রাজশাহীর বাগমারার রনশিবাড়ি বাজারে জোড়া খুনের ঘটনায় নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গোয়ালবাড়ি গ্রামে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিন মাস ধরে গ্রামটির অধিকাংশ পুরুষ বাড়িছাড়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে গোয়ালবাড়ির মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক (৩৫) ছুরিকাঘাতে খুন হন। একই গ্রামের আমিরুল ইসলামের (২৫) বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি ঘটে পাশের বাগমারা উপজেলার রনশিবাড়ি বাজারে। এ ঘটনার পর লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়লে আমিরুল প্রাণ বাঁচাতে রনশিবাড়ি গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। খবর পেয়ে বাগমারা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত আটটার দিকে ওই বাড়ি থেকে আমিরুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এ সময় পুলিশ স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে পড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা আমিরুলকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় পুলিশ সরকারি কাজে বাধা ও আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করে। এ ছাড়া আবদুর রাজ্জাক হত্যা মামলার একমাত্র আসামি আমিরুল নিহত হওয়ায় সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়।

পুলিশ ও র‍্যাব এখন পর্যন্ত গোয়ালবাড়ি গ্রামের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, এমন নিরীহ লোকদেরও আটক করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় কিশোর, তরুণ ও পুরুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে থাকায় গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

গত মঙ্গলবার গ্রামের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানপাট বন্ধ, প্রায় জনশূন্য। ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশ বারবার গ্রামে অভিযান চালানোয় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমার ছেলে আবদুল আওয়াল (১৮) এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। দুই মাস হলো র‍্যাবের সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছেন। জামিন না পাওয়ায় এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সে অংশ নিতে পারল না। সে ওই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। ওই দিন বিকেলে আবদুর রাজ্জাককে হত্যার পর বিকেলে সে বাজারে দেখতে গিয়েছিল। লাশ দেখে তার খারাপ লাগায় কিছুক্ষণ পরই সে বাড়িতে চলে আসে। রাজ্জাকের লাশ দেখার সময় একটা ভিডিওতে আমার ছেলেকে দেখতে পাওয়া যায়। ওই ভিডিও দেখে আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু ওই দিন রাত আটটার দিকে আমিরুল গণপিটুনিতে মারা যান। তখন আমার ছেলে বাড়িতে ছিল। তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। আমার বড় ছেলেও গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

বুলজান বিবি নামের এক নারীর অভিযোগ, তাঁর ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল না, বরং আহত আমিরুলকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল, তবুও তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আবুল কালাম জানান, তিন মাস ধরে তিনি পলাতক। তাঁর খেতের ধান ও ভুট্টা ঘরে তুলতে না পারায় নষ্ট হয়ে গেছে।

স্কুলশিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, ঘটনার সময় আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ রনশিবাড়ি বাজারে ছিল। অথচ শুধু গোয়ালবাড়ি গ্রামের ওপরই বারবার পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আম র ছ ল হত য র ব গম র আম র ল আতঙ ক ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ