সাহিত্য-সিনেমায় বর্ষা ও চা: বৃষ্টিভেজা মুহূর্তের ভালোবাসা আর বিরহের গল্প
Published: 26th, July 2025 GMT
বর্ষা এক অদ্ভুত নস্টালজিয়া। বর্ষা মানেই বাতাসে একধরনের বিষাদের গন্ধ আর জানালার পাশে বসে এক কাপ গরম চা হাতে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা। এই আবহমান অনুভূতি শুধু বাস্তব জীবনেই নয়, জায়গা করে নিয়েছে সাহিত্য আর সিনেমায়ও। বর্ষা ও চা—দুটিই যেন মানবমনকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে এমন দুটি অনুষঙ্গ, যেগুলোর ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয় ভালোবাসা, প্রেম কিংবা বেদনাভরা মুহূর্ত।
বাংলা সাহিত্যে বর্ষাবাংলা কবিতা, উপন্যাস আর গানে বর্ষা নিয়ে যে এক বিশাল উপাখ্যান রয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমে বর্ষা বরাবরই ধরা পড়েছে অনন্য এক রূপে। তাঁর গানে, গল্পে, কবিতায় বর্ষা কখনো প্রেম, কখনো বিরহ আবার কখনো নিঃসঙ্গতার নিঃশব্দ ভাষ্য হয়ে উঠেছে। মধ্যবর্তিনী, পোস্টমাস্টার, শাস্তি, সমাপ্তি কিংবা ছুটি—এই ছোটগল্পগুলোর অনেক দৃশ্যেই বর্ষা এসেছে পটভূমি হয়ে, গল্পের আবেগের ভাষা হয়ে। রবীন্দ্রনাথ বর্ষাকে নিয়ে বলেছেন—‘বসন্ত উদাসীন, গৃহত্যাগী। বর্ষা সংসারী, গৃহী। বসন্ত আমাদের মনকে চারিদিকে বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয়, বর্ষা তাহাকে এক স্থানে ঘনীভূত করিয়া রাখে।’
তাঁর ১৩৪টি বর্ষার গান গীতবিতানে অন্তর্ভুক্ত। আজও বৃষ্টির দিনে আমরা গুনগুন করে উঠি ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর–দিনে…’ বা ‘বিধু রে মেঘে ঢাকিল কেন…’।
আর আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় বর্ষা এসে কখনো হয়ে উঠেছে বিপ্লবের প্রতীক আবার কখনো প্রেম কিংবা বিষাদের উপলক্ষ। নজরুলের ‘বর্ষা বিদায়’ কবিতাটি কবিতাপ্রেমীদের জন্য বর্ষার এক অনন্য উপহারই বটে। তিনি লিখেছেন:
ওগো বাদলের পরী!
যাবে কোন্ দূরে ঘাটে বাঁধা তব কেতকী পাতার তরী!
ওগো ও ক্ষণিকায়, পুব-অভিসার ফুরাল কি আজ তব?
পহিল ভাদরে পড়িয়াছে মনে কোন্ দেশ অভিনব?
আধুনিক সাহিত্যেও এই বিষয়বস্তু জায়গা করে নিয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর উপন্যাসে, সিনেমায়, গানে বারবার তুলে এনেছেন বর্ষাকে, বৃষ্টির মোহময় মুগ্ধতাকে। হুমায়ূন আহমেদের ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়…/ যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী, কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি…’ লেখা গান বর্ষার বিষাদকে যেন আরও গাঢ় করে তোলে।
প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আমাদের এই চোখ-পোড়ানো আলোর দেশে বর্ষার আকাশ আমাদের চোখে কী যে অপূর্ব স্নিগ্ধ প্রলেপ মাখিয়ে দেয়, তা বাঙালি মাত্রেই জানে। আজকের আকাশ দেখে মনে হয়, ছায়ার রঙের কোনো পাখির পালক দিয়ে বর্ষা তাকে আগাগোড়া মুড়িয়ে দিয়েছে, তাই তার স্পর্শ আমাদের চোখের কাছে এত নরম, এত মোলায়েম।’
সিনেমায় বর্ষাবাংলা ও উপমহাদেশীয় সিনেমায় বর্ষা একটি অন্যতম ‘মুড সেটার’। সাদাকালো যুগ থেকেই এটি সিনেমাকে দিয়েছে গভীরতা। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র দুর্গা-অপুর সেই বৃষ্টিতে ভেজার মুহূর্ত যেন শৈশবের স্মৃতিতে করে তোলে আরও তরতাজা।
বৃষ্টিবাদলের নানা রূপ বাংলা সিনেমায় ধরা পড়েছে নানাভাবে। সিনেমা আর বৃষ্টির আলাপ করতে গেলে আবারও টেনে আনতেই হয় হুমায়ূন আহমেদকে। তিনি তাঁর সিনেমায় বৃষ্টি আর বর্ষাকে এক নান্দনিক রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সব সময়। তাঁর ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘আমার আছে জল’–এর মতো অনেক সিনেমায় বৃষ্টির দৃশ্যগুলো সব সময় দর্শকদের মন কেড়ে এসেছে।
জাহিদুর রহিম অঞ্জনের ‘মেঘঘমল্লা’র সিনেমাটিতে বৃষ্টির নান্দনিক ব্যবহার তো চোখে লেগে থাকে। খিজির হায়াত খানের ‘জাগো’ সিনেমাতেও বৃষ্টির নানা দৃশ্য মন ভিজিয়েছে। এমন আরও অনেক সিনেমার দৃশ্যেই বৃষ্টি আছে, বর্ষা আছে। বাঙালির এই প্রিয় ঋতুটিকে এভাবেই সিনেমায় বারবার চিত্রায়িত করে গেছেন পরিচালকেরা।
বাংলার সৃষ্টিশীল কবি, সাহিত্যিক আর পরিচালকদের এই অবদান যেন অমর। বর্ষাযাপনে এগুলো আমাদের যেন একান্ত নিজের সঙ্গী। তবে সাহিত্য হোক আর সিনেমা—অবসরে এসব আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে যখন সঙ্গে থাকে এক কাপ ইস্পাহানি মির্জাপুর চা। বৃষ্টির দিনে চা খেতে খেতে সিনেমা দেখতে বা কবিতায় বুঁদ হয়ে থাকতে অথবা প্রিয় শিল্পীর গান শুনতে কার না ভালো লাগে!
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর ষ র য় বর ষ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি
২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।
তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।
আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।
কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন