অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দুর্ভোগের করুণ চিত্র
Published: 26th, July 2025 GMT
বগুড়ার শেরপুরে কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে পড়াটা নিছকই একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি আমাদের অপরিকল্পিত উন্নয়নেরই চরম বাস্তবতা। এই ঘটনায় শেরপুর ও ধুনট উপজেলার অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। কৃষকদের ফসল হাটে তোলা থেকে শুরু করে রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে তঁারা এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামে প্রায় ৫০ ফুট বাঁধ পানির স্রোতে ভেসে যায়। শুধু বাঁধই নয়, এর আশপাশের গাছপালা ও দোকানঘরও বিলীন হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাঁধ সংস্কারের সময় অপরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিকের পাইপ বসানোই এই ধসের মূল কারণ। আর এই কাজ করা হয়েছে ভরা বর্ষায়, যখন বাঁধের ওপর চাপ থাকে সর্বোচ্চ। কৃষকেরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে এই কাজ করা হলে এমন বিপর্যয় ঘটত না, আর সরকারের লাখ লাখ টাকাও পানিতে যেত না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল জব্বার দাবি করেছেন যে বাঁধ সংস্কারে কোনো অনিয়ম হয়নি এবং ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু সুঘাট ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূরনবী মন্ডলের বক্তব্য তাঁর এই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘গত মার্চে কাজ শুরু হলে বর্ষায় বাঁধটি ধসে যেত না। অপরিকল্পিতভাবে কাজ করায় এই অবস্থা হয়েছে।’ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বক্তব্যে স্পষ্ট বৈপরীত্য বিদ্যমান, যা প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এমন অপরিকল্পিত কাজ এবং অর্থ অপচয়ের ঘটনা নতুন নয়। কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যদি এমন অনিয়ম হয়, তবে তার দায়ভার কে নেবে? এই ঘটনা শুধু বর্তমান দুর্ভোগই তৈরি করেনি, ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় ঠেকাতে আমাদের নীতিনির্ধারকদের আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
আমরা আশা করি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো অনিয়ম থাকলে তা দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এই ১২ গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের
খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।