অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ চিরতরুণ একজন। তারুণ্য, কর্ম ও শক্তিতে বিশ্বাসী। তারুণ্য মানে কাল নয়, সময় নয়; তারুণ্য মানে উদ্দীপনা। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার যৌবনের পক্ষে থাকেন, তারুণ্যে বিশ্বাস করেন। তিনি তারুণ্যের তরুণ, বার্ধক্যের তরুণ, প্রতিটি সময়ের তরুণকে তিনি উপভোগ করেন।
আজকাল দেখি স্যারও কেমন ম্লান হয়ে যাচ্ছেন। স্যার দৃঢ়চেতা। কেউ কুঁজো হয়ে হাঁটুক বা বার্ধক্য আসুক, সেটা তিনি পছন্দ করেন না। কিন্তু আজকাল স্যারের ভেতরও বার্ধক্যের ছাপ, হাঁটায় শ্লথগতি লক্ষণীয়। শরীর মলিন হয়ে গেছে। স্যারের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। ‘কণ্ঠস্বর’ সম্পাদনার সময় কিংবা ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করার সময় তাঁর যে তারুণ্য ছিল, তা কি আছে!
বয়সের সেই তারুণ্য না থাকলেও মনের দিক থেকে স্যার এখনো তরুণ, এটা অনস্বীকার্য। আমি বিশ্বাস করি, এখনো স্যারের তারুণ্য ফুরিয়ে যায়নি। স্যারের জন্মদিন এলেই আমাদের ভেতর একটা আলাদা অনুভব তৈরি হয়। নানা আয়োজন করি। বিশেষ করে দুপুরবেলা স্যার আমাদের সঙ্গে চ্যানেল আই কার্যালয়ে এসে ডাল–ভাত খান এবং দুপুরের একটা স্লটে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সেই অনুষ্ঠানে ইমদাদুল হক মিলন কিংবা আফজাল হোসেন অথবা ইফতেখারুল ইসলাম এবং আমি উপস্থিত থাকি। অনুষ্ঠানে স্যার অনর্গল কথা বলতে থাকেন। স্যার তো কথার জাদুকর। এত সুন্দর করে কথা বলেন, আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি। তাঁর কথায় পর্যালোচনা থাকে, বিশ্লেষণ থাকে; এক আশ্চর্য জাদুকরি ভাষায় তিনি মুগ্ধ করে রাখেন আমাদের।
আরও পড়ুনকখন কোন বাদাম খাবেন, বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ২৩ জুলাই ২০২৫স্যারের সান্নিধ্যে আমরা আছি প্রায় ৫০ বছর। শ্রদ্ধা–ভালোবাসায় স্যার আমাদের কাছে অতি সম্মানের। স্যারকে দেখলে আমাদের শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায়। ২৫ জুলাই স্যারের ৮৬ বছর পূর্ণ হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ বেঁচেছিলেন ৮০ বছর। স্যার বলেন, রবীন্দ্রনাথের সমান বাঁচলেই তিনি কৃতার্থ হবেন। কিন্তু স্যার সেই ৮০ পেরিয়ে এখন ৮৭–তে। স্যার কর্মক্ষম থেকেই তাঁর এতগুলো বছর পার করে দিচ্ছেন।
ঘুম থেকে উঠেই কাজ শুরু করেন, সারা দিন সেই কাজেই ব্যস্ত থাকেন। সারাক্ষণ মগ্ন থাকেন জ্ঞানচর্চায়। স্যারের সঙ্গে মিশলে বোঝা যায়, কতটা কর্মঠ তিনি। তিনি আলোকিত মানুষ। চিন্তাশীল মানুষ।
স্যার বিশ্বাস করেন, মানুষ হবে মূল্যবোধসম্পন্ন, মানুষ হবে সৃষ্টিশীল। মানুষ কোনো অন্যায় করবে না। মানুষ কখনো মিথ্যা বলবে না। মানুষ সংগ্রাম করবে মানুষের জন্য। এ রকম একটি স্বপ্ন নিয়ে স্যার কাজ করে যাচ্ছেন ৪০ বছর ধরে।
মানুষকে বইমুখী করতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন স্যার। ‘আলোর স্কুল’–এর মাধ্যমে বইপড়া কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। বই পড়লে মানুষ কখনো অন্যায় কাজ করতে পারে না। মানুষ বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। মূল পাঠ্যবইয়ের বাইরে নানা ধরনের বই পড়িয়ে শিশুদের মনের জগৎকে খুলে দিতে চেয়েছেন তিনি।
আমরাও স্যারের সান্নিধ্যে থেকে বই পড়েছি। বিদেশি কোনো বই পড়তে চাইলে স্যার বিদেশ থেকে আনিয়ে দিয়েছেন। আমরা মনের আনন্দে সেটা পড়েছি। স্যার পাঠের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন। কেননা, না পড়লে, না জানলে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে না। আমরাও স্যারের সঙ্গে একমত। পাঠের কোনো বিকল্প নেই।
স্যার টেলিভিশন মাধ্যমেও কাজ করেছেন। তাঁর উপস্থাপনা দর্শক আনন্দচিত্তে গ্রহণ করেছে। স্যারও চেষ্টা করেন আলাদা ব্যাখ্যা, গল্প তৈরি করে দর্শককে আনন্দ দিতে। স্যারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ স্মৃতি। স্যারকে কখনো বলা হয়নি, ‘স্যার, আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি।’
আরও পড়ুনযেভাবে লেবু খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন২২ জুলাই ২০২৫স্যার যখনই চ্যানেল আইয়ে আসেন, আমি আমার জন্য বরাদ্দ চেয়ারটা সম্মানের সঙ্গে স্যারের জন্য ছেড়ে দিই। সম্পর্কের কারণেই স্যারের খুব কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছে আমাদের। স্যার আমাদের কাছে পৌরাণিক চরিত্রের মতো।
স্যার সব সময় ঢিলেঢালা খদ্দরের পায়জামা–পাঞ্জাবি পরেন। ফিতাওয়ালা স্যান্ডেল পরেন। শীত এলে কোটি পরবেন, সঙ্গে একটা চাদর। তিনি আয়েশে থাকতে পছন্দ করেন, কিন্তু জীবনে সেই সুযোগ পাননি। কাজ তাঁকে সেই সুযোগ দেয়নি।
স্যার কখনো টাকাপয়সা বহন করেননি। টাকাপয়সা লাগলে বলেছেন, ওইখানে লাগবে দাও। নিজের হাতে কোনো টাকাপয়সা নেন না। তবে স্যারের কোনো কাজ থেমেও থাকে না।
শুধু দেশেই নয়, স্যারের ছাত্রছাত্রী ছড়িয়ে আছে বিশ্বের অনেক দেশে। অনেকেই বড় বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। স্যার যেখানেই যান, সেখানেই কোনো ছাত্রের দেখা পান। স্যারের কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তাঁরাই ঝাঁপিয়ে পড়েন।
স্যার একবার অসুস্থ হয়ে ল্যাবএইডে ভর্তি হলেন। ল্যাবএইডের শামীম (ডা.
স্যার দীর্ঘজীবী হোন। আমাদের মাঝে আরও অনেক দিন বেঁচে থাকুন। শুভ জন্মদিন, স্যার।
আরও পড়ুনএই জীবন যদি জীবন হয় তাহলে আসল জীবন কোথায় : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ০৭ এপ্রিল ২০১৯উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।