‘ভাইটাকে চেনা যাচ্ছে না’ এই কথাটুকু বলতেই গলা ধরে এলো রুনা আক্তারের। দুই হাতের তালুতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।

বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের করিডোরে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। জানান, তার ভাই মাহফুজুর রহমান ছিলেন বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া একজন শিক্ষক।

হাসপাতালের করিডোরজুড়ে শুধু কান্নার শব্দ। কেউ চেনা শরীর খুঁজছেন, কেউ নাম ধরে ডাকছেন— যার কোনো উত্তর নেই। কারও গলায় আটকে থাকা আর্তনাদ, কারও হতবিহ্বল তাকিয়ে থাকা চিকিৎসা কক্ষের দরজার দিকে।

চিকিৎসকদের নিরবচ্ছিন্ন লড়াই
দগ্ধদের কেউ কেউ আইসিইউতে, কেউ হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)। চিকিৎসক-নার্সরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা.

মো. নাসির উদ্দীন বলেন, “আজ সকাল পর্যন্ত ১৭ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন, এর মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বার্ন ইনজুরি খুবই সংবেদনশীল একটু অবহেলাতেই বিপদ বাড়ে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ সেবা দিতে।” 

তিনি জানান, গুরুতর কয়েকজন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় হাসপাতালের বাইরের ইউনিটেও কিছু রোগীকে রেফার করা হচ্ছে।

স্বজনদের প্রার্থনা একবার শুধু দেখতে দাও

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল গেট থেকে আইসিইউ পর্যন্ত অপেক্ষায় শত শত স্বজন। এক মা তার ছেলের পোড়া হাতের ছবি দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পাশের লোকজন ও নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে সেবা দিতে এগিয়ে এলেও কান্না থামেনি। স্বজনরা বলছেন  ‘আমারে একবার দেখতে দাও… শুধু একবার!’। কান্না, আকুতি আর অসহায়ত্ব যেন হাসপাতালটির প্রতিটি দেয়ালে লেপ্টে আছে।

চিকিৎসা সক্ষমতার বাইরে গিয়ে লড়াই
এক সিনিয়র নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ডিউটি করছি। এত সংখ্যক দগ্ধ রোগী একসঙ্গে আসায় চিকিৎসার মান ধরে রাখা কঠিন হয়ে গেছে।”

তিনি জানান, বার্নের চিকিৎসায় প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, চিকিৎসক ও নার্স সংকটে হাসপাতালকে একরকম যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

বারবার দুর্ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা নিয়ে
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। ২০২৩ সালেও একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়, সেবারও পাইলট দগ্ধ হয়েছিলেন।

শহরের প্রতিটি কোণায় শোক
হাসপাতালের সামনে কথা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল থেকে বার্ন ইনস্টিটিউট পর্যন্ত রাস্তায় শুধু একটাই শব্দ শুনি ‘পুড়ে গেছে’। এই শোক শুধু নিহত বা আহতদের নয়, এটা পুরো দেশের মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, “এই ক্ষত শুধু শারীরিক নয় মানসিক, সামাজিক ও মানবিক এক বেদনাবিধুর বাস্তবতা। রাজধানী ঢাকায় আজকের বাতাসও যেন ভারী হয়ে আছে সেই ক্ষত, কান্না আর আতঙ্কে।” 

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল ভবনে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে এখন পর্যন্ত ৩১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ