ধৈর্য গড়ে তুলতে কোরআনের ৬ শিক্ষা
Published: 13th, July 2025 GMT
ধৈর্য বা সবর ইসলামে একটি মহৎ গুণ, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা আল্লাহর পথে ডাকার কাজে নিয়োজিত, তাদের জন্য অপরিহার্য। ইসলামের কথা বলতে গিয়ে একজন দায়ী (আহ্বানকারী) বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তার মধ্যে ব্যক্তিগত দুর্বলতা যেমন থাকে, একইভাবে বিভিন্ন ধাপে থাকে বিরোধিতাও। এইসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে ধৈর্য অত্যন্ত জরুরি।
ধৈর্য গড়ে তুলতে বেশ কয়েকটি শিক্ষা কোরআন আমাদের দিয়েছে, তার মধ্যে ৬টি শিক্ষার কথা আজ বলব।
১.আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ধৈর্য হল হৃদয়ের সেই শক্তি, যা আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে জাগ্রত হয়।ইমাম গাজ্জালি বলেন, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন
কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ধৈর্য ধরো, আর তোমার ধৈর্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৭)
বোঝা যায় যে, ধৈর্য একটি আধ্যাত্মিক গুণ, যা কেবল আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। ধৈর্য গড়ে তুলতে তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, সাহায্য চাইতে হবে। আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫০; সুরা আরাফ, আয়াত: ১২৬)।
ইমাম গাজ্জালি বলেন, ‘ধৈর্য হল হৃদয়ের সেই শক্তি, যা আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে জাগ্রত হয়।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ২০০৫, পৃষ্ঠা: ২৩৫, দারুল কুতুব প্রকাশনী)
আরও পড়ুনসবর ও সালাত পরিত্রাণের পথ১৯ জুন ২০২০২. ইতিহাস থেকে শিক্ষাকোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ তাদের কথায় ধৈর্য ধরো এবং আমাদের বান্দা দাউদকে স্মরণ করো।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ১৭)
কোরআনের বড় একটি অংশ ইতিহাসের আলোচনা। এখানে স্বয়ং রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নবী দাউদ (আ.)-এর ইতিহাস। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) যখন অপমানিত হতেন, বলতেন, ‘আল্লাহ মুসা (আ.)-এর প্রতি রহম করুন, তিনি এর চেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন এবং ধৈর্য ধরেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪০৫)
নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ধৈর্যের শক্তি অর্জন করতে পারি।
নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ধৈর্যের শক্তি অর্জন করতে পারি।৩. নেককারদের জন্য প্রতিশ্রুতিকোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাই ধৈর্য ধরো; নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি নেককারদের জন্য।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪৯)
এই আয়াতে নবী নুহ (আ.)-এর গল্পের প্রেক্ষাপটে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে। নুহ (আ.) প্রায় এক হাজার বছর ধরে তাঁর জাতিকে আল্লাহর পথে ডেকেছেন, তবুও তিনি ধৈর্য হারাননি। কেননা, তিনি বিশ্বাস করতেন, ধৈর্যের শেষে আল্লাহ নেককারদের জন্য শুভ পরিণতি রেখেছেন।
ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘নবীদের জীবন আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা, যা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।’ (মাজমুয়া ফাতাওয়া, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা: ২৮০, দারুল ওয়াফা প্রকাশনী)
আরও পড়ুন ধৈর্য কাকে বলে১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নবীদের জীবন আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা, যা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।ইবনে তাইমিয়া (রহ.), মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া৪. বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বকোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার ওপর দায়িত্ব শুধু বার্তা পৌঁছে দেওয়া।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৪৮)
দাওয়াতি কাজের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল মানুষের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়া। রাসুল (সা.) নিজেও অবিশ্বাসীরা প্রত্যাখ্যান করছে বলে দুঃখ পেতেন। আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘তুমি হয়তো নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে এই দুঃখে যে, তারা ঈমান আনে না।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৩)।
সুতরাং দায়ীর কাজ হল বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা, ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করা নয়।
৫. আল্লাহর প্রশংসা করাকোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাই তাদের কথায় ধৈর্য ধরো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা ও তসবিহ পড়ো।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ১৩০; সুরা কাফ, আয়াত: ৩৯)
আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর স্মরণ ধৈর্য গড়ে তোলার একটি শক্তিশালী উপায়। নবী মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে সহযোগী হিসেবে চেয়েছিলেন, যাতে তারা একসঙ্গে আল্লাহর প্রশংসা ও স্মরণ বেশি বেশি করতে পারেন। (সুরা তাহা, আয়াত: ৩৩-৩৪)
তসবিহ, জিকির ও আল্লাহর প্রশংসা মানুষের মনকে দাওয়াহর চ্যালেঞ্জ থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভূত করে এবং ধৈর্যের শক্তি বাড়ায়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকিরে নিমগ্ন থাকে, তার হৃদয় শান্তি পায়।’ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮৯)।
আরও পড়ুনকোরআনের প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি২৬ মে ২০২৫কোরআন আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সাহায্য, নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা, শুভ পরিণতির প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ব পালনে মনোযোগ, আল্লাহর প্রশংসা ও ভালো বন্ধু গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ধৈর্য গড়ে তুলতে পারি।৬. ভালো বন্ধু গ্রহণ করাকোরআনে বলা হয়েছে, ‘ধৈর্যের সহিত নিজেকে তাদের সঙ্গে রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে ডাকে।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৮)
নেককার ও আল্লাহ-ভীরু মানুষের সঙ্গ ধৈর্য বাড়াতে সাহায্য করে এবং ঈমানকে শক্তিশালী করে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস যোগায়। হাদিসে এসেছে, বদর যুদ্ধের আগে আল্লাহর রাসুল (সা.) সিজদায় পড়ে কাঁদতে থাকলে আবু বকর (রা.) তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এটাই যথেষ্ট, আপনি আপনার রবের কাছে বারবার প্রার্থনা করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৮৭৫)
সারকথা
ধৈর্য একটি গুণ, যা কেবল আল্লাহর পথে ডাকার কাজে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য। কোরআন আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সাহায্য, নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা, শুভ পরিণতির প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ব পালনে মনোযোগ, আল্লাহর প্রশংসা ও ভালো বন্ধু গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ধৈর্য গড়ে তুলতে পারি। রাসুল (সা.) নিজের জীবনে অসাধারণ ধৈর্যের উদাহরণ স্থাপন করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করুন এবং দাওয়াহর পথে অটল রাখুন। আমিন।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট-নেট
আরও পড়ুনবিজয়ের জন্য চাই ধৈর্য ও সংহতি২০ অক্টোবর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য আল ল হ আম দ র স মরণ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’