মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকার বাঁধ ঘেঁষে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এক মাস ধরে ড্রেজার দিয়ে বেপরোয়াভাবে বালু তোলায় ইতিমধ্যে ধসে পড়তে শুরু করেছে প্রকল্প রক্ষা বাঁধ। প্রকল্পটিও হুমকির মুখে।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের বাঁধ ঘেঁষে যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে যেকোনো দিন প্রকল্প রক্ষা বাঁধ ভেঙে বিলীন হতে পারে জমি। বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাদের একটি সিন্ডিকেট এই বালু তুলছে বলে অভিযোগ।

প্রকল্পটি বালুদস্যুদের থেকে রক্ষা করতে চলতি বছরের মার্চে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেন প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

সেলিম ভূঁইয়া। সবশেষ গত ২৯ জুন একটি চিঠি দেন তিনি। একই চিঠির অনুলিপি পুলিশ সুপার, গজারিয়ার ইউএনও ও ওসিকেও দেওয়া হয়। তবে কোনো কাজ হয়নি।

বর্তমানে প্রকল্পটির নির্বাহী পরিচালক সুসান্ত কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পটি রক্ষায় আমরা মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। এর পরেও বাঁধ ঘেঁষে বালু কাটা থেমে নেই।’

কোল ফায়ার্ড থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পের আওতায় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে রাষ্ট্রীয় একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এখানে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্ব পায়। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ ও গজারিয়ার শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সরকারের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০১৬ সালে ৩৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের জন্য গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে ষোলআনি ও দৌলতপুর দুটি মৌজায় ২৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ, বালু ভরাট, চারদিকে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে খরচ হয় ৪০০ কোটি টাকা। জিটুজি ভিত্তিতে চীন সরকারের অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের কথা থাকলেও পরে গ্যাসভিত্তিক ৬০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

গত সোমবার দুপুরের দিকে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ৬০–৭০ ফুট দূরত্বে বেশ কিছু ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু বাল্কহেডে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প রক্ষা বাঁধটি নদী থেকে অন্তত ২০ ফুট উঁচুতে। এই দিন প্রকল্পের ওপরে উঠতে গিয়ে বাঁধে ফাটল দেখা যায়। কিছু অংশে বাঁধের ব্লকও ধসে পড়েছে।

এ সময় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এক মাস ধরে ঘেঁষে বালু তোলা হচ্ছে। যে কারণে এখন বাঁধসহ পুরো প্রকল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে। তাঁরা আক্ষেপের সঙ্গে জানান, যাঁরা বালু কাটছেন, তাঁদের সঙ্গে নদীতে ট্রলারে অস্ত্রধারী থাকেন। স্থানীয় কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের সুরক্ষার জন্য বাঁধ থেকে ১০০ ফুট নিচে নদীর তীর পর্যন্ত বড় বড় কংক্রিটের ব্লক স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। বাঁধের চারদিকে এতটা মজবুত করা হয়েছিল যে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে নয়ানগর, রমজানবেগ, চরকালীপুরা ও ষোলআনি মৌজায় ১২৮ একর নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। এবার বালুমহালটি ২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছে আদন ড্রেজিং লিমিটেড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিয়া নুরুদ্দিন অপুর বড় বোন সেলিনা আক্তার। তবে মহালটি বিএনপি নেতাদের দিয়ে পরিচালনা করছেন মিয়া নুরুদ্দিন। ইজারা প্রতিষ্ঠানকে নদীর তীর থেকে কমপক্ষে ৮০০ থেকে এক হাজার ফুট গভীরে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো শর্ত না মেনেই নদীর তীর ও ইজারার বাইরের এলাকায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

জানতে মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে মুঠোফোন কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাবেক যুবদল নেতা মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এসব বিষয় জানেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম।’

আমিনুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি মিয়া নুরুদ্দিন অপুর পরিচালনা এবং স্থানীয়ভাবে তিনি ও মুজিবুর রহমানের দায়িত্বে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তাঁর দাবি, তাঁরা নদীর ৬০০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করেন। সেখান থেকে তাঁদের লোকজনকে বালু কাটার জন্য বলে দিয়েছেন তিনি।

অবৈধভাবে বালু কাটা বন্ধে কিছুদিন আগে গজারিয়ার বালুমহালে অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক ফাতেমাতুল জান্নাত। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে গিয়ে কোনো অবস্থাতেই বালু কাটা যাবে না। সীমা লঙ্ঘন করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র নদ র ত র র জন য গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

আবার ‘লাস্ট মিনিট শো’, জন্মদিনের রাতে স্লটকে জয় উপহার ফন ডাইকের

লিভারপুল ৩–২ আতলেতিকো মাদ্রিদ

জন্মদিনের রাতে এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!

রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই মাঠে ঢুকে পড়লেন আর্নে স্লট। লিভারপুলের সমর্থকেরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে থাকলেন, দল জেতায় অভিনন্দনও জানালেন। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে হাত নেড়ে স্লট সেই অভিবাদনের জবাব দিলেন।   

ভার্জিল ফন ডাইকের সঙ্গে আলিঙ্গনের সময় স্লটকে একটু বেশিই খুশি মনে হলো। কারণ, লিভারপুল অধিনায়ক ফন ডাইক ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত না হলে তাঁর বিশেষ রাতটা যে অনেকটাই পানসে হয়ে যেত!

২০২৫–২৬ মৌসুমে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে লিভারপুল। যেটিকে বলা হচ্ছে লাস্ট মিনিট শো, কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নাম দিয়েছে স্লট টাইম।

এবার সেই শো–এর নায়ক ফন ডাইক। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে তাঁর হেডারেই আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচটা ৩–২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে শুভসূচনা করল লিভারপুল।

এ নিয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল লিভারপুল। সবকটি ম্যাচে অলরেডরা জয়সূচক গোল করল ৮০ মিনিটের পর; এর তিনটিই যোগ করা সময়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ