বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের কড়া জবাব দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, নগর ভবন বন্ধ করে ১ কোটির বেশি নগরবাসীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে কিনা। এত নোংরামির পরও গত দেড় মাসে একবারও ভদ্রতার লাইন ক্রস করেননি বলে দাবি করেন তিনি। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে আইনি লড়াইয়ে জেতার পরও সরকারিভাবে শপথ হয়নি ইশরাক হোসেনের। এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। শপথ না হলেও নগর ভবনে যাচ্ছেন তিনি; তার নেতাকর্মীরা আন্দোলন করছেন; নগর ভবন দখন করে রাখছেন। 

এই অস্থিরতার জন্য আফিস মাহমুদকে দায়ী করে বক্তব্য দিচ্ছেন ইশরাক হোসেন। সর্বশেষ বুধবার (২৫ জুন) সকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে ইশরাক হোসেন তার পক্ষে আন্দোলন করা হাজার হাজার নগরবাসীর কাছে আসিফ মাহমুদকে ক্ষমা চাইতে বলেন।

আরো পড়ুন:

মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মব জাস্টিস’: তারেক রহমান

সরকারের উচিত ছিল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করা: এ্যানি

ইশরাকের এই হুঁশিয়ারির কিছু সময় পর নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে স্ট্যাটাস দেন আসিফ মাহমুদ। সেখানে ছয়টি প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

আসিফ মাহমুদ স্ট্যাটাসে লেখেন, “অকারণে আমার ছবিতে জুতা মারার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? গুজবকে কেন্দ্র করে আমার পিতাকে 'চালচোর' বলে শ্লোগান দেওয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? শুরুতেই সরকারপক্ষ থেকে সমাধান চেষ্টা যারা দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করে ভোগান্তির জন্য দায়ী তারা ক্ষমা চেয়েছে?”

এরপর তিনি লেখেন, “নগর ভবন বন্ধ করে ১ কোটির বেশি নগরবাসীকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? নগর ভবন দখলকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং আহত হওয়ার ঘটনায় কেউ ক্ষমা চেয়েছে?”

ইশরাক হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের জন্য তাকে বারবার ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে বলে বর্ণনা করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, “আমার পরিবারকে আক্রমণ, জবাই করার শ্লোগান (স্লোগান) দেওয়াসহ অব্যাহত মানহানির জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে?”

“কিন্তু আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে কারণ আমি বলেছি কয়েকজন নেতার প্ররোচনায় এই আন্দোলন হয়েছে। আমি সত্যি বলেছি এবং সত্যি যে বলেছি এটা তিনিও জানেন। তাঁকে যে ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে, ফর এ্যা বেটার ন্যাগোসিয়েশন ব্যবহার করা হয়েছে, তা তিনি ভালো করেই জানেন এবং আমার পরিচিত একাধিক ব্যক্তির কাছে স্বীকারও করেছেন,” বলেন আসিফ মাহমুদ। 

স্ট্যাটাসের শেষে তিনি লেখেন, “এত নোংরামি করার পরও গত দেড় মাসে একবারের জন্যও ভদ্রতার লাইন ক্রস করিনি। একবারও ব্যক্তি আক্রমণ করা কিংবা ছোট করে কথা বলিনি। আমার লড়াই, রাজপথ, রাজনৈতিক পথচলা কিংবা পরিবার কেউই আমাকে এই শিক্ষা দেয়নি। আমি ধৈর্য্য ধরেছি, জবাব দেইনি বলে যে এসব অন্যায় জবাবহীন থেকে যাবে এমনটা না। ইতিহাস সবাইকেই যার যার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়।”

এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংবাদ সম্মেলনে এসে ইশরাক হোসেন বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে ঘিরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আপত্তিকর মন্তব্য করায় তাকে নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।” 

তিনি বলেন, “একটি বেসরকারি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে ইশরাকের আন্দোলন হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার ঢাকার ভোটারকে চরম অপমান করা হয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে আন্দোলন করা ঢাকার এই জনগোষ্ঠীকে একটি বাক্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নাগরিক থেকে পশুর মর্যাদায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটার জন্যে তাকে অবশ্যই নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

ইশরাক বলেন, “আসিফ বলেছেন ইশরাককে ‘মিসগাইড' করা হয়েছে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। তিনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আমাকে চরমভাবে হেয় করেছেন। আমাদের ঢাকা নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনকে এভাবে অপমান করার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঢাকার অধিবাসীদের প্রতি চরম অবমাননাকর এই বক্তব্যর জন্যে তাকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

ইশরাক হোসেন বলেন, “আসিফ মাহমুদের নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লার একটি উপজেলার জনৈক বিএনপি নেতা আমাকে আন্দোলনে প্ররোচনা দিয়েছেন, অর্থ ও লজিস্টিক দিয়েছেন এবং তার (আসিফ মাহমুদ) কাছে নাকি প্রমাণ আছে। এই প্রমাণ আসিফ মাহমুদকে জাতির সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান ইশরাক। অন্যথায় তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।”

মূলত ইশরাকের এই বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ। 

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ড এসস স উপদ ষ ট ইশর ক হ স ন নগর ভবন উপদ ষ ট নগরব স র পরও সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দাবিতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় তাঁরা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।

মানববন্ধনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, স্থায়ী ক্যাম্পাসের ডিপিপি দ্রুত অনুমোদনের জন্য যদি সরকারের কাছে থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো আশ্বাস না পাওয়া যায়, তাহলে নির্ধারিত সময়ের পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপির অনুমোদন নিয়ে ক্রমাগত অবহেলা ও কালক্ষেপণে তাঁরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এ জন্য ২৪ জুলাই থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পৃথক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন, মহাসড়কে প্রতীকী ক্লাস, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে সরকারের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এর আগে আজ সকাল থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অর্ধবেলা প্রশাসনিক কর্মবিরতি দিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে প্রকল্পটি প্রস্তাবিত হয় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। এরপর সাতবার সংশোধনের পর সবশেষ ৫১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকায় নেমে আসে। প্রকল্প মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সংগীত ও ব্যবস্থাপনা নামে পাঁচটি বিভাগে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০ জন। সেই সঙ্গে আছেন ৩৪ জন শিক্ষক, ৫৪ কর্মকর্তা ও ১০৭ জন কর্মচারী। পৌর শহরের শাহজাদপুর মহিলা কলেজ, সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া ডিগ্রি কলেজসহ ভাড়া করা দুটি বাড়িতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কর্মদিবসে রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন
  • রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা