ধৈর্য বা সবর ইসলামে একটি মহৎ গুণ, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা আল্লাহর পথে ডাকার কাজে নিয়োজিত, তাদের জন্য অপরিহার্য। ইসলামের কথা বলতে গিয়ে একজন দায়ী (আহ্বানকারী) বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তার মধ্যে ব্যক্তিগত দুর্বলতা যেমন থাকে, একইভাবে বিভিন্ন ধাপে থাকে বিরোধিতাও। এইসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে ধৈর্য অত্যন্ত জরুরি।

ধৈর্য গড়ে তুলতে বেশ কয়েকটি শিক্ষা কোরআন আমাদের দিয়েছে, তার মধ্যে ৬টি শিক্ষার কথা আজ বলব।

১.

আল্লাহর সাহায্য চাওয়া ধৈর্য হল হৃদয়ের সেই শক্তি, যা আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে জাগ্রত হয়।ইমাম গাজ্জালি বলেন, ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন

কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ধৈর্য ধরো, আর তোমার ধৈর্য আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১২৭)

বোঝা যায় যে, ধৈর্য একটি আধ্যাত্মিক গুণ, যা কেবল আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। ধৈর্য গড়ে তুলতে তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, সাহায্য চাইতে হবে। আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের উপর ধৈর্য বর্ষণ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫০; সুরা আরাফ, আয়াত: ১২৬)।

ইমাম গাজ্জালি বলেন, ‘ধৈর্য হল হৃদয়ের সেই শক্তি, যা আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি সমর্পণের মাধ্যমে জাগ্রত হয়।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ২০০৫, পৃষ্ঠা: ২৩৫, দারুল কুতুব প্রকাশনী)

আরও পড়ুনসবর ও সালাত পরিত্রাণের পথ১৯ জুন ২০২০২. ইতিহাস থেকে শিক্ষা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ তাদের কথায় ধৈর্য ধরো এবং আমাদের বান্দা দাউদকে স্মরণ করো।’ (সুরা সাদ, আয়াত: ১৭)

কোরআনের বড় একটি অংশ ইতিহাসের আলোচনা। এখানে স্বয়ং রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নবী দাউদ (আ.)-এর ইতিহাস। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) যখন অপমানিত হতেন, বলতেন, ‘আল্লাহ মুসা (আ.)-এর প্রতি রহম করুন, তিনি এর চেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন এবং ধৈর্য ধরেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪০৫)

নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ধৈর্যের শক্তি অর্জন করতে পারি।

নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ধৈর্যের শক্তি অর্জন করতে পারি।৩. নেককারদের জন্য প্রতিশ্রুতি

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাই ধৈর্য ধরো; নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি নেককারদের জন্য।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪৯)

এই আয়াতে নবী নুহ (আ.)-এর গল্পের প্রেক্ষাপটে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে। নুহ (আ.) প্রায় এক হাজার বছর ধরে তাঁর জাতিকে আল্লাহর পথে ডেকেছেন, তবুও তিনি ধৈর্য হারাননি। কেননা, তিনি বিশ্বাস করতেন, ধৈর্যের শেষে আল্লাহ নেককারদের জন্য শুভ পরিণতি রেখেছেন।

ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘নবীদের জীবন আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা, যা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।’ (মাজমুয়া ফাতাওয়া, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা: ২৮০, দারুল ওয়াফা প্রকাশনী)

আরও পড়ুন ধৈর্য কাকে বলে১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নবীদের জীবন আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা, যা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে।ইবনে তাইমিয়া (রহ.), মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া৪. বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার ওপর দায়িত্ব শুধু বার্তা পৌঁছে দেওয়া।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৪৮)

দাওয়াতি কাজের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল মানুষের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়া। রাসুল (সা.) নিজেও অবিশ্বাসীরা প্রত্যাখ্যান করছে বলে দুঃখ পেতেন। আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘তুমি হয়তো নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে এই দুঃখে যে, তারা ঈমান আনে না।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ৩)।

সুতরাং দায়ীর কাজ হল বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং ধৈর্য ধারণ করা, ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করা নয়।

৫. আল্লাহর প্রশংসা করা

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাই তাদের কথায় ধৈর্য ধরো এবং তোমার প্রতিপালকের প্রশংসা ও তসবিহ পড়ো।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ১৩০; সুরা কাফ, আয়াত: ৩৯)

আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর স্মরণ ধৈর্য গড়ে তোলার একটি শক্তিশালী উপায়। নবী মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে তাঁর ভাই হারুন (আ.)-কে সহযোগী হিসেবে চেয়েছিলেন, যাতে তারা একসঙ্গে আল্লাহর প্রশংসা ও স্মরণ বেশি বেশি করতে পারেন। (সুরা তাহা, আয়াত: ৩৩-৩৪)

তসবিহ, জিকির ও আল্লাহর প্রশংসা মানুষের মনকে দাওয়াহর চ্যালেঞ্জ থেকে সরিয়ে আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভূত করে এবং ধৈর্যের শক্তি বাড়ায়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকিরে নিমগ্ন থাকে, তার হৃদয় শান্তি পায়।’ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৮৯)।

আরও পড়ুনকোরআনের প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি২৬ মে ২০২৫কোরআন আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সাহায্য, নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা, শুভ পরিণতির প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ব পালনে মনোযোগ, আল্লাহর প্রশংসা ও ভালো বন্ধু গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ধৈর্য গড়ে তুলতে পারি।৬. ভালো বন্ধু গ্রহণ করা

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ধৈর্যের সহিত নিজেকে তাদের সঙ্গে রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যা তাদের প্রতিপালককে ডাকে।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৮)

নেককার ও আল্লাহ-ভীরু মানুষের সঙ্গ ধৈর্য বাড়াতে সাহায্য করে এবং ঈমানকে শক্তিশালী করে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস যোগায়। হাদিসে এসেছে, বদর যুদ্ধের আগে আল্লাহর রাসুল (সা.) সিজদায় পড়ে কাঁদতে থাকলে আবু বকর (রা.) তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এটাই যথেষ্ট, আপনি আপনার রবের কাছে বারবার প্রার্থনা করেছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৮৭৫)

সারকথা

ধৈর্য একটি গুণ, যা কেবল আল্লাহর পথে ডাকার কাজে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য। কোরআন আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সাহায্য, নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা, শুভ পরিণতির প্রতিশ্রুতি, দায়িত্ব পালনে মনোযোগ, আল্লাহর প্রশংসা ও ভালো বন্ধু গ্রহণের মাধ্যমে আমরা ধৈর্য গড়ে তুলতে পারি। রাসুল (সা.) নিজের জীবনে অসাধারণ ধৈর্যের উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করুন এবং দাওয়াহর পথে অটল রাখুন। আমিন।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট-নেট

আরও পড়ুনবিজয়ের জন্য চাই ধৈর্য ও সংহতি২০ অক্টোবর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য আল ল হ আম দ র স মরণ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস

পুঁজিবাজারে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস লিমিটেডের পরিচালনার পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভায় সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তথ্য মতে, লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ৩০ ডিসেম্বর হাইব্রড সিস্টেমে অনুষ্ঠিত হবে। আর এ জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ ডিসেম্বর।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৭৮ টাকা।

এদিকে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে (৪৩.৪৪) টাকা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল (১৪.৫০) টাকা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩.২৭ টাকায়।

এই করপোরেট ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের কোনো মূল্য সীমা থাকবে না।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ