টাঙ্গাইল রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় এক তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে শনিবার রাতে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন।

ওই তিন আসামি হলেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ব্রাহ্মণকুশিয়া গ্রামের দুলাল চন্দ্র দাস (২৮), সজীব খান (১৯) ও রুপু মিয়া (২৭)। শনিবার সকালে টাঙ্গাইল সদর থানা–পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায়। ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী চট্টগ্রামে এক বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন থেকে শুক্রবার রাতে ট্রেনে উঠেছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, ভুলে তিনি দিনাজপুরগামী ট্রেনে উঠেছেন। তাই টাঙ্গাইল স্টেশনে নেমে পড়েন। সেখানে রাত একটার দিকে তিন বখাটের খপ্পরে পড়েন তিনি। ঢাকাগামী বাসে তুলে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন ওই তিনজন।

শনিবার বিকেলে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। এতে গ্রেপ্তার তিনজনকে আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ভিক্টর ব্যানার্জী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় গ্রেপ্তার তিনজনেই ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। সন্ধ্যায় তাঁদের টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। তিনি জানান, ধর্ষণের শিকার তরুণীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হবে।

টাঙ্গাইলের আদালত পুলিশের পরিদর্শক লুৎফর রহমান শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে জানান, আসামি দুলাল চন্দ্র দাসের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজউদ্দিন ফরাজী। আর সজীব খান ও রুপু মিয়ার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রোমেলিয়া সিরাজাম। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানবীর আহম্মদ বলেন, চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ওই তরুণী ট্রেনে ওঠেন। তারপর ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর জেগে এক যাত্রীর কাছে কোন জায়গা পর্যন্ত এসেছেন, জানতে চান। তখন ওই যাত্রী জানান, টাঙ্গাইলের কাছাকাছি এসেছেন। পরে তরুণী বুঝতে পারেন, তিনি ভুলে দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছেন। রাত ১২টার পর ট্রেনটি টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছালে তিনি নেমে পড়েন। গভীর রাতে সেখানে প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষার সময় তিন ব্যক্তি স্টেশনে আসেন। তাঁরা ওই তরুণীকে ঢাকাগামী বাসে উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে পাশের একটি নির্জন বাগানে নিয়ে যান। সেখানে দুলাল তাঁকে ধর্ষণ করেন। দুলাল চলে যাওয়ার পর সজীব ও রুপু মিয়া স্টেশনের পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

আরও পড়ুনভুল ট্রেনে টাঙ্গাইলে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণী, গ্রেপ্তার ৩৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে শ্যালিকাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দুলাভাইসহ চারজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ফরিদপুরে শ্যালিকাকে (২৫) দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় দুলাভাইসহ চারজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শামীমা পারভীন এ আদেশ দেন।

ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দুটি ধারায় সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। হত্যার ঘটনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন সদরপুর উপজেলার জাহাঙ্গীর ব্যাপারী (৩৮), কামরুল মৃধা (৩৮), আলী ব্যাপারী (৪৩) ও বক্কার ব্যাপারী (৩৮)। হত্যার দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডসহ তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অপর দিকে ধর্ষণের দায়ে ওই চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত ব৵ক্তিরা দুই সাজা একসঙ্গে ভোগ করতে পারলেও উভয় দণ্ডের আর্থিক জরিমানা তাঁদের দিতে হবে।

এ মামলার আরও দুই আসামি মমতাজ বেগম (৬৩) ও আলী ব্যাপারীর বাবা আবুল কালাম ব্যাপারীকে (৬৮) মামলার আলামত নষ্ট করার দায়ে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় জাহাঙ্গীর ব্যাপারী ছাড়া আদালতে সব আসামি হাজির ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রাত একটার দিকে জাহাঙ্গীর ব্যাপারী দলবল নিয়ে শ্যালিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁর বোন এসেছেন জানিয়ে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকে আসামিরা ওই নারীকে ধর্ষণ এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর মা ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর আদালতে মামলা করেন। ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দেয়।

মামলার সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া বলেন, ‘২০১২ সালে ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট থানা মামলাটি না নেওয়ায় পরবর্তী সময়ে আদালতে মামলা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে মোট সাতজন কর্মকর্তা তদন্ত করেন। দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হলেও ন্যায়বিচার পেয়ে আমরা (রাষ্ট্রপক্ষ) সন্তুষ্ট।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরে শ্যালিকাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দুলাভাইসহ চারজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড