বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “মব কালচার মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছে। কেউ অপরাধ করলে আইনের হাতে তুলে দেবেন। একটা মব তৈরি করে উশৃংখল জনতা সংঘটিত হয়ে অপরাধীর ওপর আক্রমণ করছেন। প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বিনাবিচারে কাউকে তো অপরাধী বলা যাবে না। এটা তো আইনের বিধান।”

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজারের সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে জেলা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “যদি কোনো অপরাধ চাক্ষুষ দেখেন, তাহলে পুলিশকে খবর দেন অথবা তাকে ধরে পুলিশের হাতে দেন।  কিন্তু মব তৈরি করে তাকে বেধড়ক পিটানো, এটা তো অপরাধের মধ্যে পড়ে। ৫ আগস্টের পর মব কালচার এতো বেশি তীব্র আকার ধারণ করলো কেন? এখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কোথায়? এটা তো মানুষ আজ জানতে চায়।”

আরো পড়ুন:

হাসিনা যে কত বড় রক্তপিপাসু তা দেশের জনগণ জানে: রিজভী

‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আরো ১০ হাজার মানুষ হত্যায় প্রস্তুত ছিলেন’

তিনি আরো বলেন, “কেউ হয়তো বলে দিল একটা নীরিহ ছেলেটা চুরি করেছে, হঠাৎ উচ্ছৃঙ্খল জনতা তার ওপর আক্রমণ করে তাকে মেরেই ফেললো। এটা হচ্ছে, প্রায় জায়গায় হচ্ছে। মব কালচারের মাধ্যমে দেশে আজ স্বামী-স্ত্রীকে সন্তানসহ হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভৎস হত্যকাণ্ড ঘটছে। এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষ প্রত্যাশা করে না।”

রিজভী বলেন, “মানুষ প্রত্যাশা করে না শেখ হাসিনার সেই দুঃশাসন, সেই কালো কানুন, সেই ভয়াবহ অবস্থার। সন্তানকে তার মায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে, স্বামী কে তার স্ত্রীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে। অদৃশ্য করে দিয়েছে, গুম করেছে- এখন পর্যন্ত কোন হদিস নাই। এই সিলেটের ইলিয়াস আলী যে এমপি ছিল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল যে জাতীয় নেতা, সে আজ কোথায়, কোন অবস্থায় আছে- তার কোনো হদিস নেই। তার কোনো মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে পারবে কি পারবে না, সেটারও কিছু বলা যায় না। সে বেঁচে আছে, না মারা গেছে। আরো অনেক ছাত্র তরুণকে গুম করা হয়েছে। সেই পরিস্থিতি তো এখন তৈরি হতে পারে না। মানুষ এখন  অনেকটা শান্তি ও স্বস্তি পাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে তো স্বাভাবিক অনাচার বাড়ছে। পুরোনো অবস্থাই রয়েছে এই প্রশাসনিক ব্যবস্থা।”

রিজভী আরো বলেন, “আমরা যতই যে আইন করি না কেন, যে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবগুলো খবরের কাগজে দেখছি, কিন্তু সবকিছু করার পরে যদি ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় আসে; চেতনাধারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হোক বা ধর্মের নামধারী কোনো ফ্যাসিস্ট হোক, সে এসে সংবিধান থেকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে পারে না? হাসিনা করেনি? হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে যে সংবিধান ছিল, সেটা কি রেখেছিল?”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, “২০১৮ সালের আগে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের এক ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে রেখেছিল কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা কি দেখলাম, সকালের ভোট বিকেলের ভোট চলে গেছে আগের রাতে। দিনের ভোট রাত্রে হল। অথচ নির্বাচন কমিশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনীত একজন ব্যক্তি কমিশনে ছিল। তারা যে আইন করবেন এই আইনের মধ্যদিয়ে হয়তো উন্নততর ব্যবস্থা হবে। কিন্তু তারপরেও যদি যেসব ব্যক্তিরা মনোনীত হবে, তাদের মন যদি পরিবর্তন না হয়, কি করবেন? এরও তো একটা বিধান থাকতে হবে। সুতরাং খুব সুচিন্তিতভাবে আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সবাইকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরো বলেন, “আজ আমরা শুনি যে, সরকারের মধ্যে অনেক উপদেষ্টা রয়েছেন, তারা নাকি ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে চাচ্ছেন। তারা তাদের লোকজনদের দিয়ে এটা বলাচ্ছেন- তাদের ৩ বছর বা ৫ বছর থাকা উচিত। এগুলো বলাচ্ছেন নানাভাবে নানা কায়দায়। এটা বলে তারা গণতন্ত্রের ক্ষতি করছেন।”

তিনি বলেন, “যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলনে ছিল, তাদের সমর্থিত সরকার হচ্ছে ডক্টর ইউনুসের সরকার। সেখানে এতো দ্বিধা এত দ্বন্দ্ব কেন? কোনো কোনো উপদেষ্টার খায়েশ থাকতে পারে। কিন্তু ড.

ইউনুস সাহেব তো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মানুষ। তাকে তো জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তা না হলে আজ সচিবালয়ের ভিতরে ছাত্রলীগ স্লোগান দেয় কি করে? গোপালগঞ্জে আক্রমণ করে কি করে? নিশ্চয়ই সরকারের ভিতর থেকে বা ক্ষমতাসীন মহলের ভিতর থেকে এসবে মদদ দেওয়া হচ্ছে। কারণ অনেক বিতর্কিত লোককে উপদেষ্টা পরিষদে মধ্যে রাখা হয়েছে।  শেখ হাসিনার আমলে যাদের ভুমিকা ছিল অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।”

তিনি আরো বলেন, “ন্যায়বিচার ধ্বংস করে দিয়ে গেছে খায়রুল হক। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য ড. ইউনুস সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এতোদিন পরে একটি কাজের মতো কাজ করেছেন তারা। এই ব্যক্তি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, উচ্চ আদালত ধ্বংস করেছে, ন্যায়বিচার ধ্বংস করেছে, তত্বাবধায়ক সরকার মুছে দিয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে।”

এর দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হওয়া দরকার। তিনি গোটা দেশকে হাসিনার মতো এক রক্তপিপাসু রাক্ষসীর কাছে একেবারে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন। কারণ ৩-৪ জন সিনিয়র জাজকে ডিঙিয়ে তাকে প্রধান বিচারপতি করেছিলেন শেখ হাসিনা। তার সবার আগে গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল,” যুক্ত করেন রিজভী।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জিকে গউছ, সহ-সাংগঠনিক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জাসাসের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির টিম প্রধান সৈয়দ আশরাফুল মজিদ খোকন।

ঢাকা/আব্দুল আজিজ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র স ধ ব স কর সদস য স ক ষমত সরক র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ