নড়াইলের লোহাগড়া থানায় নাশকতা মামলার আসামিকে ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইলিয়াস হোসেনকে ক্লোজড করা হয়েছে। সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি মো. শরিফুল ইসলাম।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কাজী ইয়াজুর রহমান বাবুর দায়ের করা একটি নাশকতা মামলার আসামি কাশিমপুর গ্ৰামের জিল্লুর রহমান। তাকে গত ৫ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন বলে এএসআই ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর মামলার বাদী কাজী ইয়াজুর রহমান বাবু ফেসবুক পোস্টে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন। পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশের পক্ষ থেকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন ছিল। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় এএসআই ইলিয়াস হোসেনকে থানা থেকে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

আসামি জিল্লুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ঘটনার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে তাদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

মামলার বাদী কাজী ইয়াজুর রহমান বাবু বলেন, পুলিশের মধ্যে থাকা দুর্নীতিবাজ সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব অনৈতিক কাজের জন্য সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আস ম র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় আজ মঙ্গলবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম কিবরিয়া খান। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বাড্ডা থানায় কর্মরত।

জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি করেছিলেন এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ ঘটনার ভিডিও তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তারিকুল তখন রামপুরা থানায় আর চঞ্চল রামপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই খিলগাঁও অঞ্চলের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি সভা হয়। সেই সভায় ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই ভিডিওটি দেখে এসআই তারিকুল ও এএসআই চঞ্চলকে শনাক্ত করেন।

পরে জানা যায়, ওই তরুণের নাম আমির হোসেন। তিনি তখন আফতাবনগরে একটি দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর পায়ে ছয়টি গুলি লেগেছিল। তিনি বেঁচে আছেন।

জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি থানায় ছিলেন। তখন থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারেন হাবিবুর রহমান (ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার) আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে (হাঁটু গেড়ে বসে) গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে থানার বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান বেতার বার্তার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তখন ওসি বিটিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি (তৎকালীন) রাশেদুল ইসলাম ও ওসি (তৎকালীন) মশিউর রহমান বিজিবির এপিসি নিয়ে সোয়া দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের (রাশেদুল ও মশিউর) নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে বনশ্রী জামে মসজিদের পাশে নাদিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামের একজন নিহত এবং মুসা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারেন।

গত বছরের ২১ জুলাই কিংবা ২২ জুলাই তৎকালীন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রামপুরা থানায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ওসিকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন গোলাম কিবরিয়া।

পুলিশের আরেক সদস্য কনস্টেবল (এখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত) আবু বকর সিদ্দিকও এ মামলায় আজ জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসআই তারিকুল, এএসআই চঞ্চলসহ পাঁচজন আসামি।

এ মামলায় আজ কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক নামের আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলাটির পাঁচ আসামি হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এর মধ্যে চঞ্চল কারাগারে। বাকি চারজন পলাতক।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য
  • বন্দরে বিভিন্ন মামলার ২ সাঁজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার