সহায়-সম্পত্তি ও ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে এ দেশের মানুষের জীবনে কোন দিন শান্তি ছিল না। এক সময় ছিল নির্মম পর্তুগিজ ও মগ দস্যুদের দাপট। ভাস্কোদাগামা ১৪৯৮ সালে প্রথমে ভারতে আসেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে পর্তুগিজরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভারতে আসতে শুরু করে। কিছু দিনের মধ্যে তারা ভারতের প্রধান প্রধান বন্দর, সমুদ্র ও নৌপথগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরসহ বাংলার  উপকূলীয় অঞ্চল ও নৌপথের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের। 

পর্তুগিজরা এই অধিকারের অপব্যবহার  করে। দ্রুত লাভবান ও সম্পদশালী হওয়ার জন্য বাণিজ্যনীতিকে তারা লুণ্ঠননীতিতে পরিণত করে। জলদস্যুবৃত্তি, অপহরণ, লুন্ঠন, দাস ব্যবসা প্রভৃতি তাদের প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়ায়। কোন জাহাজ বা নৌকা দেখলে তা লুট করে নিত, নতুবা বড় ধরনের মাশুল নিয়ে ছেড়ে দিত। গ্রাম, শহর, বাজার, বিয়ে বা যে কোন ধরনের লোক সমাগম দেখলেই দস্যুদল সেখানে অতর্কিত আক্রমণ করত। ধন-সম্পদ যা পেত তাই লুট করত। পুরুষ, স্ত্রী-কন্যা, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তারা জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যেত। তারা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ধরে বিভিন্ন দেশে নিয়ে বিক্রি করে দিত। এই সময় থেকে গ্রামে গ্রামে ছেলে ধরার ভয় শুরু হয়েছিল।

পর্তুগিজ জলদস্যুদের দস্যুবৃত্তিতে সহায়তা করতো আরাকানি মগ দস্যুরা। এই সময় ত্রাসের রাজত্ব এতই কায়েম হয়েছিল বাংলা ‘হার্মাদের মুল্লক’/ ‘মগের মুল্লক’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। পর্তুগিজ ও মগ দস্যুরা দেশীয় অস্ত্র লাঠি, বল্লম, তলোয়ারের সাথে বন্দুক ব্যবহার করত।
তাদের উৎপাতে যশোরের বণিকগণ এবং সাধারণ প্রজাকূল সর্বদা নিগৃহীত ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে রাজা প্রতাপাদিত্য (১৫৮৭-১৬০৯) বেশ কয়েকবার পর্তুগিজ জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও সফলতা পাননি। তবে মোঘলদের চট্টগ্রাম অধিকারের পর পর্তুগিজ ও মগ দস্যুদের দৌরাত্ম্য কমে যায়। 

অষ্টাদশ শতকে বর্গীর হানা মানে বাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে মহাআতঙ্ক। মারাঠা সাম্রাজ্যের অশ্বারোহী সৈন্যরা ‘বর্গী’ নামে পরিচিত, যারা সংঘবদ্ধ হয়ে ধারাল বর্শা নিয়ে আক্রমণ করত। লুট করে নিতো খেতের ফসল, সহায় সম্পত্তি। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতো, হত্যা করতো নিরীহ মানুষ, নারীদের অপহরণ করে নিয়ে যেত। কি হিন্দু কি মুসলিম, নির্বিচারে গ্রাম-গঞ্জে ধ্বংসযজ্ঞ চালত। শুধু ডাকাতি নয় বর্গীরা বিভিন্ন জায়গায় সৈন্যশিবির স্থাপন করে খাজনাও আদায় করত। 

সেই সময় বাংলার রেশমি কাপড়ের আড়ংগুলো (বড় আকারের বাজার) বর্গীর আক্রমণে লোকশূন্য হয়ে অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। বাংলাজুড়ে খাদ্যশস্যের অভাব দেখা দেয়, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। বর্গীদের নির্মম অত্যাচারে বহু লোক ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র বিশেষ করে পদ্মার পূর্ব পাশের জেলাগুলোতে পালিয়ে যায়।

বর্গীদের দাপট এতটাই ছিল যে নবাব আলীবর্দী খানের শাসনামলে ৬ মে, ১৭৪২ রাজধানী মুর্শিদাবাদে পৌঁছে বড় একটি বাজার পুড়িয়ে দেয়। সেই সময়  মুর্শিদাবাদের এক সওদাগরের কাছ থেকে বর্গীরা ৩ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করেছিল। জানা যায়, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার অন্যতম প্রধান সেনাপতি মোহনলালের বোনকেউ অপহরণ করে তারা নিয়ে গিয়েছিল।

বর্গীদের অত্যাচার, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞ এমন ভয়াবহ ছিল যে, সে সময়ে মা-খালা, দাদী-নানীরা বর্গীদের হামলার ভীতিকর গল্প ও ছড়া শুনিয়ে শিশুদের ঘুম পারাতেন। যে কারণে এক সময় জনপ্রিয় ছড়া হয়ে ওঠে, “খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এল দেশে। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে? ধান ফুরল, পান ফুরল, খাজনার উপায় কী? আর ক’টা দিন সবুর কর রসুন বুনেছি।’’

ব্রিটিশ আমলে ছিল ঠগি দস্যু দল। কুখ্যাত এই ডাকাত ও খুনি দল ১৮-১৯ শতকে বাংলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। তারা সাধারণত গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করত এবং মানুষের সম্পদ লুট করত। ঠগীরা একটি সুসংগঠিত দল হিসেবে কাজ করত। কিছু হিসেব অনুযায়ী ১৭৪০ সাল থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত ঠগিরা ১০ লক্ষের বেশি মানুষ হত্যা করেছিল। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদেশে মাস্তান, টপটেরর, অস্ত্রধারী, সর্বহারা ও নকশাল বাহিনীর দৌরাত্ম্য অনেক বেড়ে যায়। ৮০ ও ৯০ এর দশকে মাস্তান, টপটেরর ও অস্ত্রধারীদের ভয়ে তটস্থ থাকত সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তখন তারা চাঁদা তুলত না, মানুষ তাদের আস্তানা বা ডেরায় গিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে আসত। ৮০ ও ৯০ এর দশকে মাস্তান ও টপটেররদের চাঁদা ছাড়া ঢাকা বা অন্য কোন শহরে বাড়ি করার জন্য কেউ একটি ইট ফেলতে পেরেছে তার নজির খুব কম আছে। ব্যবসায়ী ও ঠিকাদের চাঁদা দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এমনকি কারা টেন্ডার জমা দিবে সেটাও নির্ধারিত থাকত। তাদের ব্যবহারিত অস্ত্রের মধ্যে ছিল, চাইনিজ কুড়াল, চাকু, পিস্তল প্রভৃতি।

বর্গী, মগ ও ঠগিরা নেই, তবুও যেন শান্তি নেই। ভীতিকর অবস্থার কারণে এখনও বয়স্ক ও অভিভাবকদের কপালে ঘাম ঝরে। রোমহর্ষক নিষ্ঠুরভাবে মরতে হয়।  অনেকের মনে হয় পূর্বের একই চেহারা, একই রূপ শুধু পোশাকের পরিবর্তন। এমন পরিবেশ বিদ্যমান, চাঁদা বা পয়সা তোমাকে দিতে হবে, তা না হলে জীবনের উপর হুমকি থাকবে, স্ত্রী-সন্তানদের উপরে থাকবে বিপদের ছায়া। 

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে প্রকাশ্যে সোহাগ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে বীভৎসভাবে হত্যার ঘটনা পুরো দেশবাসীকে বিস্মিত ও অবাক করেছে। একজন ভাঙারি ব্যবসায়ী, কতইবা তার রোজগার। দুইটি শিশু সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে কোনমতে জীবন পার করছিল। এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ও ছবি দেখে মানুষ বাকরুদ্ধ!

এ ধরনের ঘটনা আমাদের ক্রমবর্ধমান নিষ্ঠুর ও সহিংস সমাজ ও খারাপ রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি চিত্র মাত্র। বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ও শুদ্ধিকরণসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। ভিডিও ফুটেজে যেহেতু দেখা যাচ্ছে কারা এই আদিম নৃসংশতার সঙ্গে জড়িত এমন ক্ষেত্রে অতি দ্রুত সময়ে বা সাত দিনে বিচারকার্য  সম্পন্ন করার আইন দেশে প্রয়োজন।
বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের অভিযোগ ছিল রাজধানী ঢাকার হকারদের প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয়। (ঢাকা ট্রিবিউন, ২৪ জুন, ২০২৪)। সূত্র অনুযায়ী, দৈনিক টোল ও চাঁদা আদায়ের পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে রমজান ও ঈদের সময় এর পরিমাণ বাড়ে। রয়েছে প্রায় ১০০টি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট এবং  প্রতিটি চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য থাকে।

জুলাই বিপ্লবের সময় একটা বিষয় লক্ষণীয়, ব্যাপকহারে ছাত্র, তরুণ, চাকরিপ্রত্যাশী, শিশুকিশোর ও সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের পাশাপাশি ব্যাপকহারে মাদ্রাসা ও উচ্চ বিদ্যালয়ের  ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। তবে অতীবও দুঃখের বিষয়, বাতাসে যখনও লাশের গন্ধ ছিল, কবরের মাটি তখনও শুকায়নি। সরকার গুছিয়ে উঠতে পারেনি এমন অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে কিছু লোক চাঁদাবাজি, লুটপাট ও মাঠ-ঘাট দখলের চেষ্টা করছে। নীরবে, নিভৃতে অবৈধ আয়ের খাতগুলো দখলে নিচ্ছে এক শ্রেণীর লোক। 

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শুধু ঢাকা শহর নয়, ৫ আগস্টের পর সরকারহীন অবস্থার সময় ও পুলিশের অনুপস্থিতে ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর লোক দেশব্যাপী চাঁদা দাবি, আদায়, বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর, সম্পত্তি দখলসহ তারা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সবকিছুকে হার মানিয়েছে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে সোহাগকে মেরে ফেলার আগে প্রায় ৪০ জনের একটা দল তার উপর আক্রমণ করে। এই ৪০ জন কারা ছিল, তাদের পেশা কি ছিল? তবে একটি বিষয় স্পষ্ট- তাদের সবার একটা সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল প্রভাব বিস্তার ও আর্থিক সুবিধা পাওয়া।

১৯ জুলাই, ২০২৫ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেছেন, চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের কারণে ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। (দৈনিক ইত্তেফাক)। আমাদের দেশে রাজনীতিজীবির সংখ্যা  বা রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে জীবিকা অর্জন বা দ্রুত ধনী হতে চায় এমন লোকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারা কাজ করে জীবিকা অর্জন করতে চায় না। রাজনৈতিক দল ও তার অন্য অঙ্গ সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। গ্রাম বা মহল্লার চায়ের দোকান থেকে বড় বড় অফিস আদালত সর্বত্র তাদের আনাগোনা। গ্রাম পর্যায়ে দেখা যায় খাল-বিল, নদী-নালা, খাসজমি, খেতের ফসল, পুকুর-ঘেরের মাছ,  হাটবাজার, স্কুল-কলেজের কমিটি, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি ভাতা ও উন্নয়ন কাজে জোঁকের মত লেগে থাকে। 
শহর অঞ্চালে দোকানপাট, ফুটপথ, বাস টার্মিনাল, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন কাজ থেকে চাঁদা আদায় করে। নেতার সাইজ অনুসারে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও তদবির কার্যক্রম ছোটবড় হয়ে থাকে।   

এ সমস্ত কর্মকাণ্ড দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ও  বিশ্ব ব্যাংকের জরিপ থেকে দেখা গেছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক ব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ যেসব দেশের তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করা এশিয়ার একমাত্র দেশটি নেপাল। অথচ খরচের ক্ষেত্রে এর চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলাদেশে এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে খরচ হয় প্রতিবেশী ভারত, চীনসহ অনেক দেশের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। এমনকি ইউরোপে সড়ক নির্মাণের খরচের চেয়ে বেশি। আবার বছর না যেতেই সেসব রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়, আবার নতুন করে টেন্ডার দিতে হয়। এই বাড়তি খরচের জন্য উচ্চ মাত্রায় দুর্নীতি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া ও দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকাকে দায়ী করে বিশ্বব্যাংক। 

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, সাম্প্রতিক সময়ে এ দেশের কিছু মানুষের যেন ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’ দেখা দিয়েছে। তারা অঢেল ধনসম্পদ ও টাকা-পয়সার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। খুব দ্রুত সময়ে ধনী হওয়ার স্বপ্নে তারা বিভোর! পৃথিবীর অনেক দেশে দুর্নীতি, লুটপাট ও অপকর্ম রয়েছে। কিন্তু, আমাদের দেশ অপকর্ম-দুর্নীতি মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায়। হাজার বিঘার ওপরে ভূমি, দেশে-বিদেশে অসংখ্য ফ্ল্যাট, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট, দেশে-বিদেশের ব্যাংক ও কোম্পানিতে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রভৃতি। 

বিষয়টি এমনও নয়, রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী সবাই এই কর্মকাণ্ডে জড়িত। তবে এটা কোনো মতেই অস্বীকার করার উপায় নেই, কিছু লোক দলের ব্যানারে বা পৃষ্ঠপোষকতায় বা ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম করে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দেখা যায়, এই সমস্ত লোক দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দলের ভোট অনেক কমে যায়, অথচ দলগুলো খুব কমই শিক্ষা নেয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত সমর্থক নির্ভর, কর্মীনির্ভর নয়। ফলে সমর্থকরা এক সময় হতাশ হয়ে পড়ে।
দেশে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা যেন শক্তি বা  ক্ষমতার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।   বিভিন্ন দলের যুব, ছাত্র ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে ধরাকে সরা জ্ঞান কারতে চায়, কাউকে তোয়াক্কা করতে চায় না, আক্রমণাত্মক মনোভাবের হয়ে থাকে। যে কারণে তারা বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের নৃশংস, বর্বর,  নির্যাতন, ভয়, দমন-পীড়নের মতো ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।

বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। অনেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে চায় কেননা এতে সম্মান, অর্থ, পদোন্নতি  অনেক প্রাপ্তি থাকে। তাইতো দেখা যায়, সচিবলায়, এনবিআর, আদালত ও অন্যান্য সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজকর্ম বাদ দিয়ে মিছিল মিটিং ও রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিক কাজে ব্যস্ত থাকে। কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমত শিক্ষাদান ও গবেষণা কাজে নিয়োজিত না থেকে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সাংবাদিকরা লেখালেখি বাদ দিয়ে লেজুড়বৃত্তিক কাজে  ব্যস্ত থাকে।

প্রতিটি দলের মধ্যে সংস্কার ও শুদ্ধিকরণ অভিযান চালানো বিশেষ প্রয়োজন যাতে ভালো লোক রাজনীতিতে আসতে পারে। যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে চায় বা  যুক্ত রয়েছে, তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবের উপর নজর রাখা খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজনে দলের ভিতর থেকে সৎ লোকদের নিয়ে দলের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি এমন আইন করা ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা বিশেষ প্রয়োজন, যাতে কেউ দলের নাম করে বা পরিচয় দিয়ে অন্যের কাছ থেকে টাকা নিতে সাহস না পায়। 

নেতার মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকীতে মোড়ে মোড়ে গরু মেরে ভোজ সভার আয়োজন করা কতটা ধর্মসম্মত তা নিয়ে ধর্মতাত্ত্বিকদের মধ্যে দ্বিমত আছে। তারপর আবার অন্যদের কাছ থেকে টাকা তুলে আয়োজন, মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। মোট কথা অন্যের কাছ থেকে টাকা নেওয়া বা ফাও খাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 

লাখ লাখ টাকা খরচ করে মঞ্চ তৈরি ও যানবাহনের ব্যবস্থা করে লাখ লাখ সমাগম করার মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত, এতে দলের  ও দলের কর্মীদের উপর ব্যয়ের চাপ কম পড়বে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তব্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে।

রাজনৈতিক দল এদেশের মানুষের শত্রু নয়। রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র অচল, আর গণতন্ত্র ছাড়া বর্তমানে দেশের কথা চিন্তাই করা যায় না। আমাদের রাজনৈতিক চরিত্রে বেশ কিছু ক্ষতিকর ও নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে ঠিকই, তবে বিষয়টি এমন নয় এগুলো বদলানো  যাবে না। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার, দেশের সব শ্রেণীর মানুষকে  মূল্যায়ন করা, ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র স্বার্থের পরিবর্তে সবার জন্য মঙ্গলকর  ও  বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে প্রধান্য দেওয়া। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
 

তারা//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র দ শ পর ত গ জ বর গ দ র র জন ত র ব যবহ র ব যবস য় অপকর ম র র জন র অন য বর গ র ল ট কর র জন য গ রস ত ধরন র হওয় র ক সময় র উপর ই সময় অবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ