রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশের পর হিলির চাল গুদামে অভিযান
Published: 25th, June 2025 GMT
দিনাজপুরের হিলি বন্দরের চালের গুদামে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এসময় চাল মজুত করার অভিযোগে তিনটি গুদাম সিলগালা করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) সকালে পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এ ‘হিলি বন্দরের গুদামে গুদামে চাল মজুত, দামে ঊর্ধ্বগতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিকেলে অভিযান পরিচালিত হয়।
বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌর শহরে হাকিম মন্ডলের তিনটি গুদামে অভিযান পরিচালনা করেন হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো.
আরো পড়ুন:
ভাত পায়েস পোলাও পান্তা এক চালেই সব
‘বিনাধান-২৫ চাষ ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে’
হাকিমপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. সোহেল আহমেদ বলেন, “চাল-ডাল মজুতের সময় উত্তীর্ণ ও অবৈধভাবে ধান মজুত করায় তিনটি গুদাম সিলগলা করা হয়েছে। নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।”
তিনি বলেন, “এসব গুদামে ২৭১ মেট্রিক টন চাল, ৪৭ মেট্রিক টন মসুর ডাল ও প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন ধান মজুত রয়েছে।”
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় বলেন, “উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও পুলিশ নিয়ে গুদামগুলোতে অভিযান পরিচালনা করি। গুদামগুলোতে চাল এবং মসুর ডাল নির্দিষ্ট সময়ের বেশি সময় ধরে মজুত রাখা হয়েছে। যেসব ধান পাওয়া গেছে, এগুলো এখানে মজুত রাখার নিয়ম নেই। আমরা গুদামগুলো সিলগলা করেছি এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাদী হয়ে থানায় মামলা করবেন।”
ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউএনও অভ য ন কর মকর ত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
এসিল্যান্ড-ইউএনও-ডিসি অফিস, কোথাও মিলে না তথ্য
তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক কার্যালয়, উপজেলা ইউএনও কার্যালয় ও এসিল্যান্ড কার্যালয়ে তথ্য মিলছে না। বরং একই বিষয়ক আবেদন বিভিন্ন দপ্তরে করেও ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব এড়ানো, অস্পষ্টতা ও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রীতায় বারবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নাগরিকরা।
এমনকি রাইজিংবিডির মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জাহিদুল হক চন্দনও সেই ভোগান্তির শিকার। শুধু তাই নয়, তিন উপজেলায় হুবহু একই ভাষায় কপি-পেস্ট করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলেও তথ্যের নাগাল মেলেনি।
দায়িত্ব এড়ানো, অস্পষ্ট নির্দেশনা
২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইনে ঘিওর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি আবেদন করেন এ প্রতিবেদক। আবেদনে তিনি জানতে চান, ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিয়ম এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দাখিল হওয়া লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? এরপর শুরু হয় এক প্রশাসনিক বিড়ম্বনার চক্র।
১০ অক্টোবর ঘিওর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরজাহান আক্তার সাথী পত্র মারফত জানান, তথ্য জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৬ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আলীর কাছে আবেদন করেন এ প্রতিবেদক।
তথ্য না দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার রেহানা মজুমদার মুক্তি একপত্র মারফত জানান, সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান করে রেকর্ড রুম থেকে সহিমোহর কপি সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে কোথায়, কীভাবে এবং কত টাকা জমা দিতে হবে—সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেননি তিনি।
একই আবেদনের বিষয়ে আইন অনুসারে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ৫ ডিসেম্বর ঘিওরের ইউএনও আমিনুল ইসলামের কাছে আপিল করেন এ প্রতিবেদক। কিন্তু ইউএনও নিজেকে আপিল কর্মকর্তা স্বীকার না করে জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করতে বলেন। অথচ আইন অনুযায়ী ইউএনও নিজেই এসিল্যান্ডের সিদ্ধান্তের আপিল কর্মকর্তা।
অগত্যা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ফের আবেদন করেন এ প্রতিবেদক। আবারও সেই রেহানা মজুমদার মুক্তি পূর্বের মতো একই সিদ্ধান্ত দেন। শেষে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপিল করে মুঠোফোনে একাধিকবার জানানো সত্ত্বেও তথ্য প্রদানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সিংগাইর: উত্তর নেই, সিদ্ধান্ত ভিন্ন
একই দিনে, একই ধরনের আবেদন ২৯ সেপ্টেম্বর সিংগাইর উপজেলার এসিল্যান্ড বরাবরও করেন এ প্রতিবেদক। সেসময় দায়িত্বে ছিলেন সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আপিল করা হলে ৩ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার মেহদি ইমাম আপিলটি সিংগাইরের ইউএনও বরাবর দাখিলের পরামর্শ দিয়ে জবাব দেন।
মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুই সহকারী কমিশনার তথ্য অধিকার আইন নিয়ে দুটি ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিলেও কেউই তথ্য দেননি। পরে ৫ ডিসেম্বর সিংগাইর ইউএনও কামরুল হাসান সোহাগ বরাবর আপিল জমা দিলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা রেহেনা মজুমদার মুক্তি ও মেহদি ইমামের কাছ থেকে দুই ধরনের সিদ্ধান্ত এসেছে, যা স্পষ্ট করে দেয় প্রশাসনিক ঐক্যহীনতা ও আইন ব্যাখ্যার বিভ্রান্তি।
হরিরামপুরে ‘গোপনীয়তা’র আশ্রয়
ওই জবাবপত্রে তিনি জানান, যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তার সাথে অভিযোগকারীর গোপনীয়তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অভিযোগকারীদের অনুমতিপত্রসহ আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। কী একটা অবস্থা! আবেদনকারীকে অভিযোগকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। কারো সাথে কারো সিদ্ধান্তই মিলে না। পরে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর আপিল করা হলেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি।
তথ্য অধিকার আইনের ৭(১)(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার প্রশ্নে তথ্য প্রদান সীমাবদ্ধ হতে পারে, তবে এই ব্যাখ্যার প্রয়োগ ও প্রমাণের দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
তিন উপজেলায় হুবহু কপি-পেস্ট সিদ্ধান্ত
ঘিওর উপজেলার মতো দৌলতপুর, শিবালয় ও সাটুরিয়া উপজেলায়ও একই ধরনের আবেদন করেন এ প্রতিবেদক। এই তিন উপজেলায় তিনজন ভিন্ন এসিল্যান্ড—রজত বিশ্বাস (দৌলতপুর), এস এম ফয়েজ উদ্দিন (শিবালয়) এবং তানভীর আহমদ (সাটুরিয়া)- তিনজনই হুবহু একই ভাষায় কপি-পেস্ট করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এমনকি বাক্য গঠন, শব্দচয়ন ও বিরামচিহ্ন পর্যন্ত একই। এতে প্রশ্ন জাগে, ব্যক্তিগতভাবে তারা আদৌ আবেদনটি পর্যালোচনা করেছেন কিনা।
এভাবে একই ধরনের আবেদন একাধিক উপজেলা প্রশাসনে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত হয় কীভাবে? আবার কোথাও কোনো উত্তরই মেলে না, কোথাও দায় এড়িয়ে উচ্চ পর্যায়ে ঠেলেও দেওয়া হয়।
পুরো বিষয়টি নিয়ে তথ্য অধিকার বিশেষজ্ঞ ও এমআরডিআই'এর সিনিয়র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম হিল্লোলের সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তিনি বলেন, “যে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেগুলো রেকর্ড রুমের তথ্য নয়, দাপ্তরিক তথ্য। এসব তথ্য দপ্তর থেকে সরবরাহ করা উচিত ছিল। এছাড়া গোপনীয় তথ্য হিসেবে ব্যাখা করা হয়েছে, যা মোটেও সমীচীন নয়। চাহিত তথ্যগুলো জনস্বার্থমূলক প্রকাশযোগ্য তথ্য। উপজেলা ভিত্তিক পৃথক আবেদন হওয়ার পরেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে তারা যোগসাজশ করে তথ্য প্রদান করেননি। কর্মকর্তাদের এমন জবাব তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা বহন করে।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক। কোনো সরকারি কর্মকর্তা তথ্য প্রদান না করে যদি অস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেন, তা আইন লঙ্ঘনের শামিল। অথচ এখানে দেখা যাচ্ছে, একাধিক কর্মকর্তা তথ্য লুকাচ্ছেন, দায়িত্ব এড়াচ্ছেন অথবা একই সিদ্ধান্ত বারবার পুনরাবৃত্তি করছেন। এ ধরনের আচরণ শুধু তথ্য অধিকার আইনের চেতনার পরিপন্থীই নয় বরং কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (যুগ্ম সচিব) ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “তথ্য অধিকার আইনে তথ্য পাওয়া নাগরিক অধিকার। তথ্য অধিকার আইনের আওতায় প্রদানযোগ্য তথ্য না দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রদানযোগ্য তথ্য কেউ যদি তথ্য না দিয়ে থাকে বা কোথাও ব্যতয় ঘটে থাকে, তাহলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/এস