২১ জুলাই ২০২৫। বেলা ১টা বাজার কিছুক্ষণ পরই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্ষরিক অর্থেই যেন আকাশ ভেঙে পড়ে! দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে স্কুল ভবনে ঢুকে পড়ে একটি প্রশিক্ষণ বিমান। দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত মারা গেছেন ৩১ জন, আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। হতাহতের একটা বড় অংশই শিশু–কিশোর। অনেক শিশু শারীরিকভাবে আহত না হলেও তাদের দেখতে হয়েছে সহপাঠীদের নিথর পোড়া দেহ, শুনতে হয়েছে তাদের আর্তচিৎকার।

সামনাসামনি যে কিছুই দেখেনি, হয়তো ওই দিন সে স্কুলেই যায়নি, সেই শিশুও কিন্তু আজ শোকে স্তব্ধ। তার অনেক সহপাঠী আর কোনো দিন তার সঙ্গে এক ক্লাসে বসবে না। কেবল উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের শিশুরাই নয়, সংবাদমাধ্যমে এই দুর্ঘটনার খবর আর চিত্র দেখে বড়দের পাশাপাশি দেশের প্রায় সব শিশু–কিশোর শোকে বিহ্বল। এই ট্রমা প্রত্যক্ষ করার কারণে তাদের মনে তৈরি হয়েছে গভীর মানসিক চাপ।

বড় ধরনের দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে সবার মনেই বিরূপ প্রভাব পড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের মানসিক আঘাতের প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী ও ক্ষতিকর হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রমায় শিশুদের মধ্যে দেখা দিতে পারে তীব্র মানসিক চাপ (অ্যাকিউট স্ট্রেস), কনভার্সন ডিজঅর্ডার, সাময়িক উন্মাদনা (ব্রিফ সাইকোসিস), আতঙ্ক (প্যানিক অ্যাটাক), দুশ্চিন্তা (অ্যাংজাইটি), অস্বাভাবিক শোকার্ত ভাব ইত্যাদি। দুই সপ্তাহ পর থেকে কয়েক মাসের মধ্যে দেখা দিতে পারে আঘাতপরবর্তী মানসিক চাপ (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার), বিষণ্নতা ইত্যাদি।

আরও পড়ুনশিশুর আকস্মিক দুর্ঘটনায় কী করবেন০৪ মে ২০২৫

শিশু-কিশোরদের স্মৃতিতে এ ধরনের ট্রমার অভিজ্ঞতা একটি অস্বাভাবিক গড়ন ও মাত্রা নিয়ে দীর্ঘদিন রয়ে যেতে পারে। পরে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে ব্যক্তিত্বের সমস্যা। যে শিশু বা কিশোর নিজে সরাসরি এ ধরনের দুর্ঘটনা বা ট্রমার মুখোমুখি হয়েছে, কেবল সে নয়, বরং যে শিশু সেটি দেখেছে বা শুনেছে, তারও সমস্যা হতে পারে। মানসিক আঘাত পেতে পারে এমন ঘটনা বা ট্রমার মুখোমুখি হয়েছে এমন শিশুর প্রতি শুরু থেকেই বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে এই আঘাত সে কাটিয়ে উঠতে পারে। এ জন্য তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

যা করা উচিত

বড় ধরনের ট্রমা প্রত্যক্ষ করার পর শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে মা-বাবা, শিক্ষক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের যা করা উচিত—

দুর্ঘটনার ভয়াবহ দৃশ্য আর ঘটনা সরাসরি বা প্রচারমাধ্যমে শিশু–কিশোরদের দেখতে নিরুৎসাহিত করুন। বীভৎস কোনো কিছু প্রত্যক্ষ করা থেকে শিশুকে বিরত রাখুন। এ বিষয়ে প্রচারমাধ্যমগুলোকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। মৃতদেহের ছবি, আহত মানুষের কাতরানোর দৃশ্য দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে। আহত ব্যক্তি, সে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক যে–ই হোক, তার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘিত হয়, এমন ছবি প্রকাশ করা উচিত নয়। উদ্ধারকাজে সহায়ক না হলে শিশুর ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন।

কোনো বড় দুর্ঘটনার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলে শিশুদের রাতের ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। তবে জোর করে তাদের কোনো কিছু করতে বাধ্য করবেন না। যেমন ‘তোমাকে এক্ষুনি ঘুমাতে হবে’, ‘তোমার তো কিছুই হয়নি, তুমি পড়তে বসো’ ইত্যাদি। ট্রমার মুখোমুখি হওয়া শিশুর রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে, বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে, অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে (বিনা কারণে হাসা, কাঁদা, আপনজনকে চিনতে না পারা, কথা বলতে না পারা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি)। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

শিশু–কিশোরদের সংবেদনশীল মনকে সুরক্ষা দিন, তাদের আবেগ প্রকাশে সাহায্য করুন। তাদের শোক প্রকাশের সুযোগ দিন। তার শোককে উপেক্ষা করবেন না। ট্রমার মুখোমুখি হওয়া শিশুদের কথা মন দিয়ে শুনুন। তাদের যৌক্তিক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাবেন না। দুর্ঘটনার বিষয়ে সৎ থেকে সত্য কথা বলুন, তথ্য গোপন করবেন না। শিশুকে অহেতুক ভয় দেখাবেন না।

যদি মনে করেন, শিশু স্বাভাবিক কাজ করার মতো বা আবার স্কুলে যাওয়ার মতো নিজের মনকে তৈরি করতে পারেনি, শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি, তবে সময় নিন। জোর করবেন না। তাকে স্বাভাবিক আচরণ করতে উৎসাহিত করুন।

যদি সুযোগ থাকে আর কোনো ঝুঁকি না থাকে, তবে দুর্ঘটনায় যারা আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যেকোনো সহযোগিতায় শিশুর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করুন।

কোনো ধরনের গুজব ছড়াবেন না, শিশুকে বিভ্রান্ত করবেন না। দুর্ঘটনার মনগড়া কারণ বা কাউকে দায়ী করে শিশুর সামনে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন।

আরও পড়ুনমাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের পর ছেলের খোঁজে রুদ্ধশ্বাস ৪ ঘণ্টা১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন র দ র ঘটন য় করব ন ন প রক শ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

আবার ‘লাস্ট মিনিট শো’, জন্মদিনের রাতে স্লটকে জয় উপহার ফন ডাইকের

লিভারপুল ৩–২ আতলেতিকো মাদ্রিদ

জন্মদিনের রাতে এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!

রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই মাঠে ঢুকে পড়লেন আর্নে স্লট। লিভারপুলের সমর্থকেরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে থাকলেন, দল জেতায় অভিনন্দনও জানালেন। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে হাত নেড়ে স্লট সেই অভিবাদনের জবাব দিলেন।   

ভার্জিল ফন ডাইকের সঙ্গে আলিঙ্গনের সময় স্লটকে একটু বেশিই খুশি মনে হলো। কারণ, লিভারপুল অধিনায়ক ফন ডাইক ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত না হলে তাঁর বিশেষ রাতটা যে অনেকটাই পানসে হয়ে যেত!

২০২৫–২৬ মৌসুমে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে লিভারপুল। যেটিকে বলা হচ্ছে লাস্ট মিনিট শো, কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নাম দিয়েছে স্লট টাইম।

এবার সেই শো–এর নায়ক ফন ডাইক। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে তাঁর হেডারেই আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচটা ৩–২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে শুভসূচনা করল লিভারপুল।

এ নিয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল লিভারপুল। সবকটি ম্যাচে অলরেডরা জয়সূচক গোল করল ৮০ মিনিটের পর; এর তিনটিই যোগ করা সময়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ