ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার তিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ ও টানা ৩৮ দিন অবস্থান করার পর যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর একটি ‘এফ-৩৫বি’ যুদ্ধবিমান। 

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দর থেকে পঞ্চম প্রজন্মের ওই যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়ন করে।ভারতে ব্রিটিশ হাইকমিশন এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত ১৪ জুন কেরালা উপকূল থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ রণতরী ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’ থেকে ওড়ে ‘এফ-৩৫বি’। কিন্তু জ্বালানি কম থাকায় তিরুবনন্তপুরমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সেটি। শুধুমাত্র জ্বালানি কম থাকার কারণেই যে যুদ্ধবিমানটিকে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে, এমন নয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণেও সাহায্য চান ওই যুদ্ধবিমানের পাইলট। এর পরই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানটিকে জরুরি অবতরণের অনুমতি দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। অবতরণের পর বিমানটির হাইড্রোলিক যন্ত্রাংশে ত্রুটি ধরা পড়ে।

আরো পড়ুন:

সংসার ভাঙছে ‘কোই মিল গ্যায়া’ সিনেমার সেই টিনার?

৬ দিনেও উদ্ধার করা যায়নি পশ্চিমবঙ্গে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশি জাহাজ

ভারতের মাটিতে বিমানটির দীর্ঘ উপস্থিতি কৌতূহলের জন্ম দিয়েছিল ও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল, এত আধুনিক বিমান কিভাবে এতদিন ধরে একটি ভিন্ন দেশে অবস্থান করতে পারে। এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলসের বহরের সদস্য বিমানটি ফিরে যেতে না পারার পর রয়াল নেভির প্রকৌশলীরা এটি মেরামত করার জন্য পরিদর্শন করেন।

তবে তারা এটি মেরামত করতে পারেননি। দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এফ-৩৫বি বিমানটি মূল্যায়ন ও মেরামতের জন্য ১৪ জন প্রকৌশলীর একটি দল তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরে পাঠিয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দলটি চলাচল ও মেরামত প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ সরঞ্জাম নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ের ভিডিওগুলোতে বিমানটিকে একটি হ্যাঙ্গারে টেনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

জল্পনা ছিল, যদি তারা বিমানটি মেরামত করতে ব্যর্থ হন, তাহলে এটি ভেঙে ফেলতে হবে ও সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানের মতো বড় কার্গো বিমানে করে এটি নিয়ে যেতে হবে।

এই ঘটনায় ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম ও রসিকতা শুরু হয়েছিল। কেউ কেউ মজা করে লিখেন, এই বিমানটিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত; কেউ বলেছে, বিমানবন্দর ভাড়া নেওয়া হোক। কেরালা পর্যটন বিভাগও হালকা ব্যঙ্গ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছিল। তাতে বলা হয়, “কেরালা, এমন এক গন্তব্য- যেখানে কেউই ফিরে যেতে চায় না।” একটি এআই-জেনারেটেড ছবিতে দেখা যায়, এফ-৩৫বি একটি রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে, পেছনে নারিকেল গাছের সারি।

গতকাল সোমবার বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, বিমানটি উড্ডয়নের যোগ্য বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

যুদ্ধবিমানটি লকহিড মার্টিন নির্মিত ছোট রানওয়ে থেকে উড়তে ও উল্লম্বভাবে অবতরণ করতে পারে, যাকে স্টোভল প্রযুক্তি বলে। এছাড়া যুদ্ধবিমানটির স্টেলথ ক্ষমতা রয়েছে, অর্থাৎ রাডারে ধরা পড়ে না সহজে। 

যুদ্ধবিমানটির মূল ভার্সানটির নাম ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। এর মোট তিন ধরনের মডেল রয়েছে। ‘এফ-৩৫বি’ মূলত বিমানবাহী রণতরীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের আনুমানিক দাম ১১ কোটি ডলার। এই যুদ্ধবিমান ন্যাটো-ভুক্ত অনেক দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস ব্যবহার করে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ম নট ক ব ম নট র র জন য ম র মত য ক তর

এছাড়াও পড়ুন:

সাগরে এক ট্রলারে ৪০ লাখ টাকার ইলিশ 

সাগরে এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১৭০ মণ ইলিশ মাছ। দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এই ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাইফ ফিশ আড়তে এই মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে ওঠানো হয়। মাছগুলো ডাকের মাধ্যমে বিক্রি হয় ৪০ লাখ টাকায়। ট্রলারটিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ ইলিশ তুলে দেওয়া হয়। 

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সূত্রে জানাগেছে, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সাইফ কোম্পানির এফবি সাফওয়ান-৩ মাছ ধরার ট্রলার গত ২৯ অক্টোবর সকালে পাথরঘাটা থেকে ১৯ জন জেলে নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। 

ওই দিন বিকেলে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলার পরই রাতে মাছগুলো ধরা পড়ে। ট্রলারটিতে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ তুলে দেওয়া হয়। জেলেরা বলছে, সব মিলিয়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। 

এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের মাঝি রুবেল হোসেন বলেন, “আমরা ২৯ অক্টোবর সাগরে যাই। বিকেলে লম্বা জাল (ইলিশ জাল) ফেলার পর রাত আটটার দিকে জালের অবস্থা দেখে বুঝতে পারি প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। রাত আটটা থেকে জাল টানা শুরু করে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জাল ট্রলারে উঠানো শেষ হয়।”

সাইফ ফিশিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক মনিরুল হক মাসুম জানান, অনেক দিন ধরে সাগরে খুব কম মাছ ধরা পড়ছিল। ইলিশ মৌসুমে কাঙ্খিত মাছ ধরা না পড়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছিল। সাগরে অবৈধ ট্রলিং বোট বন্ধ করা হলে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। 

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মোস্তফা আলম বলেন, “মাছগুলো আমার আড়তে বিক্রি হয়েছে। ইলিশের প্রকারভেদ ২৭ হাজার, ২২ হাজার, ১২ হাজার টাকায় মণ দরে সব মিলিয়ে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় এই মাছ বিক্রি হয়।” 

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “২২ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সাগরে গিয়েই মাছ পেয়েছে- এটা খুশির খবর। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি। হঠাৎ এক ট্রলারে ১৪০ মণ ইলিশ পাওয়ায় আমরাও খুশি।”

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।”

তিনি বলেন, “জেলেরা সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মানলে এবং অবৈধ জাল বন্ধ তাদের জেলেদের সুদিন ফিরবে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাগরে এক ট্রলারে ৪০ লাখ টাকার ইলিশ