মাত্র এক মাস আগেও ইনস্টাগ্রামে নিজের কোটি ভক্তকে রোনালদো বলেছিলেন, “এই অধ্যায় শেষ। গল্পটা, এখনো লেখা বাকি।” অনেকেই ভেবেছিলেন, সৌদির ক্লাব আল-নাসরের সঙ্গে তার পথচলা বুঝি শেষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নতুন করে চুক্তি নবায়ন করে সেই অধ্যায়ে তিনি যোগ করলেন আরেকটি রোমাঞ্চকর পর্ব।

বিশ্বজুড়ে অসংখ্য প্রস্তাব এলেও পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই পর্তুগিজ সুপারস্টার থেকে গেলেন আল-নাসরেই। ট্রান্সফার বিশ্লেষক নিকোলো শিরার তথ্যমতে, রোনালদোর চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল এই গ্রীষ্মেই। তবে শেষমেশ সৌদি কর্তৃপক্ষ তার মতো একজন তারকাকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

গত মে মাসে তার ইনস্টাগ্রাম বার্তায় চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রোনালদো। শিরোনাম হয়েছিল—এটা তার শেষ মৌসুম। কিন্তু সৌদি প্রো লিগে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) ব্যাপক আলোচনার পর তাকে রাজি করাতে সক্ষম হয়। রোনালদোকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল আল-হিলাল ও আল-আহলির মতো ক্লাবগুলোও।

আরো পড়ুন:

কষ্টের জয়ে শেষ ষোলোতে ইন্টার, বরুসিয়াও নকআউট পর্বে

বার্ষিক বেতন ৪০ লাখ ডলার, রিয়াল ছেড়ে কোন ক্লাবে যাচ্ছেন মদ্রিচ?

২০২২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার পর সৌদিতে পাড়ি জমানো এই তারকা এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপা না জিতলেও ক্লাবটির সর্বোচ্চ তারকা হিসেবে ২০২৪-২৫ মৌসুমে ৪১ ম্যাচে ৩৫ গোল করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। যদিও আল-নাসর টেবিলের তৃতীয় স্থানে শেষ করেছে। চ্যাম্পিয়ন আল-ইত্তিহাদের থেকে ১৩ পয়েন্ট পিছিয়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলেও আলো ছড়িয়েছেন রোনালদো। নেশনস লিগে জার্মানি ও স্পেনের বিপক্ষে গোল করে নিজ দেশ পর্তুগালকে চ্যাম্পিয়ন বানান।

আর্থিক দিক থেকেও তিনি অনন্য। ফোর্বস-এর সর্বকালের সর্বোচ্চ আয় করা অ্যাথলেটদের তালিকায় শুধু ফ্লয়েড মে‌ওয়েদারের পেছনে আছেন রোনালদো। তার আল-নাসর চুক্তির আর্থিক মূল্য প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩.

৪ মিলিয়ন পাউন্ড, বছরে প্রায় ১৭৭ মিলিয়ন। এর মধ্যে ৬২ মিলিয়ন মূল বেতন, বাকি অংশ বাণিজ্যিক চুক্তি থেকে। তিনি হুপ, ভিডিও গেম ইউএফএল ও ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করছেন।

এ যেন রোনালদোর ক্যারিয়ারের গল্পে নতুন মোড়। যেখানে “শেষ” বলে কিছুই নেই, শুধু পরিবর্তন আর অভিযাত্রার নামেই চলে রোনালদোর যাত্রা।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

অস্বাভাবিক দ্রুততায় লালদিয়া পানগাঁও টার্মিনালের চুক্তি

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য বন্দরের সঙ্গে ডেনমার্কের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালসের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হবে আজ সোমবার। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এদিন সকালে এই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। অস্বাভাবিক দ্রুততায় এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

একই দিন বিকেলে একই স্থানে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল নিয়েও চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছর মেয়াদে পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তি হবে ৩৩ বছর মেয়াদি। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ থাকছে চুক্তিতে। এপিএম টার্মিনালস ডেনমার্কের মালিকানাধীন হলেও এটির নিবন্ধন নেদারল্যান্ডসে।

লালদিয়ার প্রকল্পে বাংলাদেশের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী (ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার) বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রতিবেদনে টার্মিনাল অপারেটরের (এপিএম টার্মিনালস) প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর চুক্তি পর্যন্ত কার্যক্রম শেষ করতে ৬২ দিন সময়সীমা ধরা হয়েছিল। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক দ্রুততায় মাত্র দুই সপ্তাহে এই কার্যক্রম শেষ করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সে সময় তাড়াহুড়া ছিল না। স্বাভাবিক গতিতে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। তবে ৪ নভেম্বর এপিএম টার্মিনালস লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দাখিলের পরই অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেয় বন্দর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

লালদিয়া চুক্তি
৪ নভেম্বর: এপিএম টার্মিনালসের প্রস্তাব দাখিল।
৫ নভেম্বর: কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন।
৬ নভেম্বর: আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন।
৯ নভেম্বর: বন্দর ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে নেগোসিয়েশন। (৭–৮ নভেম্বর ছুটির দিনে নেগোসিয়েশন হয়েছে বলে অভিযোগ)
৯ নভেম্বর: বন্দর বোর্ড সভায় অনুমোদন।
১০–১১ নভেম্বর: নৌপরিবহন ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন।
১২ নভেম্বর: অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় অনুমোদনের সুপারিশ।
১৬ নভেম্বর: প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদন।
১৬ নভেম্বর: এপিএম টার্মিনালসকে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান
১৭ নভেম্বর: চুক্তির দিন।
পানগাঁও নৌ টার্মিনাল চুক্তি:
৬ নভেম্বর:
কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন জমা।
৯ নভেম্বর: আর্থিক মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন জমা।
১০ নভেম্বর: বন্দর থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
১৭ নভেম্বর: চুক্তির দিন।

বন্দরের বিষয়ে অভিজ্ঞ দুজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, এই ধরনের চুক্তি খুব সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হয়। কারণ, চুক্তির কোনো শর্তের কারণে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত না হলে পরে তার খেসারত দিতে হতে পারে। যার বড় উদাহরণ রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জিবুতিতে। সেখানে ২০০৪ সালে একটি টার্মিনাল নির্মাণে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জিবুতির যে চুক্তি হয়, তার শর্তগুলো ছিল অপারেটরের অর্থাৎ ডিপি ওয়ার্ল্ডের পক্ষে। পরে জিবুতি সরকার চুক্তি বাতিল করলেও ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালত জিবুতি সরকারকে সুদসহ ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ এবং স্বত্ব বাবদ আরও ১৪৮ মিলিয়ন ডলার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

যেভাবে অস্বাভাবিক দ্রুততায় চুক্তি

জানা গেছে, ৪ নভেম্বর এপিএম টার্মিনালস কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। ৫ নভেম্বর প্রস্তাবের কারিগরি মূল্যায়ন করা হয়। আর ৬ নভেম্বর আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের পর ওই দিনই শুরু হয় দর–কষাকষি। বন্দর সূত্র জানায়, সরকারি ছুটির মধ্যে ৭ ও ৮ নভেম্বর শুক্র ও শনিবার দর–কষাকষি শেষ হয়। তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৯ নভেম্বর দর–কষাকষি শেষ হয়েছে।

একই দিন বন্দরের বোর্ড সভায় এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সভায় অনুমোদনের পর সারসংক্ষেপ একই দিন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরদিন তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আর ১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই প্রস্তাব তোলা হলে তা অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।

জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় অনুমোদনের সুপারিশে গতকাল রোববার চূড়ান্ত অনুমোদনে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর এপিএম টার্মিনালসের কাছে চুক্তির জন্য লেটার অব অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় গতকালই। লেটার অব অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পর চুক্তির জন্য সাধারণত দুই সপ্তাহ সময় থাকে। অথচ এ ক্ষেত্রে এক দিনের কম সময়ে চুক্তি হতে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

পানগাঁও চুক্তিও দ্রুত হচ্ছে

লালদিয়ার মতো পানগাঁও নৌ টার্মিনালের চুক্তিও দ্রুত সময়ে হচ্ছে। ৬ নভেম্বর পানগাঁও নৌ টার্মিনালের কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন জমা দেয় এ–সংক্রান্ত কমিটি। এরপর ৯ নভেম্বর আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হয়। পরদিন তা অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গতকাল পর্যন্ত দরপত্রের অন্যান্য ধাপের প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। অর্থাৎ কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের এক থেকে দেড় সপ্তাহের মাথায় সব প্রক্রিয়া শেষ করে চুক্তি হচ্ছে।

এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য মেডলগ এসএ ১০৮ কোটি টাকার আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে দর-কষাকষিতে করে তা প্রায় ১২১ কোটি টাকায় চূড়ান্ত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ২০১৩ সালে ১৫৬ কোটি টাকায় এই টার্মিনাল গড়ে তোলে।

তাড়াহুড়ায় সন্দেহ

লালদিয়ার দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির সব বিষয় প্রকাশ করার সুযোগ নেই। কারণ, এতে ‘নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ অর্থাৎ গোপনীয়তা বজায় রাখার অংশ রয়েছে। চুক্তির কতটুকু প্রকাশ করা হবে আর কতটুকু প্রকাশ করা হবে না, তা জানা যাবে চুক্তির দিন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গোপনীয়তা ও তাড়াহুড়া করে এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই চুক্তি জনগণের প্রতি গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া সরকারের চরম বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলার মতো জরুরি বিষয় বাদ দিয়ে বন্দর নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়া সন্দেহ তৈরি করে। এতে বোঝা যায়, বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা কমিশনভোগীদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

অবশ্য চুক্তি নিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা গত সপ্তাহে বন্দরে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের ক্ষতি করে কাউকে বন্দরের কোনো টার্মিনাল দেওয়া হবে না। চুক্তির পর চুক্তির বিষয়ে জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ