অন্তর্বর্তী সরকারের বাতিল করা ৩৭টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। প্রাথমিক অনুমোদনের এলওআই বা সম্মতিপত্র ইস্যুকৃত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো কোনোটিতে ইতোমধ্যে ৩০ কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা যাবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ উন্নয়নের চেয়ে এ-সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।

সোমবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনের বিদেশি বিনিয়োগের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ : অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব পরামর্শ দেন। যৌথভাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ-চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

রাজনৈতিক বিবেচনা ও অনিয়মের অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদন দেওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৩৭টি প্রকল্পের এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) অর্থাৎ ইস্যুকৃত প্রাথমিক অনুমতিপত্র বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৪টি দেশের অর্থায়নের এসব প্রকল্পের মধ্যে চীনের চারটি, সিঙ্গাপুরের সাতটি এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে একটি করে। এসব প্রকল্পে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের কথা ছিল। ইতোমধ্যে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, চীনের ব্যবসায়ী সংগঠন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি হান কুন, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক আবরার আহমেদ।
প্রবন্ধে বলা হয়, প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের পরে প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিপিডিবি, মন্ত্রণালয়, সরকারি কেনাকাটা সম্পর্কিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির মাধ্যমে এগোতে হয়। এই বাড়তি ছাড়পত্রের সময়সীমা বিনিয়োগকারীদের অনুৎসাহিত করে। ভারতে এসব বাস্তবায়নে যেখানে তিন-চার মাস সময় লাগে, সেখানে বাংলাদেশে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়। ফলে আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। নানান ধরনের নথি, একাধিক লাইসেন্স সার্টিফিকেট, তথ্যপ্রাপ্তিতে বাধা নবায়নযোগ্য বিনিয়োগের বড় চ্যালেঞ্জ।

বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি এই খাতের বাধাগুলো দূর করা যায় তাহলে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকার এলওআই ইস্যুকৃত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যে বাতিল করেছে, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীরা এখানে ৩০ কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ করেছেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ উন্নয়নের চেয়ে বিনিয়োগ সুবিধা বাড়ানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এ-সংক্রান্ত সব বাধা দূর করা দরকার। এ সমস্যার সমাধানে বিডাকে এগিয়ে আসতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সব সুবিধা নিশ্চিতে বিডা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। একাধিক লাইসেন্স জটিলতা নিরসনে সরকারকে কাজ করতে হবে। না হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে।

চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এশিয়ায় প্রায় ৫৫ শতাংশ চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য তাদের বিনিয়োগ আছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে উৎপাদনের যে লক্ষ্য, তা অর্জনে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নত করতে হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স রব দ য ৎ ব ত ল কর প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ুঝুঁকি মোকাবিলার উদ্যোগেও পাশে আছে ইস্টার্ন ব্যাংক

বিশ্ব এখন জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় ও সামাজিক বৈষম্যের মতো বড় সমস্যা মোকাবিলা করছে। এ কারণে টেকসই অর্থায়ন এখন শুধু একটি ধারণা নয়, বরং আর্থিক খাতের জন্য একটি বাস্তব ও জরুরি ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে ইস্টার্ন ব্যাংক গড়ে তুলেছে একটি দায়িত্বশীল ও কার্যকর টেকসই ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

এই অর্জন ইবিএলের জন্য শুধু গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনের প্রতি ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রমাণ। ইবিএল বিশ্বাস করে, টেকসই উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন মুনাফার পাশাপাশি পরিবেশ ও সমাজের দায়িত্বও সমানভাবে পালন করা হয়। এই বিশ্বাসকে ভিত্তি করে ইবিএল ধারাবাহিকভাবে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। 

জলবায়ুঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

ইস্টার্ন ব্যাংক বাংলাদেশে প্রথম ব্যাংক হিসেবে বার্ষিক প্রতিবেদনে টেকসই ও জলবায়ুবিষয়ক তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আওতায় ব্যাংকটি নিজস্ব কার্বন নির্গমন (স্কোপ–১ ও ২) ছাড়াও যেসব খাতে অর্থায়ন করেছে, সেগুলোর কার্বন নির্গমনের (স্কোপ–৩) তথ্যও পরিমাপ করছে। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদার হয়ে ইবিএল কার্বন ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। জলবায়ুঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে অর্থায়নের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশেষ করে, জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক (ডিইজি) ও জয়েন্ট ইমপ্যাক্ট মডেল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ব্যাংকটি তাদের অর্থায়ন পোর্টফোলিও থেকে সৃষ্ট কার্বন নির্গমন পরিমাপ করছে এবং তা কমানোর উপযোগী কৌশল গ্রহণ করছে। পাশাপাশি আইএফসির সঙ্গে অংশীদার হয়ে জলবায়ুঝুঁকি চিহ্নিত ও তা ব্যবস্থাপনার কাজও বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়া ডিএইচএলের গো গ্রিন প্লাস পরিষেবা ব্যবহারের মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংক বাণিজ্য নথি পরিবহনে টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল ব্যবহার করছে। এর ফলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমানো সম্ভব হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিংয়ের পথে এটি ইবিএলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মূল ব্যাংকিংয়ে টেকসই ও স্মার্ট কার্যক্রম

ইস্টার্ন ব্যাংক তার প্রধান কার্যালয়কে একটি পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন হেড অফিস’ হিসেবে গড়ে তুলেছে। এতে রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা, ১৬ কিলোওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সুবিধা ও প্লাস্টিকমুক্ত কর্মপরিবেশ রয়েছে।

অফিস পরিচালনায় ইস্টার্ন ব্যাংক ‘স্মার্ট এনার্জি’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এর আওতায় মোশন সেন্সর লাইট, সূর্যালোকের সর্বোচ্চ ব্যবহার, বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী এসি এবং হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঋণপত্র (এলসি) প্রক্রিয়া, ই-লার্নিং ও ই-সার্টিফিকেশন ব্যবহারের মাধ্যমে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। 

সামাজিক দায়বদ্ধতায় অগ্রণী পদক্ষেপ

ইস্টার্ন ব্যাংক কেবল অনুদানভিত্তিক করপোরেট সামাজিক দায়িত্বে (সিএসআর) সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজ উন্নয়নের কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকল্প নিতে চায়। যেমন ‘ইবিএল ক্লাইমেট অ্যাকশন অ্যাওয়ার্ডস’–এর মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীলতা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এমন পাঁচটি অনন্য উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া স্কুল ও কলেজে বৃক্ষরোপণ, বিভিন্ন অঞ্চলে চারা গাছ বিতরণ এবং ভাসানচরে ‘ফরেস্ট ফর দ্য ফিউচার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইবিএল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। একই সঙ্গে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে যৌথভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে কাজ করছে ব্যাংকটি। ইবিএলের টেকসই কার্যক্রম কেবল নীতিগত প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং এটি আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, পণ্য ও সেবায় বাস্তবভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তখনই সত্যিকারে সফল হয়, যখন তা বর্তমানকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এই বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইবিএল এগিয়ে যাচ্ছে।

তানভীর হাসান

পরিবেশ ও সামাজিক ঝুঁকি বিশেষজ্ঞ, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ, ইস্টার্ন ব্যাংক

সম্পর্কিত নিবন্ধ