খুলনা নগরের বড় মির্জাপুর এলাকায় একটি ছাতা কোম্পানির কারখানায় আগুন লেগেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে একটি পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে কেউ হতাহত হননি।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগরের বড় মির্জাপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনে রহমান ছাতা কোম্পানির কারখানা। গতকাল রাত দেড়টার দিকে সেখানে আগুন লাগে। স্থানীয় লোকজন আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। প্রথমে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে খুলনা সদর, টুটপাড়া ও খালিশপুর স্টেশন থেকে আরও পাঁচটি ইউনিট যোগ দেয়। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আরও একটি ইউনিট যুক্ত হয়।

স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মশা মারার কয়েল অথবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় আগুন লাগার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ছাতার কারখানাটি ছিল দুটি পাঁচতলা ভবন জোড়া লাগানো একটি স্থাপনায়। এর একটি অংশের চতুর্থ তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ভবনে প্রবেশের জন্য পর্যাপ্ত পথ না থাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আশপাশের বাড়ির ছাদ ও টিনের চাল বেয়ে পানি ছিটাতে হয়েছে। বিভিন্ন গেটে তালা লাগানো থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় বেশি লেগেছে। আগুন লাগার সময় ভবনের চতুর্থ তলায় কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা নিচে নেমে যান। ভবনের আশপাশে অবস্থান করা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (খুলনা) আবু বকর জামান আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন সম্পূর্ণ নিভে হয়েছে। রাত দেড়টার দিকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আটটি ইউনিট সেখানে কাজ করেছে। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ভবনের চতুর্থ তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ ন ল গ য় আগ ন ইউন ট ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ