বগুড়ার শিবগঞ্জের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম হত্যা মামলার একমাত্র আসামি আজিজুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

হত্যাকাণ্ডের ২৩ বছর পর বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) আজাদ হোসেন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে পৃথক হত্যা মামলার ২ আসামি গ্রেপ্তার

নরসিংদীতে অস্ত্রসহ ১২ মামলার আসামি সোহেল গ্রেপ্তার 

রায় ঘোষণার সময় আসামি আজিজুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ১ জুন শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে আনোয়ারুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আজিজুর রহমান। ঘটনার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার নানা সময়ে আসামি জামিনে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন।

এপিপি আজাদ হোসেন তালুকদার বলেন, “মামলার ১৬ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত আজিজুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। জরিমানার ৯০ হাজার টাকা নিহতের পরিবারকে এবং ১০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।” 

তিনি আরো বলেন, “এই রায়ে নিহতের পরিবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির বলে মনে করছি।”

ঢাকা/এনাম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আস ম আজ জ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ