জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ছুরিকাঘাতে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, দাম্পত্য কলহের জেরে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন তিনি। ঘটনার পরপর তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ওই গৃহবধূর নাম লাভলী আক্তার (৫০)। তিনি উপজেলার নামাপাড়া গ্রামের ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন লাভলী ও ওয়াহেদ দম্পতির মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এর জেরে গতকাল বুধবার সকালে নিজ ঘরে স্ত্রীর বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন ওয়াহেদ। পরে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় কয়েকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে লাভলীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ছুরিকাঘাতের ঘটনায় গতকাল বকশীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছিল। বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুই প্রসঙ্গে মার্গারেট অ্যাটউড

বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার অর্জন ফের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উত্থান ঘটছে জনতুষ্টিবাদের। বহুস্বর, বৈচিত্র্য এবং চিন্তার স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের ওপরও হুমকি ক্রমেই বাড়ছে। আর তা প্রায়ই প্রকাশ পায় বই ও প্রকাশনা নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে। একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে মতপ্রকাশ ও স্বাধীন চিন্তার ওপর দমন-পীড়নের প্রবণতা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, বিশেষ করে সাহিত্য, সাংবাদিকতা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে। এমন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ফ্রিডম টু পাবলিশ পুরস্কারটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক মার্গারেট অ্যাটউড মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার অক্লান্ত একজন সংগ্রামী হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। মার্গারেট অ্যাটউড একটি নিপীড়নমূলক সমাজব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে লিখেছিলেন বিখ্যাত ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেল। এখানে তিনি এমন একটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কথা বলেছেন, যেখানে ক্ষমতাহীন নারীদের জোর করে সন্তান ধারণে বাধ্য করা হয়। ডিস্টোপিয়ান এই উপন্যাস মূলত এক সতর্কবার্তা যা ধর্ম, রাষ্ট্র আর পুরুষতন্ত্রের নিপীড়নের চূড়ান্ত রূপের সামনে পাঠককে এনে দাঁড় করায়। যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে সবচেয়ে বেশি আপত্তিকর বা নিষিদ্ধ ঘোষিত বইগুলোর মধ্যে এটি একটি। আর তাই ২০২২ সালে, অ্যাটউড তাঁর এই বিখ্যাত উপন্যাসের একটি আগুনে অদাহ্য সংস্করণ প্রকাশ করেন, যা ছিল সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ।    বৈশ্বিক এমন প্রেক্ষাপটে, গত ১২ মে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি জমকালো সান্ধ্য আয়োজনে ঘোষণা করা হয় ব্রিটিশ বুক অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫। এই অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান লেখিকা মার্গারেট অ্যাটউড ব্রিটিশ বুক অ্যাওয়ার্ডসের অত্যন্ত সম্মানজনক ফ্রিডম টু পাবলিশ পুরস্কার অর্জন করেন। এসময় ভিডিও বার্তায় দেওয়া পুরস্কার গ্রহণের বক্তব্যটি পত্রস্থ হলো। 
...
আমি এই পুরস্কার পেয়ে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। যদিও একটু বিভ্রান্তও বটে। অতীত এবং বর্তমানের অসংখ্য লেখক, প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের মতো আমাকে কখনও কারাবরণ করতে হয়নি। যদিও পরিসংখ্যানটি আবার বিবেচনা করতে হতে পারে, যদি আমি নিকট ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করি।
আমার নিজের জীবৎকালে এমন কোনো সময় মনে পড়ে না, যখন শব্দেরা নিজেরাই এতটা হুমকির মধ্যে পড়েছে। বিংশ শতকের এক পর্যায়ে এসে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মেরূকরণ/বিভাজন যে কমে যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল তা গত এক দশকে আশঙ্কাজনকভাবে আবার বেড়ে গেছে। এখনকার দুনিয়াটাকে মাঝখানের আশি বছরের তুলনায় মনে হচ্ছে যেন সেই ১৯৩০ আর ৪০-এর দশকের দিকে ফিরে গেছে।
একজন লেখক হিসেবে এবং তরুণ বয়সে ছোট প্রকাশনায় আমি প্রায় ৬০ বছর ধরে কাজ করেছি। এই বছরগুলোর মধ্যে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই সময়টা যখন সামিজদাত (Samizdat) ছিল প্রকাশনার এক বিপজ্জনক পদ্ধতি। হাতে তৈরি পাণ্ডুলিপি গোপনে ছড়ানো হতো। আর কেউ ধরা পড়লে তার জন্য অপেক্ষা করত দুর্ভাগ্য। আজকের দিনে সেই হুমকি এসেছে সাম্প্রতিক সেন্সরশিপ আর বই নিষিদ্ধকরণের জোয়ার হয়ে। শুধু বিশ্বের যে দেশগুলোতে দমনমূলক শাসন চলে সে দেশগুলোতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বিতাড়নের চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে যারা সম্ভাব্য আধিপত্যবাদীদের মতাদর্শের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এ ধরনের মনোভাব কেবল কোনো একটি পক্ষের চরমপন্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়– হোক তথাকথিত ‘বাম’ অথবা ‘ডান’। সব চরমপন্থাই চায় বিরোধীদের মুছে ফেলতে, নিজেদের প্রচার ব্যতীত অন্য যে কোনো সৃজনশীল প্রকাশকে স্তব্ধ করতে এবং সর্বোপরি সব সংলাপ বন্ধ করে দিতে। তারা বহু কণ্ঠের পৃথিবী চায় না। তারা চায় কেবল একটি স্বরের আওয়াজ।
একটি মুক্ত পৃথিবীতে প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা গণমানুষের কণ্ঠ রক্ষা করেন। যদি মুক্ত সরকার এবং মানুষের স্বাধীন চিন্তাশক্তি টিকিয়ে রাখতে হয়, তবে শব্দের এই বহুস্বর যারা রক্ষা করবে, তাদের হতে হবে সাহসী। আমি আপনাদের জন্য কামনা করি শক্তি ও আশাবাদ এবং সেই সাহস যার মাধ্যমে একদিকে মবের উন্মত্ততা আর অন্যদিকে প্রতিহিংসাপরায়ণ শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতা রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। 

কানাডীয় সাহিত্যিক অ্যান্ড্রু টেইট ২০১০ সালে ২১ জুলাই মার্গারিট অ্যাটউডের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। লেখক সেখানে দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেলের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ নৈরাজ্য-সম্ভাবনার ওপর আলোকপাত করেছিলেন। 
অ্যান্ড্রু টেইট: ১৯৮৫ সালে লেখা দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেল এখন ব্রিটিশ পাঠ্যক্রমে ভালোভাবেই জায়গা করে নিয়েছে। এ গ্রন্থ যেন সময়ের আগেই ভবিষ্যদ্বাণীস্বরূপ। আপনি কি মনে করেন, এই পঁচিশ বছরে নারীদের অবস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে?
মার্গারেট: যখন এই গ্রন্থ লিখছি, তখন যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় কট্টরপন্থিরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ষাটের দশকের শেষ আর সত্তরের মাঝামাঝি সময় তাদের অবস্থান একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তখন তারা আবারও বলছিল, ‘নারীদের জায়গা ঘরেই।’ আমার বিশ্বাস– মানুষের জীবনে কোনো কিছুই একেবারে শূন্য থেকে আসে না। যদি আমেরিকার প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে তাকান, মার্গারেটপূর্ব অঞ্চলে, তাহলে স্বাধীনতার ঘোষণা, বিপ্লব এসবের নিচে আরও একটা স্তর দেখতে পাবে, তা হলো পিউরিটান ধর্মতন্ত্র। এই ধর্মতন্ত্রই, মজার ব্যাপার, শেষ পর্যন্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিল। এই পিউরিটানরা কোয়াকারের মতো ভিন্নমতাবলম্বীদের ফাঁসি দিয়েছিল। তারা চেয়েছিল নিজেরাই ধর্মীয় মতবাদ ঠিক করতে। আশির দশকের মাঝামাঝি যেসব কথা শোনা যাচ্ছিল, সেগুলোর অনেকটাই ১৭শ শতকের কথা। এই শতাব্দীটা আমাকে বরাবরই টেনেছে। কারণ আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে এমন লোকই ছিলেন, যারা কোয়াকারের ফাঁসি দিয়েছিলেন, ডাইনির বিচার করেছিলেন। তাই দ্য হ্যান্ডমেইড’স টেল-এ আমি যে ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখিয়েছি, যেটা আমরা প্রায় জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলেই পেয়ে গিয়েছিলাম, আমি সেটা বসিয়েছি কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটসে। এখন যেসব মুক্তচিন্তার এক শহর হিসেবে পরিচিত। আমি এই বইয়ে এমন কিছু দেখাইনি, যা আগে কোথাও কখনও ঘটেনি। আমার বিকৃত কল্পনায় বানানো কিছুই নেই। আসলে মানুষ যে বিষয়গুলো নিয়ে বেশি চমকে ওঠে, তা হলো– কোথায় সেটা হচ্ছে। আমি কখনোই বিশ্বাস করিনি, এটা এখানে ঘটতে পারে না। উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে, এসব যে কোনো জায়গায় ঘটতে পারে। এই বইটি নিয়ে তখনকার প্রতিক্রিয়াগুলোও খুবই মজার ছিল। ইংরেজরা, যারা একবার গৃহযুদ্ধ করে নিয়েছে, তারা আর তা করতে চায় না, তারা বলল, ‘দুর্দান্ত একটা কাহিনি!’ কানাডিয়ানরা, যারা সবসময় একটু চিন্তিত প্রকৃতির মানুষ, তারা বলল, ‘এটা কি এখানে ঘটতে পারে?’ আর আমেরিকানরা বলল, ‘আমাদের হাতে আর কতটা সময় আছে?’ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও এখনকার যেভাবে বিভক্তি হচ্ছে—তাতে কোনো একটা ক্যু হওয়া একেবারে অসম্ভব নয়।
অ্যান্ড্রু টেইট : আপনি কি মনে করেন, এখন নারীদের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো, না খারাপ?
মার্গারেট : কোন নারীদের কথা বলছেন? আপনি জানেন, এমন প্রশ্নে সবাইকে এক ঘরানায় ফেলা যায় না, যেমনটা পুরুষদের ক্ষেত্রেও করা যায় না। আপনি যদি বলেন, পুরুষদের জন্য এখন সময় ভালো না খারাপ, আমি বলব, ‘কোন পুরুষ?’ একটা দেশ বেছে নিন। সাধারণভাবে বলতে গেলে, যখন সবার জন্য খারাপ সময় চলে, তখন নারীদের জন্যও তা খারাপই হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ