার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় ও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করা হয়। মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করার পর ইরান সরকার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। এক টেলিভিশন ভাষণে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, আমরা শত্রুদের দেখিয়ে দিলাম, আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার যুগ শেষ হয়ে গেছে।  
কাতারের আকাশে যখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আলোর ঝলকানি দিচ্ছিল, তখন ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেশাত্মবোধক গান চলছিল। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের গৌরবের কথা ঘোষণা দিচ্ছিলেন উপস্থাপকরা। 

ইরানের নেতারা আশায় ছিলেন, প্রতিশোধমূলক হামলার ফলে ট্রাম্প ইসরায়েলকে হামলা না করার জন্য চাপ দেবেন। 
কাতারে হামলার আগে ইরানের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, কোনো মার্কিন নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা ইরানের নেই। হতাহতের ঘটনা ঘটলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশোধ নিতে প্ররোচিত করতে পারে। 

ঘাঁটিতে হামলার পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরানের ছোড়া ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের ১৩টিই ভূপাতিত করা হয়েছে। একটি আঘাত হানলেও কোনো হতাহত নেই। ক্ষয়ক্ষতি খুবই কম হয়েছে। এমনকি আগে থেকে জানানোর জন্য ট্রাম্প ইরানকে ধন্যবাদও জানান। ট্রাম্প বলেন, আশা করি ইরানের মনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আর কোনো ঘৃণা নেই।       

এর পরই ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার সকালে তা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প ইরান ও ইসরায়েল উভয়ের সমালোচনা করেন। 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানের পরিচালক আলি ভায়েজ মনে করেন, প্রতিটি পক্ষই জয়ের জন্য যুক্তি তুলে ধরতে পারে। তাদের উচিত মধ্যপ্রাচ্যে একটি বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি এড়ানো। যুক্তরাষ্ট্র বলতে পারে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েল বলতে পারে তারা ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। ইরান বলতে পারে তারা শক্তিশালী সামরিক শক্তিকে পিছু হটিয়ে দিয়েছে। 
যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পরিস্থিতি কী হবে কিংবা ইরান এখন কী করতে পারে, সেই প্রশ্ন এখন বড়। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে– এর মানে এই নয় যে, শত্রুতা শেষ হয়ে গেছে।  

যুক্তরাষ্ট্র এখনও বুঝতে সক্ষম হয়নি ইরান কী পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। দেশটি আরও মজুতের সক্ষমতা রাখে কিনা তাও যুক্তরাষ্ট্রের জানা নেই। এ অবস্থায় ট্রাম্প আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেবেন কিনা, এটাও বড় প্রশ্ন।  
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি পাচ্ছেন না গাজীপুরের কাজ হারানো শ্রমিকেরা, কী করছেন তাঁরা

এক যুগের বেশি সময় বেক্সিমকোর পোশাক কারখানায় চাকরি করেছেন মনির শেখ। চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেক কারখানায় ঘুরেও চাকরি পাননি। বাধ্য হয়ে এখন সবজি বিক্রি করছেন। শুধু মনির শেখ নন, কাজ হারানো শ্রমিকদের অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন।

চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেক কারখানায় নতুন চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন মনির শেখ; কিন্তু যখনই কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, তিনি আগে বেক্সিমকোতে কাজ করেছেন, তখনই না করে দেয়। চাকরি জোটেনি; কিন্তু কিছু একটি তো করে পেট চালাতে হবে। সে জন্য এখন সবজি বেচে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

গত সপ্তাহের রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তী বাজার এলাকায় মনির শেখের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক শ্রমিক পেশা বদল করেছেন; অনেকে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বাস্তবতা হলো ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ গাজীপুরের ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৬টি শিল্পকারখানা নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প পুলিশের তথ্যানুসারে, চাকরি হারিয়েছেন ৭৩ হাজার শ্রমিক। অনেক শ্রমিক আগের চেয়ে কম বেতনে চাকরি পেলেও হাজার হাজার শ্রমিক এখনো বেকার। অনেকেই চাকরি না পেয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন; সবজি বিক্রি, ফেরি করে পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে নানা ধরনের পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।

যশোরের কোতোয়ালি থানার নূরপুর গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেন চক্রবর্তী এলাকায় মামুনের কলোনিতে ভাড়া থাকেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আট-নয় বছর বেক্সিমকোতে কাজ করছেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন। কিছুদিন হালচাষ করেছেন; কিন্তু সেই কাজ ভালো লাগেনি। এরপর স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে রেখে দুই মাস আগে নতুন চাকরি খুজেতে আসেন; কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন চাকরি পাচ্ছেন না।

একই কলোনির ভাড়াটিয়া আনিসুর রহমান বলেন, ‘নতুন চাকরি না পাইয়া এখন ফেরি কইরা জিনিসপত্র বিক্রি করতাছি। সংসার তো চালাইতে অইবো—কী করমু কন।’

গত ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থাভাবে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় রপ্তানিমুখী বেক্সিমকো গ্রুপের ১৩টি পোশাক কারখানা। বেকার হন এসব কারখানার ২৮ হাজার ৫১৩ শ্রমিক। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন শ্রমিকেরা।

গাজীপুর মহানগরের চক্রবর্তী এলাকায় বসবাস করে থেকে ১২ বছরের বেশি সময় বেক্সিমকোতে চাকরি করেছেন জামাল হোসেন। তিনি বলেন, কারখানায় যখন কাজ করেছেন, তখন স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন। ছেলেকে কারখানা এলাকায় একটি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্ট হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও কাজ পাচ্ছেন না। এই মাসে (আগষ্ট) চাকরি না পেলে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।

কলকারখানা, পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু বেক্সিমকো নয়, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে জুলাই পর্যন্ত গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৬টি কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ছয় মাসেই বন্ধ হয়েছে ৪১টি। বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকোর ১৩টিসহ মাহমুদ জিনস, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটিল ফ্যাশন, ক্ল্যাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলসসহ বিজিএমইএভুক্ত বড় ২০টি প্রতিষ্ঠান।

গত সপ্তাহের রোববার সকালে বেক্সিমকো কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, আগের সেই চিরচেনা হইচই নেই। মানুষের আনাগোনা একেবারেই কমে গেছে। আগে যেখানে শ্রমিকদের ভিড়ে সড়কে হাঁটা কঠিন ছিল, সেখানে এখন নীরবতা নেমে এসেছে। শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে এলাকায় শত শত বাড়িঘর তৈরি করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। এখন প্রায় সব বাড়িতেই ঝুলছে ‘বাসা খালি আছে’ নোটিশ। অধিকাংশ বাড়িঘরই এখন খালি পড়ে আছে।

স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, আগে যেখানে সারা দিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হতো, এখন সেখানে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। সারা দিনই বসে বসে কাটাতে হয়। আরেক ব্যবসায়ী শংকর চন্দ্র পাল বলেন, মাসের বেতনের সময় হলে কয়েক ভরি গয়না বিক্রি হতো, এখন বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। টিভি আর মুঠোফোনে ভিডিও দেখে সময় পার করছি।

চক্রবর্তী এলাকার বাড়ির মালিক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাঁর কলোনিতে ৪৫টি কক্ষ আছে। আগে সব কক্ষেই ভাড়াটিয়া ছিলেন; কিন্তু এখন মাত্র সাতটি কক্ষে ভাড়াটিয়া আছে, বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এই অবস্থা এলাকার সব বাসায়। অনেকেই ব্যাংকঋণ নিয়ে বহুতল ভবন করেছেন। তাঁরা এখন ব্যাংকের ঋণও দিতে পারছেন না।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার মাহমুদ জিনস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। কারখানার শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নতুন চাকরি পাচ্ছেন না। পরে বাধ্য হয়ে এখন চন্দ্রা থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হলেও পেশা মনমতো হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে যাদের চাকরি চলে গেছে, তাঁদের বেশির ভাগই বেকার, অধিকাংশই গ্রামে ফিরে গেছে। অনেকেই ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এখনো যাঁরা কাজ করছেন, সেই সব শ্রমিকের মধ্যে ছাঁটাই আতঙ্ক আছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার আল মামুন শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ অনেকটাই কমেছে। তবে এখন কিছু কারখানায় নানা ধরনের জটিলতা আছে। যে কারণে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। আগে থেকেই টের পেয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হচ্ছে। ফলে সেভাবে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে না।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,  বন্ধ কারখানাগুলোর বেশির ভাগই কাজ না থাকা, কার্যাদেশ বাতিল ও আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ