জলবায়ু সংকটে নানামুখী ক্ষতির মুখে থাকা খুলনার কয়রা উপজেলায় গত পাঁচ বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর মাত্র ১৮ শতাংশ সরকারি সহায়তা পেয়েছে। এ উপজেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফলও সবার দোরগোড়ায় পৌঁছায় না।

তৃণমূল পর্যায়ের অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

কয়রার ৩ হাজার ২০০ পরিবারের ওপর পরিচালিত এ গবেষণা বলছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধ ও ১৫ শতাংশ বিধবা সরকারি সহায়তা পান। এতে বলা হয়, জলবায়ু সংকটে ঋণের ফাঁদে পড়া ও জীবিকা হারানো ৩ হাজার ২০০ পরিবারের ৭৬ শতাংশের অন্তত একজন এলাকা ছেড়েছেন। কাজের সন্ধানে তাঁরা শহরমুখী হয়েছেন।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে বৃদ্ধদের প্রায় ৯২ শতাংশের মধ্যে সচেতনতা থাকলেও ভাতা পান মাত্র ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বিধবা ভাতা সম্পর্কে জানেন ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ভাতা পান মাত্র ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ওকাপের কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন সাহরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার ৩ হাজার ২০০ দরিদ্র পরিবারের ৭৯ শতাংশ কাঁচা ঘরে (বাঁশ, টিন ও গোলপাতা) বসবাস করেন। তাঁদের অধিকাংশের স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই। পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশই কাঁচা টয়লেট (বাঁশের খুঁটি ও পলিথিন দিয়ে তৈরি টয়লেট) ব্যবহার করে।’

এ ছাড়া যাঁরা এলাকা ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছেন, তাঁরা স্থান পরিবর্তনের কারণে নানা জটিলতায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানান ওকাপের এই কর্মকর্তা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির দুর্বলতা তুলে ধরার জন্য গবেষক দলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব সংকট সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দিয়ে সমাধান করতে পারব না। কিন্তু তাই বলে কি আমরা হাল ছেড়ে দেব? না, তা-ও করব না।’

আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আমাদের যা বাজেট প্রাক্কলন করা হয়, তার ৬০ শতাংশের মতো বাস্তবায়ন করা যায়। আমরা বাজেট তৈরি আর খরচে দক্ষ নই। এখানে উপাত্তের সংকট আছে। ফলে সামাজিক কর্মসূচির প্রকৃত সুফল যথাযথ মানুষদের কাছে পৌঁছায় কি না, সেটা বলা চ্যালেঞ্জিং।’

ভারতের উদাহরণ দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ভারতে রেশনের দোকানে সবার কাছে একই দামে আটা বিক্রি করা হয় না। কারণ, আধার কার্ডের (জাতীয় পরিচয়পত্র) নম্বর দিলে সেখানে কার আয় কেমন, সেটা চলে আসে। আর সেটার ভিত্তিতে যার আয় কম, সে কম দামে আটা পায়।

ওই রকম একটা ব্যবস্থা আমাদের এখানে এখনো তৈরি হয়নি মন্তব্য করে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সিঙ্গেল রেজিস্ট্রি এমএস নামের একটা প্রকল্প হচ্ছে। আমরা সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসব।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল বাশার মো.

আমীর উদ্দিন বলেন, আসলে যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের প্রত্যেকের প্রয়োজন আলাদা। প্রয়োজন অনুযায়ী সামাজিক কর্মসূচিগুলো সাজাতে হবে।

উন্নয়ন সংস্থা হেলভেটাস সুইস ইন্টারকো–অপারেশনের প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার বলেন, ‘উন্নত দেশ আমাদের জলবায়ু সংকট সমাধানে আর টাকা দেবে না। আমাদের নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে জলবায়ু কৌশল হাতে নিতে হবে। একই সঙ্গে নগর-পরিকল্পনায় বাস্তুচ্যুত মানুষদের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।’

ওকাপের চেয়ারপারসন সাকিরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কাজী এমদাদুল হক, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আশফাকুর রহমান খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল মালেক, সুইডিশ দূতাবাসের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, ওকাপের নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র পর চ ল আম দ র উপজ ল জলব য় সরক র আবদ ল দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ