ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের উজ্জ্বল মঞ্চে আবারও চমক! দুই বছর আগে ইউরোপ সেরার সিংহাসনে বসা ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় নতুন গল্প লিখে ফেলল সৌদি ক্লাব আল-হিলাল। অরল্যান্ডোর ক্যাম্পিং ওয়ার্ল্ড স্টেডিয়ামে নাটকীয় লড়াইয়ে পেপ গার্দিওলার দলকে ৪-৩ গোলে পরাস্ত করে একমাত্র এশিয়ান ক্লাব হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বার ছুঁয়ে ফেলল তারা।

যেখানে ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে ১৩ গোল করে প্রতিপক্ষদের চূর্ণ করে এসেছিল সিটি, সেখানে এক অবিচল সাহস আর সংগঠনের নির্ভরতায় সেই স্রোত থামিয়ে দিলো এক দল মরুভূমির যোদ্ধা। এই জয় শুধু শেষ আটের টিকিটই নয়, বরং এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। ইউরোপের ক্লাবকে হারিয়ে জয়ী প্রথম এশিয়ান ক্লাব এখন আল-হিলাল।

প্রথমার্ধেই সিটি যেন জানান দেয় কেন তারা চ্যাম্পিয়ন দল। মাত্র নবম মিনিটেই বার্নার্ডো সিলভার নিখুঁত শটে এগিয়ে যায় তারা। আক্রমণে সিটি ছিল আগুনের মতো ক্ষিপ্র, কিন্তু গোলবারের নিচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন ইয়াসিন বুনো। তার ১০টি দুর্দান্ত সেভ যেন ম্যাচের ছন্দ পাল্টে দেয়।

আরো পড়ুন:

হেরেও মাথা উঁচু মেসির, ‘আমরা চেষ্টা করেছি, গর্বিতভাবে ফিরছি’

ব্রাজিলিয়ান আগুন নিভিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই যেন নবজীবন পায় আল-হিলাল। ৪৬ মিনিটে মার্কোস লিওনার্দোর গোলেই সমতায় ফেরে তারা। এরপর ৫২ মিনিটে মালকমের গোলে আল-হিলাল উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু এই উৎসবে পানি ঢালেন হালান্ড। ৫৫ মিনিটে গোল করে ফের নিয়ে আসেন সমতা।

৯০ মিনিটে দুই দল সমানে সমান। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ের শ্বাসরুদ্ধকর উত্তাপে। ৯৪ মিনিটে কুলিবালির হেডে ফের এগিয়ে যায় আল-হিলাল। ১০৪ মিনিটে আবার ফিরে আসে সিটি, ফোডেনের দুর্দান্ত গোল যেন জাগায় আশার আলো।

তবে রাতটা ছিল লিওনার্দোর। ১১২ মিনিটে দ্বিতীয়বার জালের দেখা পেয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। গ্যালারিতে তখন সৌদি সমর্থকদের উল্লাস, চোখে জল; এ যেন শুধু এক ম্যাচ নয়, এক বিস্ময়কর স্বপ্নপূরণ!

এই ঐতিহাসিক জয়ের ফলে কোয়ার্টার ফাইনালে এখন আল-হিলালের প্রতিপক্ষ ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্স। যারা ইতোমধ্যে ইউরোপের রানার্স-আপ ইন্টার মিলানকে হারিয়ে এসেছে।

শুক্রবার রাত ১টায় দুই মহাদেশ, দুই সংস্কৃতি এবং দুই ফুটবল দর্শনের মাঝে হবে এক অনন্য দ্বৈরথ। এশিয়ার মরু আর লাতিন আগুনের যুদ্ধে কে হাসবে শেষ হাসি?

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল আল হ ল ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি না হলেও অগ্রগতি হয়েছে

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁদের বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিষয়ের মীমাংসা বাকি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরের এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে শুক্রবার দীর্ঘ এ বৈঠক শেষে পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন। চুক্তি ‘শেষ পর্যন্ত’ তাঁদের ওপর নির্ভর করবে এবং তাঁদের সম্মত হতে হবে।

চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা তা সেখানে পেলাম না।’

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তিনিও ‘আন্তরিকভাবে আগ্রহী’। এই যুদ্ধকে ‘ট্রাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য এই যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ নিরসন করতে হবে।

বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ইউক্রেন সংঘাত ছিল জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমাদের এই সংঘাতের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে হবে।’ তবে মূল কারণগুলো বলতে কী বুঝিয়েছেন, তার বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করেননি।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়রা শান্তিপ্রক্রিয়ায় বাধা না দেওয়ার পথ বেছে নেবেন বলে আশা করছেন তিনি।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুভ কামনার স্বর প্রকাশের জন্য আমি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকেই ফলাফলের দিকে নজর দিতে হবে।

পুতিন আরও বলেন, ‘ট্রাম্প স্পষ্টত তাঁর দেশের সমৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগী। তবে তিনি এটাও বুঝেছেন, রাশিয়ারও নিজের স্বার্থ রয়েছে।’

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য ইউক্রেনকে বিপুল আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। কার্যত রাশিয়াকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ‘একঘরে’ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বাইডেন প্রশাসন। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আসা রাশিয়া ইউক্রেনের একটি বড় অংশ দখল করে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনমন নিয়েও কথা বলেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে কোনো বৈঠক হয়নি। দুই দেশের সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

২০২০ সালের নির্বাচনের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার যে দাবি করে আসছেন, তার সঙ্গেও একমত জানিয়েছেন পুতিন।

এখন সংঘাত থেকে সংলাপে ফেরার সময় উল্লেখ করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বৈঠক আরও অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।

পুতিন জানান, তিনি ও ট্রাম্প বেশ কয়েকবার ‘খোলামেলা’ ফোনালাপ করেছেন। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ