বনরক্ষীদের দেখে সুন্দরবনের কুকুমারী খালে বিষ ছিটিয়ে ধরা ২৫ বস্তা মাছ ফেলে পালিয়েছেন জেলেরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে মাছগুলো কয়রার বন আদালতে পৌঁছে দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার ভোরে সুন্দরবনের ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা এগুলো জব্দ করেছিলেন। ওই ২৫ বস্তায় প্রায় ৮০০ কেজি চিংড়ি এবং ৫০ কেজি অন্যান্য মাছ ছিল।

আজ বন আদালত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিষে ধরা মাছ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আদালতের পেছনে গর্ত করে মাছগুলো পুঁতে ফেলার কাজ করছিলেন বনকর্মীরা।

স্থানীয় এক জেলে বলেন, সুন্দরবনের খালে এভাবে বিষ দিয়ে মাছ ধরা নিত্যকার ঘটনা। জোয়ারের সময় পানিতে খাল ভরে উঠলে দুই প্রান্তে ভেসাল জাল দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। ওই ফাঁদের মধ্যে বিষ দিয়ে অপেক্ষা করেন জেলেরা। পরে মাছগুলো ভেসে উঠলে ধরে আনা হয়। তবে এলাকার মানুষ এখন সুন্দরবনের মাছ খায় না, অধিকাংশ ঢাকায় চলে যায়।

ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁরা অভিযান চালান। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে জেলেরা ট্রলার ফেলে গভীর বনে পালিয়ে যান।

আরও পড়ুনসুন্দরবনের গহিনে বিষে ধরা পড়ে চিংড়ি, আগুনে শুকিয়ে বানানো হয় শুঁটকি২১ জুলাই ২০২৫

বন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ ধরা, কাঁকড়া আহরণ এবং পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। কারণ, এটি মাছ ও বন্য প্রাণীর প্রজননকাল। তবে এ সময়ই বিষ প্রয়োগের ঘটনা বেশি ঘটে।

বন বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বন্ধ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৪০ বোতল বিষ, ৫২টি নৌকা ও পাঁচটি ট্রলার জব্দ হয়েছে। আটক হয়েছেন ৪৭ জন। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি বিষে ধরা মাছ।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, বোটের শব্দ পেলেই অপরাধীরা জঙ্গলে লুকিয়ে পড়েন। তাদের দমনে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, বিষ প্রয়োগে মাছের পোনা থেকে সব জলজ প্রাণী মারা যায়। এসব বিষাক্ত পানি সমুদ্রে পৌঁছে প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এতে জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বিষে ধরা মাছ খেলে কিডনি, যকৃৎ, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হয় এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন র বনরক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা